শাহজাদা সেলিম পিতার মুখের দিকে তাকালেন। নির্জন পরিবেশে শত বিপদের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি তার মহান পিতার অবিচল আস্থা ও সাহসী মুখচ্ছবি দেখে নিজের মনে কেমন জানি এক ধরনের শক্তি খুঁজে পেলেন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তিনি তাকিয়ে রইলেন মহান পিতার দিকে। আর সম্রাট বলতে শুরু করলেন সেই কাহিনী, যা কিনা মোগল খান্দানে বংশানুক্রমে আলোচিত হয়ে আসছে বহুবার, বহু যুগে এবং বহু দেশের বহু স্থানে-
সেলিম তুমি কি জান যে, আমাদের পূর্ব-পুরুষ মহান খান এ খানান চেঙ্গিস খান কি প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ একটি সাম্রাজ্যের পত্তন করেছিলেন। তার নামের অর্থই ছিল সমগ্র পৃথিবীর শাসক।
তার নাতি মঙ্গু খানের শাসনামলে এই সাম্রাজ্য একদিকে কৃষ্ণসাগর অন্যদিকে পীতসাগর ও চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অন্যদিকে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে আমুর উপত্যকা থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত। কোনো সম্রাট এই পৃথিবী সৃষ্টির পর এত বড় ভূখণ্ড একসঙ্গে জয় এবং শাসন করতে পারেননি আজ পর্যন্ত, কেবল তিনি ছাড়া। ১১৬২ সালের শরৎকালে অনন নদীর তীরে একটি পাহাড়ের সারি ছিল বুরখান খালদুন নামে। ঠিক সে জায়গায় জন্ম নিয়েছিলেন আমার মহান পূর্ব পুরুষ চেঙ্গিস খান।
স্থানটি ছিল মঙ্গোলিয়ার উত্তর প্রান্ত। কিয়াছ উপজাতির গোত্রপ্রধান ইসুগেই এবং তার স্ত্রী ওলেনের তৃতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। জন্মের সময় তার মুষ্টির মধ্যে একটুকরো জমাটবাঁধা রক্তপিণ্ড থাকার খবরে গোত্রের সবাই ধরে নেয় এই শিশু নিশ্চয়ই বড় কিছু হবে।
তিনি নিশ্চয়ই অনেক অনেক বড় হয়েছিলেন- তবে শুরুটা ছিল বড়ই কষ্টের এবং একই সঙ্গে হৃদয়বিদারক। জন্মের পর তার নাম দেওয়া হয় তিমুজিন।
আর চেঙ্গিস খান ছিল তার উপাধি। তার তিমুজিন নামকরণেও রয়েছে চমৎকার একটি ইতিহাস। জন্মের কয়েক দিন আগে তার পিতা দলবল নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন প্রবল প্রতিপক্ষ তাতারদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে তিনি জয়ী হয়েছিলেন এবং তাতার গোত্রের প্রধান তিমুজিনকে হত্যা করেছিলেন। বিজয়ের আনন্দ নিয়ে ঘরে ফেরার পর নবজাতককে দেখে তিনি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পরাজিত শত্রুর নামেই নবজাতকের নাম রাখলেন।
আমাদের তিমুজিনের ছিল তিনটি ভাই- হাছার, হাছিউন ও টিমুজ। এ ছাড়া তিমুলিন নামের এক অপরূপ সুন্দরী বোনও ছিল। বেহতার ও বেলগুতিই নামের অন্য দুটি ভাই ছিল, মর্যাদার দিক থেকে যাদের অর্ধেক ভাই মনে করা হতো। সম্ভবত তারা তাদের পিতার কোনো উপপত্নীর সন্তান ছিলেন। মাত্র নয় বছর বয়সে তার পিতা মোঙ্গল রীতি অনুযায়ী তার জন্য টুকটুকে সুন্দরী বউ ঠিক করেন।
