আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেট ও আমি (অভিন্দন বাংলাদেশ দল)

!!!

সেটা ৯০-৯২ সালের দিকের কথা। বন্ধু- বান্ধব সবার উৎসাহ ফুটবলকে ঘিরে। কিন্তু মফস্বলের যে পাড়ায় আমি থাকি সেখানে জেলা দলের একাধিক খেলোয়ার থাকায় সেখানে ক্রিকেটের চর্চাটাই বেশি। তার উপরে আমাদের বাসাটা ঠিক খেলার মাঠের সাথেই। তখন ক্লাস ফোর/ ফাইভে পড়ি।

আমার সাথে ক্রিকেটের সখ্যতা তখন থেকেই। মা অফিসে চলে যেতেই গল্পের বই হাতে জালানার পাশে বসে ক্রিকেট খেলা দেখা। আর সময় পেলেই বোলিং প্রাকটিস করা। বাবা'র প্রিয় খেলা ফুটবল। আবাহনি- মোহামেডানের খেলা হলে বা বিশ্বকাপের সময় সবসময় বাবা সাথে নিয়ে খেলা দেখত, বুঝিয়ে দিত।

কিন্তু মনের টানটা কখনোই অনুভব করিনি ফুটবলের জন্য। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে যখন সবাই মাতোয়ারা তখন আমি গল্পের বইয়ে মাথা গুঁজে আছি। মা তার ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেট ভালোবাসতেন। সেটা পাকিস্তান আমলের কথা। কিন্তু কখনওই আমাদের নিয়ে তেমন খেলা দেখেন নি, অথচ আমাদের মানুষ করার পিছনে তার ভূমিকাই বেশি।

বাসা থেকে পড়ার জন্য খুব কমই বলা হত। বরংচ বেশি লেখা পড়া করাই মায়ের চোখে খারাপ ছিল। অল্প সময় মনোযোগ দিয়ে পড়, সারাদিন পড়ার বই পড়ে জ্ঞান বাড়ে না। গল্পের বই পড়, খেলাধুলা কর- সবদিকেই উৎসাহ দেয়া হত। আমাদের বাসায় আমার ৩জন কাজিন থাকত লেখাপড়া করার জন্য।

আমার থেকে বছর ১০এর বড় হবে। তাদের সময় মিললেই শুরু হত তাদের সাথে ক্রিকেট খেলা। আর তাদের যখন সময় মিলত না তখন আমার প্রাকটিস। বোলিংটা ভালো লাগত। আর ব্যাটিং তো একা একা প্রাকটিসও করা যায় না।

বোলিং করে ক্লান্ত হয়ে গেলে গল্পের বই আর খেলা দেখা শুরু হত। তখন ধ্যান-জ্ঞান ছিল বল কিভাবে করতে হবে- অফ স্টাম্পের উপরে, গুড লেংথে নাকি ফুল লেংথে, ব্যাটসম্যানের মন বুঝে নাকি ঝুলিয়ে দেব এই সব। তার উপর ব্রায়ান লারা (আমার প্রিয় খেলোয়ার) কত রান করল,কার্টলি এ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালসের(এই দুজনকেও অনেক ভাল লাগত) কত উইকেট হল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রিয় দল) জিতল কিনা, শচীন কেমন খেলল- এ সবের খোঁজ। কে কবে কোথায় কোন রেকর্ড করেছে সব মুখস্ত ছিল। নিজে খেলা ছেড়ে দিতে হল ক্লাস এইটের মাঝামাঝি- বাসা বদল হল, নিজের বাসার কম্পাউন্ডে খেলার উপায় নেই, কাজিনরাও আর আমাদের সাথে থাকে না কারন লেখাপড়ার পাট চুকে গেছে তাদের।

কিন্তু আমার ক্রিকেট প্রেম অক্ষুন্ন থাকলো কেবল টিভি'র বদৌলতে। এরপর বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গেল। তখন এইচ.এস.সি পরিক্ষা চলে। বিশ্বকাপ দেখলাম না। পড়ার জন্য না।

বাংলাদেশ তো ভাল কিছু করতে পারবে না; কিন্তু অন্য কোন দল করব না; ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ও না। যার সাথেই যার খেলা থাক তাতে আমার কি? পাকিস্তানে বিপক্ষে খেলার পরদিন ম্যাথ সেকেন্ড পার্ট (শেষ পরীক্ষা) পরীক্ষা। কিসের লেখাপড়া; সব বাদ দিয়ে খেলা দেখলাম। জিতবার তো শুরু আমাদের। এরপর থেকে ক্রিকেটের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকল।

অন্য কারো স্কোর জেনে কি হবে? বাংলাদেশ আজ ভাল খেলে কাল খারাপ। খেলা দেখি কিন্তু তারপরও ...। গতকাল রাতে সমরেশ মজুমদারের "মনের মত মন" বইটা পড়ছিলাম। ক্রিকেটকে আবার সেই ৯০-৯২ সালের মত ফিল করছিলাম। সেই বোলিংটাকে।

তখনই ভেবেছিলাম এই অনুভুতি নিয়ে লিখব। সকালে খেলা দেখছিলাম না(কানাডাতে সকাল)। স্কোর দেখছি মাঝে মাঝে। আশা করছি না। কারন ইংল্যান্ডের সাথে জিততে জিততে হেরে যাবার রেকর্ড তো আমাদের কম না।

দেশে কথা বলছিলাম আপু'র সাথে। ডেস্কটপে খেলা ছাড়লাম। আবার জিততে জিততে হারব? ৪৯ ওভারে আবার মাশরাফি ৪এর পর ৪ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলের জন্য খারাপ লাগছে। হেরে যাব? খারাপ লাগছে।

তারপরও আমি মাশরাফি'র দিকে তাকাতে পারছিলাম না; মনে হচ্ছিল ওর তো আমার চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে। আবার ভাবছি প্রেশারে ভাল বল কর না তাহলে কেন এ সময়ে বল করতে আস? এরই মাঝে কট এন্ড বোল্ড। তারপরও যে খুব বেশি আশাবাদি ছিলাম তা না। নেটে একটু স্লো আসে। আপু আমার চেয়ে একটা বল আগে দেখতে পায়।

আপু চিৎকার করে উঠল- জিতে গেছি। আমিও চিৎকার করছি। অবশেষে ইংল্যান্ডকেও.... বাংলাদেশ দলকে অভিন্দন। আমায় এই বিদেশ বিভুঁয়ে বসে এমন ভালো লাগা দেবার জন্য ধন্যবাদ তাদের। আগেই লিখেছি লেখাটা লেখার ইচ্ছে গতকাল থেকে।

কিন্তু শেষের প্যারাগ্রাফটা লিখতে পারব তা কি কাল রাতে ভেবেছিলাম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.