আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিসেস মিলি এবং প্রতিভার সাদামাটা কাহিনী

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
মেয়েটির নাম প্রতিভা, কেউ ডাকে পত্তি। বয়স এগারো বারো কিন্তু দেখায় পনেরোর চেয়ে বেশি - চোখ কোটরে বসে যাচ্ছে, চুল কমে যাচ্ছে প্রতিভার অনেক গুণ সে ঘর মুছে দিতে পারে, বড় গ্যাসের চুলায় রান্না করতে পারে । দোকানে থেকে সওদাপাতি আনতে পারে, আনতে পরে লন্ড্রী থেকে কাপড় , বাড়ির গিন্নি হিন্দী ধারাবাহিক দেখে ক্লান্ত হয়ে সোফায় এলিয়ে পড়লে তার মাথা মালিশ করে দিতে পারে, যখন বাড়ির পাঁচ বছরের বাচ্চাটা অংক করতে বসে তার কাজ পা টিপে মেধার বিকাশে সাহায্য করা পরক্ষণে কর্তা যদি চা'যের তেষ্টা পেয়েছে বলে হাঁক দেয় তবে দৌড়ে গরম চা নিয়ে হাজির হওয়া আলাদিনের দৈত্যের মত প্রতিভার জন্ম কুড়িগ্রামে । মঙ্গায় যখন বাবা গরু বিক্রি করে দিয়েছিল, প্রতিভাকে কম দামে এনেছিল মিসেস মিলি, নগদ দাম দিতে হয় নি, একজন শিশুকে দুর্মুল্যের দিনে তিন বেলা খাবার কি চাট্টিখানি কথা ? তেল সাবান, দুটো ফুটপাতের রঙিন জামা আর রান্নাঘরের ভিতরে একটা মাদুর প্রতিভার আরামে ঘুমানোর জন্য । পত্তির মা রাজি হলেও মুর্খ বাপ রাজি ছিল না ।

কড়া রোদে সানগ্লাস নামিয়ে মিসেস মিলি বলেছিল - আরে নিজের কপাল বুঝেন না, আমাদের বাসায় থেকে ও পড়াশোনা শিখবে, স্কুলে যাবে । ওর ভবিষ্যত, বিয়ে সাদী সব আমাদের হাতে । বাপ সেদিন খুব চোখ মুছে ছিল । বাপের চোখে ছানি, তবু দেখতে পাচ্ছিল ছোট ছোট পা গুলো বিন্দুতে মিলিয়ে যাচ্ছে । মেয়েটা এখন কর্ম জীবনের দ্বিতীয় পর্বে ।

ঘটনা বললে পরিস্কার হবে -গত সপ্তাহে সাতিলের ষষ্ঠ জন্মদিন, তার আগে রাত জেগে পেঁয়াজ-রসুন কেটেছে, মসলার পিষেছে, গোশত ঠিকঠাক করতে করতে রাত চার বেজেছে । খানাপিনা দারুণ হয়েছে । বন্ধুরা বলেছে মিলি ভাবীর বিরিয়ানী অসাধারণ, হাতে যেন জাদু আছে । আত্মীয়েরা, বন্ধুরা প্রচুর খেয়েছে, যাবার সময় খাবার প্যাকেট করে নিয়ে গেছে, অথচ প্রতিভার পাতে পড়েছিল নিতান্তই হাড় জোড়া দেয়া গোশত, আর কিছু ভাত । ভোর না হতে ধারা পরেছে ফ্রীজে চুরি হয়েছে ।

নাশতার জন্য রাখা রসমালাই চুরি করেছে কাজের মেয়ে। প্রতিভা ঘুমাচ্ছে, খুব ক্লান্ত দেহে, মিষ্টির দাগ মুখ থেকে মুছতেও পারে নি । মিসেস মিলি গড় গড় করে কাঁপতে কাঁপতে চুন্নিটাকে হিচড়ে তুলে হোমটাস্কের রুলার দিয়েই আঘাত করতে লাগলেন । শম্পা, আর তিন্নি বলছিল, আপা এরা ছোটলোক, যতই পেট ঠেসে খাওয়ান এগুলা নিমক হারাম, চোরেরগুষ্ঠী । এদের উপকার করে লাভ নাই ।

প্রতিভাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে । পিঠে মালিশের জন্য বিদেশী একটা ওয়েনমেন্ট দিয়েছে । দামী মলম । সেরে যাবে জলদি । মিসেস মিলি একটু বেশীই করে ফেলছেন ।

সৌদিতে চুরির শাস্তি হাত কাটা । তিনিতো শুধু মেরেছেন । তখনো এই ছোট মেয়েটা ভাবতে পারে নি, দিনতিনেক পর বড় সাহেবের মানিব্যাগে টাকা হারানো গেলে তাকে অভিযুক্ত করা হবে । শাসানো হবে । তারপর রড দিয়ে পেটানো হবে জনসমক্ষে ।

রক্তে তার ছোট পিঠটাতে দাগ বসে যাবে । টাকা চুরি ভয়ংকর কথা! কুড়িগ্রামে ফেরত দেবার জন্য মানুষ এসেছে । তার এক চাচা । ট্রেন প্লাটফর্মে হুইসেল দিচ্ছে । একটা আধপুরানো জামা পরে প্রতিভা বসে আছে ।

হাটতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তার ভাল লাগছে বুড়ো বাপকে দেখতে পাবে অনেক বছর পর । বাপ তার মাথায় হাত রাখবে , বলবে মা, তুই থাক। মিসেস মিলি নতুন এক মেয়েকে পেয়েছেন । ভাল বংশের এবং শক্তসামর্থ । এসব কাজের মেয়েরা একটু বড় হলে তর্ক শেখে আর চুরি বিদ্যায় অভ্যস্ত হয় ।

কিছুদিন পর পর তিনি বিপথে যাওয়া প্রতিভাদের বদলে ফ্রেশ এবং অল্প বয়সের মেয়ে আনেন । বড় সাহেবের ভুলো মন, টাকা ধার দিয়েছিলেন এক কলিগকে । মনে করতে পেরেছেন । সামান্য খারাপ লাগলে তাতে কি - এরা চোরের জাত । আজ চুরি না করলেও কালকে ঠিকই চুরি করতো .. -- ঘটনা এবং তার চরিত্র গুলো কাল্পণিক তবে তেমন অপরিচিত কিছু নয়
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.