বউয়ের নাম বোরতি। পাশর্্ববর্তী ওংগিরাত গোত্রের রাজকুমারী ছিলেন তিনি। আর বয়স বড়জোর সাত/আট বছরের বেশি হবে না। তৎকালীন রীতি অনুযায়ী বউ থাকল বাপের বাড়ি। যে দিন তার বয়স ১২ বছর পূর্ণ হবে সে দিন ঘটা করে তাকে স্বামীর বাড়ি আনা হবে।
তিমুজিন নতুন বউকে দেখলেন আর শিশু অবস্থাতেই মহা প্রেমে পড়ে গেলেন। সময় পেলেই ছুটে যেতেন শ্বশুরবাড়ি। স্ত্রীর সঙ্গে শিশুতোষ খেলা খেলে আবার বাড়িতে ফিরে আসতেন। এভাবেই খুব হাসি-তামাশা আর আনন্দ-ফুর্তির মধ্যে তার দিন কাটছিল। একদিন শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে খেলা নিয়ে ঘটল অদ্ভুত এক ঘটনা।
তারা প্রায় 'কুনু কুনু কুসু কুসু' খেলতেন। এ ছিল মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে প্রচলিত এক ধরনের পুতুল খেলা। তিমুজিনের ছিল একটি মেয়ে পুতুল আর বোরতির ছিল ছেলে পুতুল। তারা মহা ধুমধামে পুতুলের বিয়ে দিত এবং হাসি-তামাশা করে সময় কাটাত। কিন্তু সে দিন বোরতি বলল আজ আর খেলব না_ আমার পুতুলের বাবা মারা গেছে বলেই সে কান্না শুরু করল।
তিমুজিন যতই বোঝায় ততই তার কান্না বাড়তে থাকে। ফলে সে অভিমান করে তার নিজের এবং স্ত্রীর পুতুল আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। তারপর রাগ করে ফিরে আসে নিজেদের কাবিলায়। তাদের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ির দূরত্ব ছিল এক দিনের পথ যদিও ঘোড়ায় চড়ে যাওয়া হতো। পায়ে হেঁটে বা গাধায় চড়ে যেতে সময় লাগত আরও বেশি।
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ফেরার পথে তিমুজিন প্রথমেই পড়ল মরুঝড়ের কবলে। তার ঘোড়াটি হারিয়ে গেল। সঙ্গী-সাথীরাও কে কোথায় গেল খোঁজ-খবর মিলল না। নিকষ-কালো অন্ধকার রাতের তৃতীয় প্রহরে যখন ঝড় থামল, তখন তিমুজিন দেখলেন তিনি কেবল একা গলা পরিমাণ বালুতে ডুবে আছেন। ধূসর মরুভূমির নির্জন এবং ঊষর প্রান্তরে নয় বছরের তিমুজিন সাহস হারালেন না।
সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। সূর্য ওঠার পর নিজের সহজাত বুদ্ধি খাটিয়ে বালুর গর্ত থেকে বের হলেন। চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন সব কিছু কেমন যেন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। মরু ঝড়ের পর পুরনো সব রাস্তার চিহ্ন মুছে যায় এবং নিত্য-নতুন বলিয়াড়ীর সৃষ্টি হয়। ফলে পথিকেরা দিকভ্রান্ত হয়ে যায়।
অনেকে এটাকে মরীচিকা বা আলেয়াও বলে থাকে। তিমুজিন কেবল সূর্য এবং বাতাসের গতি অনুসরণ করে চলতে আরম্ভ করলেন। প্রায় তিন দিন এবং তিন রাত পর তিনি তাদের গ্রামের সন্ধান পেলেন।
গ্রামে পেঁৗছেই তিমুজিন শুনতে পেলেন গগণবিদারী কান্নার আওয়াজ। তার গোত্রের ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ এবং বাচ্চা কাচ্চা সবাই কাঁদছে।
