৭১ এর চেতনা বুকে জ্বলছে অবিরত
গ্যাস সংকটের কারণে গত মার্চ মাসের শেষদিকে দেশের চারটি রাসায়নিক সার কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সময় গ্যাস সরবরাহে দারুণ বিঘ্ন ঘটতে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেমন সমস্যা হচ্ছিল, তেমনি অনেক কল-কারখানার চাকাও ঠিকভাবে ঘুরছিল না। অনেক বাড়িতে রান্নার চুলাও জ্বলছিল না। এ অবস্থায় গ্যাসের অন্যতম প্রধান ব্যবহারকারী রাসায়নিক সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়। ওই সময় বোরো ধান চাষে সারের চাহিদা তেমন ছিল না বিধায় সরকারের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়েছিল।
বলা যায়, অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি বিবেচনায় সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছিল। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। তিন মাসের বেশি সময় ধরে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় মেশিনের ক্ষতি হচ্ছে। সামনেই আমন ধানের মৌসুম এবং তা শেষ হতেই শুরু হবে বোরো মৌসুম। আর বছরজুড়েই রয়েছে নানা ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য সারের চাহিদা।
মাছ চাষেও প্রয়োজন পড়ে ইউরিয়ার। এ অবস্থায় কারখানাগুলো চালু করার তাগিদ এসেছে। সরকার কি তা উপেক্ষা করতে পারবে? সার কারখানাগুলোর দিক থেকে দাবি উঠেছে বন্ধ তালা খুলে দেওয়ার।
অন্য একটি বাস্তবতাও রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ইউরিয়া সারের মূল্য তুলনামূলক কম।
দেশে উৎপাদন বন্ধ রেখে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এ সার আমদানি করা হলে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডারে চাপ পড়বে। কিন্তু সার কারখানাগুলো চালু করতে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে সমস্যা বাড়বে। গ্যাস উৎপাদনে যে সমস্যার কারণে সরকার এ ধরনের অপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হয়েছিল তাতে গত তিন মাসে মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটেছে, তেমনটি বিশ্বাস করা যায় না। অর্থাৎ গ্যাসের উৎপাদন তেমন বাড়ানো যায়নি। এ অবস্থায় সার কারখানা চালুর পদক্ষেপ গ্রহণে ঝুঁকি থেকে যাবে।
কিন্তু যে কারখানাগুলোকে আমাদের কৃষি খাতে সার জোগানোর ভিত ধরা হয়, সেগুলো অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রাখাইবা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে? সরকার কি সবদিক সামলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে? একটি মত রয়েছে যে, সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে আমদানি বাড়ানো। এর পক্ষে জোরালো যুক্তি হচ্ছে, দেশের কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়ার কারণে সরকারকে সারের জন্য প্রচুর ভর্তুকি প্রদান করতে হয়। আর এ ভর্তুকির যে পরিমাণ তার কাছাকাছি অর্থ ব্যয় করেই সরকার বিশ্ববাজার থেকে চাহিদা অনুযায়ী সার আমদানি করতে পারে। এ চুলচেরা হিসাবে নিশ্চয়ই কেউ কেউ যাবেন এবং তা সঠিক হলে আমাদের কারখানা চালু রাখার যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারে। কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করার নীতি কোনো দেশেই প্রশংসিত হবে না।
এ অঙ্ক তাই বড়ই জটিল। আর এ জটিলতার মুখে যে শিক্ষা সবার গ্রহণ করা উচিত সেটা হচ্ছে : দেশে কারখানা অবশ্যই চাই; কিন্তু তা স্থাপন ও চালু রাখার জন্য যদি অস্বাভাবিক ব্যয় পড়ে তখন বিকল্প ভাবনার প্রশ্ন আসবেই। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে দেশে আরও তিনটি সার কারখানা স্থাপনের কথা জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্যাসের প্রাপ্যতা এবং কারখানা স্থাপনের আনুষঙ্গিক ব্যয়ের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।