আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টাঙ্গাইলে বিএডিসি’র ব্যবস্থাপনায় চলছে কোটি কোটি টাকা লুটপাট



বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা দূরীকরণ কর্মসূচী প্রকল্পের নামে ব্যাপক লুটপাট চালাচ্ছে। লুটপাট নিয়ন্ত্রণের জন্য সবসময় তারা প্রভাবশালীদের সঙ্গী করে সমস্ত অবৈধ কর্ম জায়েয করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল জেলার ১৯ টি খাল খননে লোক দেখানো কাজের মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা হরিলুট করছে। অপরদিকে গত অর্থ বছরে মধুুপুরের বংশাই নদীকে খাল দেখিয়ে চাপড়ি এলাকার চার কিলোমিটার খননের নাম করে লাখ লাখ টাকা লুট করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও বিএডিসির কর্তৃপক্ষ। ফলে বিএডিসি গৃহিত খাল খননের প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।

কৃষি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে শুধু মাত্র তার নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রকল্প পাস করিয়ে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীদের নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও প্রকল্পের টেন্ডারে নজিরবিহীন অনিয়মের কারনে সরকারের অতিরিক্ত গচ্ছা গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। জেলার সখীপুর ও বাসাইল উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলছে। টাঙ্গাইল বিএডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে জেলা জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের ১৯ টি কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। ময়মনসিংহ বিএডিসির প্রকল্প পরিচালক মোঃ খলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত গত ২ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহবান করেন।

টাঙ্গাইল বিএডিসি অফিসে দরপত্র গ্রহনের শেষদিন ছিল ৭ অক্টোবর এবং খোলার তারিখ একই দিন বেলা ৩ টা পর্যন্ত। সুত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে জেলার জন্য ৫০ কিঃ মিঃ খাল খনন কাজ বাস্তবায়নের নির্দেশনা ছিলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের। কিন্তু দরপত্র আহবান করা হয় ৭০ কিঃ মিটারের। অর্থাৎ ২০ কিঃ মিটার অগ্রীম দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

খাল খনন কাজ লাভজনক হওয়ায় সাধারণ ঠিকাদাররা সমদরের চেয়ে শতকরা ১০ থেকে ৩০ ভাগ নিু দরে দরপত্র দাখিল করেন। টাঙ্গাইল বিএডিসি অফিসে দরপত্র খোলার পর যাচাই বাছাই না করে তা সেদিনই ময়মনসিংহ বিএডিসি অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর পর সেখানেই সমদরের চেয়ে শতকরা ১০ থেকে ৩০ভাগ পর্যন্ত উচ্চ দরে ১৯ টি খাল খননের কাজ ভাগ বাটোয়ারা করে নেন সরকার দলীয় লোকজন। এতে সরকারের অতিরিক্ত গচ্ছা গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে, বিএডিসির প্রাক্তন এক কর্মকর্তার প্রতিষ্ঠান জিতু এন্টারপ্রাইজ, বাসাইলের মেসার্স কাজী ইসমাইল, টাঙ্গাইলের লৌহজং কন্সষ্ট্রাকশন, সখীপুরের মেসার্স হক এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স আসাদ বিন আসাদ এন্টারপ্রাইজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, সখীপুর ও বাসাইলের শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও বিএডিসির কতিপয় কর্মকর্তাদের সমঝোতার ভিত্তিতে প্রকল্পের ১৯ টি কাজ বাটোয়ারা হয়েছে। সরেজমিনে, সখীপুর উপজেলার গোহালীয়া খাল, বৈরাগীপাড়া খাল, ইন্দারজানি খাল। বাসাইল উপজেলার মিরিকপুর খাল, আন্দারিপাড়া বিল, কাটা খালী খাল সহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে লোক দেখানো নাম মাত্র কাজ চলছে সেখানে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, খালের তলা ৩ মিটার পর্যন্ত খননের কথা থাকলেও সর্বোচ্চ দেড় মিটার কাটা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ কোন রকমে দায়সারা ভাবে খাল খনন করা হচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য পুরোটাই ভেস্তে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা । এদিকে দরপত্রের শর্তানুযায়ী খননের পর সে মাটি দিয়েই পাড় বাঁধানোর কথা। কিন্তু খননের মাটি দিয়ে বাসাইল উপজেলার কাবিখার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনেকে ঠিকাদারদের কাছ থেকে মাটি কিনে তাদের পুকুরÑডোবা নালা ভরাট করছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের নামে যেন হরিলুট চলছে।

এসব অনিয়মের ব্যাপারে টাঙ্গাইল বিএডিসি অফিস ঠিকাদারদের লিখিতভাবে বার বার সতর্ক করেও লাভ হচ্ছে না। প্রকল্পের নামে এ ভাবে লুটপাটের ঘটনায় স্বয়ং আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নাখোশ হয়েছেন। জেলা আওয়ামীলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আপসোসের সুরে বলেন, কি করবো ভাই! কতিপয় নেতা কর্মীর এসব কর্মকান্ডে দল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে এ অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে, কৃষি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপি শওকত মোমেন শাজাহান বলেন, এমপি হিসেবে আমি প্রকল্পের জন্য তদবির করেছি। সব কিছুই ওপেন টেন্ডারে হয়েছে।

প্রকল্পের কাজ মনিটরিং করার দায়িত্ব আমার না। তিনি বলেন, অনিয়মের কথা আমি শুনি নাই। অভিযোগ উঠলেও তা ভিত্তিহীন। বাসাইল উপজেলার বিএডিসির এসও আফম নসরুল্লাহ জানান, ইতোমধ্যে মরাগাঙ্গী ও মিরিকপুর খালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টাঙ্গাইল বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব মনির স্বীকার করেন যে, অনিয়মের কারনে মেসার্স কাজী ইসমাইল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের টেন্ডারে অনিয়ম ও নিুমানের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বিএডিসির প্রকল্প পরিচালক মোঃ খলিলুর রহমান স্বীকার করেন, বাসাইলের মরাগাঙ্গী খাল ৮% এবং সখীপুরের একটি খাল ১৩% উচ্চ দরে দেয়া হয়েছে। কারন উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশ ছিলো সমদরের চেয়ে বেশি কমদরে কাজ না দেয়ার জন্য। অপরদিকে মধুুপুর উপজেলার বংশাই নদীকে খাল দেখিয়ে বংশাই খাল খনন নামের প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা লুটেপুটে খেয়েছে বিএডিসির কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বিএডিসি বংশাই খাল খনন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পে খাল খননের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৪ লাখ টাকা।

কিন্তু কাজ না করেই বংশাই খাল খনন নামের এই প্রকল্পের পুরো টাকা হজম করার সমস্ত বন্দোবস্ত করে। এলাকার কতিপয় ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করলে বিষয়টি আটকে যায়। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাত্র দুইদিন জন বিশেক শ্রমিক কাজ করেছে। তারপরও তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর সহযোগিতায় সমস্ত বিল তোলার পায়তারা চালাতে থাকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। পরে বিএডিসি ময়মনসিংহ অফিসের কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখে বিল আটকে যায়।

তারপরও শতকরা ৪০ ভাগ টাকা উত্তোলন করে নিতে সক্ষম হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এভাবে বিএডিসির খাল উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এই অপচয় বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন বিজ্ঞমহল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.