তিনি কান্নার কারণ খুঁজে পেলেন না। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো- এত কায়ক্লেশের পর প্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে তিনি যে ফিরে এলেন, এ নিয়ে একটি লোকও আগ্রহ দেখাল না। সে যে ওই কাবিলার রাজপুত্র কিংবা তার যে আপনজন কেউ আছে, তা অনুধাবন করতে পারলেন না। তিনি ভাবলেন হয়তো স্বপ্ন দেখছেন। আবার চারদিকে তাকান- গ্রাম, লোকজন সবাই তো ঠিক আছে।
কিন্তু তার পরিবারের আপনজনরা অর্থাৎ বাবা-মা-ভাই বোন সব গেল কোথায়। তিনি আপন মনে হাঁটতে হাঁটতে একদম নিজেদের ঘরগুলোর কাছে গেলেন। আশ্চর্য কোনো লোক নেই ঘরে কিংবা আঙিনায়। কয়েক ক্রোশ এলাকা নিয়ে তাদের কাবিলায় লোকসংখ্যা প্রায় এক লাখ। ঘোড়া, গাধা, গচ্ছর এবং অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।
যুদ্ধক্ষম যুবকের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এত বড় কাবিলা সমগ্র মঙ্গোলিয়ায় একটিও ছিল না। তিমুজিনের পরিবার বংশানুক্রমে শত শত বছর ধরে কাবিলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। একদিকে মরুভূমি, অন্যদিকে শ্যামল পাহাড় এবং তার পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত শান্তশিষ্ট অনন নদী (এখনো প্রবহমান। বর্তমান নাম খিরলেন নদী।
রাজধানী উলানবাটোর থেকে এটি বেশি দূরে নয়)। নদীর তীরঘেঁষে আবাদযোগ্য উর্বর ভূমি সমগ্র মঙ্গোলিয়ার বিভিন্ন উপজাতি, দুর্ধর্ষ তাতার জাতি এবং উত্তর চীনের অন্যান্য যাযাবরদের এ অঞ্চলের প্রতি লোভাতুর করে তুলেছে অনাদিকাল থেকে। তাই বার বার ওই অঞ্চলের মানুষ বহিঃশত্রুর আক্রমণের শিকার হয়েছে।
তিমুজিন হঠাৎ লক্ষ্য করলেন তিনি সম্পূর্ণ উলঙ্গ। তারপর নিজের শরীরের দিকে লক্ষ্য করার পর বুঝতে পারলেন, গত তিন দিনের ধকলে তার অবস্থা এমন হয়েছে যে, কাবিলার লোকজন চিনতে পারছে না।
সেটা না হয় বুঝলাম, আমাকে চেনা যাচ্ছে না; আমি উলঙ্গ ও রাস্তার ভিক্ষুক বালকের মতো উদভ্রান্ত- আপন মনে নিজেকে প্রশ্ন করলেন তিমুজিন। কিন্তু পুরো কাবিলার লোক কান্নাকাটি করতে করতে দৌড়াচ্ছে কেন। তাদের ঘরগুলোই বা জনশূন্য কেন। বিশাল পরিবার তাদের। মা-বাবা-ভাইবোন ও কাজের লোক এবং পাইক-পেয়াদাসহ হাজার খানেক তো হবে।
তাদের কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না। তিনি ঘরের মধ্যে ঢুকে আগে নিজেকে বস্ত্র আচ্ছাদিত করলেন এবং হাতমুখ পরিষ্কার করে নিজের চেহারা দেখার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। লোকজনের কি দোষ! তিনি তো নিজেকেই চিনতে পারছেন না। সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল পুড়ে গেছে এবং এক ধরনের বিবৃত আকার ধারণ করছে। ঘটনা পরম্পরা এবং আজকের বিশৃঙ্খলার মধ্যে তার ওয় বছরের মস্তিষ্ক কাজ করছিল না।
কিন্তু অদম্য সহজাত নেতৃত্বের গুণাবলী এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের কারণে তিনি বুঝে নিলেন, মারাত্দক কিছু একটা ঘটেছে এবং তাকেও মারাত্দক ঝামেলা পোহাতে হবে।
তিমুজিন ঘর থেকে বের হতে যাচ্ছিলেন এমন সময় তাদের বিশ্বস্ত ভৃত্য ওবুতাই সেখানে এলেন। তিমুজিনকে জড়িয়ে ধরে শুরু করলেন কান্না। দুর্ভাগ্য আর দুর্ঘটনার কাহিনী শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে গতকালই।
