আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার অন্যতম সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। বালি স্বেচ্ছায় ভারতে তার ভাইয়ের কাছে গেছেন বলে তিনি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বীকার করেছেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী থাকলেও পরবর্তীতে তিনি পক্ষ পরিবর্তন করে সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসেন গত বছরের ৫ নবেম্বর। ওইদিন সুখরঞ্জন বালি ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান।
তখন সাঈদীর পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে তুলে নিয়ে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি বিবিসির অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। গত রাতে বিবিসির খবরে বলা হয়, অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার দায়ে উত্তর চব্বিশ পরগনার স্বরূপনগর এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২৩ ডিসেম্বর রাতে তাঁকে আটক করে বিএসএফ। আটকের পর তিনি স্বীকার করেন তিনি নিজে ভারতে তাঁর ভাইয়ের কাছে যান।
বিবিসির খবরে আরও বলা হয়, কোর্টের নথি থেকে আরও জানা গেছে, বিএসএফ ওই ব্যক্তিকে স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেয়।
তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নম্বর ৭১৩, তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১২। অবৈধভাবে ভারতের সীমানা অতিক্রম করার অভিযোগে পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর সুখরঞ্জন বালিকে আদালতে পেশ করা হয় । বিদেশী আইনের ১৪ এ এবং ১৪ সি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। বসিরহাটের দ্বিতীয় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট ৩ এপ্রিল সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেন মাঝের সময়টা তিনি জেল হেফাজতেই ছিলেন।
সুখরঞ্জন বালি গত বছরের ৫ নবেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান।
কিন্তু কলকাতা থেকে বিবিসির অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, সুখরঞ্জন বালা নামে এক ব্যক্তি কলকাতার দমদম কারাগারে বন্দী রয়েছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।
বাংলাদেশের ‘নিখোঁজ’ সুখরঞ্জন বালি এবং দমদম কারাগারের এই সুখরঞ্জন বালা একই ব্যক্তি বলেই ভারতের কারা কর্তৃপক্ষ, আদালতের নথিপত্র এবং আরও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অপহরণ রহস্য ॥
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সুখরঞ্জন বালি শুরুতে ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষের সাক্ষী। কিন্তু পরে তিনি পক্ষ পরিবর্তন করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হতে রাজি হন বলে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা জানান। গত বছরের ৫ নবেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সুখরঞ্জন বালি নিখোঁজ হন।
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
যেভাবে দমদম কারাগারে ॥
বিবিসির সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানান, অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার দায়ে উত্তর চব্বিশ পরগনার স্বরূপনগর এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২৩ ডিসেম্বর রাতে এক বাংলাদেশীকে আটক করে বিএসএফ।
বসিরহাট আদালতের নথি ঘেঁটে সেখানকার আইনজীবী মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন যে ওই ব্যক্তির নাম সুখরঞ্জন বালা, পিতার নাম প্রয়াত ললিতরঞ্জন বালা, গ্রাম পাড়ারহাটি, থানা গঙ্গারামপুর, জেলা পিরোজপুর, বাংলাদেশ।
কারারক্ষীর সাজা ॥
এদিকে ঢাকার নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয় যে, সুখরঞ্জন বালি ভারতের কারাগার থেকে তাদের কাছে একটি লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
এই বিবৃতিতে তিনি তাঁকে অপহরণের কথিত ঘটনা এবং কিভাবে তাকে ভারতে ঠেলে দেয়া হয় তার বর্ণনা দিয়েছেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কারা বিভাগের প্রধান রণভীর কুমার বিবিসিকে জানিয়েছেন, জেলে থাকা কোন বাংলাদেশী বন্দীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর বিবৃতি নেয়া এবং সেই বিবৃতি কোন বিদেশী কাগজের হাতে পৌঁছিয়ে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। তাঁর কোন আত্মীয়ও যদি আসেন, তাহলে সেই সাক্ষাত প্রার্থীর পাসপোর্ট ভিসা পরীক্ষা করে নেয়া হয়।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা সূত্রে বিবিসির অমিতাভ ভট্টশালী জানতে পেরেছেন যে দমদম জেল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই বালিকে জেরা করেছেন এবং বালি জেলের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তিনি নিজেই অর্থের লোভ দেখিয়ে এক জেলরক্ষীকে দিয়ে ওই বিবৃতি বাইরে পাঠিয়েছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে যে বালির কথামতো ওই জেলরক্ষী বিবৃতিটি নিয়ে সীমান্তে যান এবং সেখানে এক চোরাচালানকারীর হাতে সেটি তুলে দেন।
এই জেলরক্ষীকে চিহ্নিত করে কারা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। জনকণ্ঠ রিপোর্ট
এদিকে ‘নিখোঁজ’ সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি কলকাতার দমদম কারাগারে বন্দী রয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এলেও বাংলাদেশ মিশনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারত সরকার এরকম কাউকে ফেরত পাঠাতে চায় তাও আমাদের বলা হয়নি। খবর বিডিনিউজের।
সাঈদীর আইনজীবীরা অভিযোগ করে আসছেন, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনই সুখরঞ্জনকে অপহরণ করেছে।
তবে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ভারতের বসিরহাটের আদালত গত ৩ এপ্রিল সুখরঞ্জন বালাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কারাদ- দিয়ে কারাগারে পাঠান এবং সাজা শেষে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বলেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ভারতের কারাগার থেকে বালি বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ-এ একটি চিঠি পাঠান, যাতে তিনি তাকে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে অপহরণের কথিত ঘটনা এবং কীভাবে তাকে ভারতে পাঠানো হয় সেই বর্ণনা দেন।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে সুখরঞ্জনকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু কলকাতার বাংলাদেশ মিশন বলছে, বালি বা বালা কারো গ্রেপ্তার বা কারাদন্ডের বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের জানানো হয়নি।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সুখরঞ্জনের সাজার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়ার কথা। কিন্তু এ বিষয়েও কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনকে কিছু জানানো হয়নি বলে কর্মকর্তারা জানান।
ভারত সীমান্ত থেকে বহু মানুষকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়ার খবর মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে আসে, যা পরিচিতি পেয়েছে ‘পুশব্যাক’ নামে।
বিএসএফ কর্মকর্তারা বলছেন, অনুপ্রবেশকারীদের যথাযথ নিয়ম মেনে হস্তান্তর করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই তার জাতীয়তার প্রমাণ নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়।
এর মীমাংসা করে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। সে তুলনায় ওই ব্যক্তিকে সীমান্তের ‘নিরিবিলি’ জায়গা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া অনেক সহজ, যা প্রায়ই করা হয় বলেও স্বীকার করেছেন বিএসএফ সদস্যরা।
সুখরঞ্জনের ক্ষেত্রেও যদি একই ঘটনা ঘটে, তাহলে যুদ্ধাপরাধ মামলার নিখোঁজ সাক্ষীকে নিয়ে ‘রহস্য’ চলতে থাকবে আরো অনির্দিষ্ট সময়।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।