তাদের কাবিলার চির প্রতিদ্বন্দ্বী তাতাররা গতকাল কৌশলে তার পিতাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। এরপর খবর পাঠিয়েছে যে তারা সর্বশক্তি নিয়ে কাবিলা আক্রমণ করতে আসছে। প্রথমত কাবিলা প্রধানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে সমগ্র উপত্যকা। অন্যদিকে তাতারদের আক্রমণের খবরে সবাই এত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে যে, পালানো ছাড়া অন্য কোনো বুদ্ধিই তাদের মাথায় আসছে না। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হলো, তিমুজিনের পরিবার পালানোর উদ্দেশে গৃহত্যাগ করেছে সবার আগে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস ফেলে গিয়েছিল এবং তা নেওয়ার জন্যই বিশ্বস্ত ভৃত্য ওবুতাই ফেরত এসেছে। ওবুতাইকে সঙ্গে নিয়ে তিমুজিন অতি দ্রুত পরিবারের সদস্যদের কাছে পেঁৗছলেন। কাবিলার লোকদের থামালেন এবং নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হতে বললেন। নয় বছরের বালক হওয়া সত্ত্বেও তিনি সবাইকে বললেন না পালানোর জন্য। তিনি এও বললেন, তাকে যদি গোত্র প্রধান করা হয় সে ক্ষেত্রে তিনিও তার পিতার মতো তাতারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন এবং নিশ্চিত জয়লাভ করবেন।
এ কথা শুনে সব কাবিলা হাসাহাসি শুরু করল। এরপর শুরু করল মশকারা। মুরবি্বরা বালকের অকালপক্বতা ও ঔদ্ধত্য দেখে মহা বিরক্ত হলো এবং তাকে ভয়ানক শাস্তি দিতে চাইল। পরিবারের সবাই মুরবি্বদের সঙ্গে একমত হলেন; কিন্তু তার গর্ভধারিণী মা হোয়েলুন সন্তানের পক্ষে সিংহীর মতো গর্জে উঠলেন।
হোয়েলুনের প্রতিবাদের কারণে তিমুজিন কোনো শাস্তি পেলেন না বটে।
কিন্তু মাও ছেলেকে কাবিলা থেকে বহিষ্কার করা হলো। ফলে অনন নদীর তীরবর্তী এবং বুরুখান খালদুন পাহাড়ের পাদদেশের উর্বরভূমি দিলুন বুলদগ নামক স্থানে তিমুজিন, তার মা হোয়েলুন এবং আরও কয়েকজনকে নির্বাসনে রেখে কাবিলার লোকজন চলে গেল অজানার উদ্দেশে। সেটি ছিল সত্যিকার অর্থেই এক কঠিন পরীক্ষা এবং জঘন্যতম এক কষ্টের দিন। বালক তিমুজিন কয়েকবার ভাবলেন শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার মা প্রবলভাবে আপত্তি জানালেন।
তিমুজিনের স্ত্রী বোরতি ছিলেন ওঙ্গিরাত কাবিলার রাজকুমারী। আর তার মা হোয়েলুনও ছিলেন রাজকুমারী, তবে অন্য আরেকটি গোত্রের, যার নাম ছিল ওলখুনাত। বড় কষ্টে তিমুজিন দিন কাটাতে লাগলেন তার পরিবার-পরিজন নিয়ে। বুনো ফল এবং কালে ভদ্রে কিছু বুনো জন্তু-জানোয়ার শিকার হিসেবে মিলত তাদের ভাগে। আর এভাবেই চলে গেল প্রায় এক বছর।
তিমুজিনের বয়স যখন ১০ বছর তখন ঘটল আরেকটি দুর্ঘটনা। যার ফলে তার জীবনের মোড় ঘুরে গেলে বিপরীত দিকে।
কথা বলতে বলতে কখন যে রাতের তৃতীয় প্রহর পার হয়ে গেছে তা মহামতি সম্রাট আকরব টেরই পেলেন না। একাগ্র চিত্তে শাহজাদা সেলিমও শুনছিলেন তার বিখ্যাত বাবার মুখে মোগল রাজবংশের অতীত ইতিহাস। শুনতে শুনতে তারও সব ক্লান্তি ও ভয় দূর হয়ে গিয়েছিল।
তিনি ভাবছিলেন নয় বছরের তিমুজিন মরুঝড়ের কবলে পড়ে যে বিপদগ্রস্ততার মধ্যে ছিলেন সে তুলনায় আজকের রাতের বিপদ বা বিপত্তি তো কোনো ঘটনাই নয়। কাফেলার অন্য সঙ্গীরা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে তখনো ভয়ে কাঁপছিল। শাহজাদা সেলিম বললেন, আলমপনা আমি আরও শুনতে চাই যতটুকু আপনি জানেন যদি না আপনার কোনো আপত্তি থাকে। সম্রাট মুচকি হেসে প্রিয়পুত্রকে বললেন, আরও কাছে এসে তার গা ঘেঁষে বসার জন্য। শাহজাদা সেলিম ঠিক ছোট্ট বালকের মতো পিতার কাছাকাছি এসে তার হাত ধরলেন।
সম্রাট তার কিশোর পুত্রকে বুকে চেপে ধরে গভীর মমতায় তার শরীরের ঘ্রাণ শুকতে লাগলেন। নির্জন বনের মধ্যে এবং চাঁদনী রাতের মায়াবী আলোয় সন্তানের শরীরের ঘ্রাণ একজন পিতার জন্য যে প্রকৃতির কত বড় উপহার হতে পারে, তা সে রাতে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পেরেছিলেন সম্রাট আকবর। তিনি প্রিয় সন্তানের শিক্ষার জন্য পুনরায় শুরু করলেন-
১০ বছর বয়সী তিমুজিন তার ভাইদের নিয়ে একদিন শিকারে গেলেন। ফেরার পথে সৎ ভাই, যে কিনা বয়সে তার চেয়ে কয়েক বছরের বড় ছিল আর নাম ছিল বেহতার- শুরু করে দিলেন মারামারি। বেহতার ছিল যেমনি বয়সে বড় তেমনি অদম্য শক্তির অধিকারী।
কিন্তু মারামারিতে কিছুতেই সে তিমুজিনকে পরাজিত করতে পারছিল না। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পেরে না ওঠার অপমানে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠল এবং এলোমেলোভাবে বর্শা দিয়ে আক্রমণ চালাল নিরস্ত্র তিমুজিনের ওপর। এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে গিয়ে তিমুজিন এক সময় কৌশলে বেহতারের বর্শা হস্তগত করে ফেললেন এবং এক আঘাতেই তাকে মেরে ফেললেন। তিমুজিনের এই বীরত্বের খবর সারা উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ল। দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মরুচারী কিশোর ও তরুণ তাকে দেখতে এলো এবং তার নেতৃত্বে বসবাস শুরু করল।
অতি অল্পদিনের মধ্যেই তিনি একটি শক্তিশালী কিশোর বাহিনী গড়ে তুললেন। এই খবর চলে গেল তার পিতা এবং তার কাবিলার চিরশত্রু তাতার গোত্রপতি তাইইচুদ এর কাছে। ১১৭৭ সালে এক ঝটিকা আক্রমণ করে তাইইচুদ তিমুজিনকে বন্দী করে ফেললেন। কিন্তু শত্রুপক্ষের একজন সৈনিকের সহায়তায় গভীর রাতে তিমুজিন সেখান থেকে পালিয়ে তার কিশোর বাহিনীর কাছে ফেরত এলেন। এতে তার আত্দবিশ্বাস ও মর্যাদা দুই-ই বাড়ল।
এরই মধ্যে ঘটে গেল আরেক হৃদয়বিদারক ঘটনা। তিমুজিনের স্ত্রী বোরতিকে মারকিত নামক এক মরুচারী বেদুইন গোত্র প্রধান অপহরণ করে নিয়ে গেল। তিমুজিনের বয়স তখন ১৬ এবং সে দিনই তারা প্রথম বাসর করতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই অপহৃত হলেন বোরতি। ... [চলবে]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।