একটা পথশিশু বড় হবে আমার আঁচল ছায়___বিধাতা ইচ্ছাপূরণের একটা ক্ষমতা আমাকে দিও । বই পড়া অনেক প্রিয় একটা কাজ রূপার । ইদানীং নতুন পালক যুক্ত হইছে এই কাজে । পুঁথি পাঠ করা । রুপা পুঁথি পাঠ করে না বলে বলা ভালো যে পড়ে ! গল্পের বই যেভাবে পড়ে সেভাবে না হোক একটু ভিন্নভাবে পড়ে যেমনি করে বাচ্চারা পড়া মুখস্থ করে ।
রুপা তেমনি পড়ে ; একটু সুর করে মুগ্ধ হয়ে !!! রুপার ধারণা তার কণ্ঠস্বর খারাপ তারপরেও নিজের পুঁথি পাঠে রুপা নিজে মুগ্ধ হয়ে চলে যায় সেই অচিন দেশে !!!
আজ পড়তেছিলো কমলা সুন্দরীর পুঁথি ! সুতার শেষ টানে কমলা সুন্দরীর কান্নায় আকুল হয়ে রুপাও কাঁদতে লাগলো !!! সে কান্নার জলে কার দুঃখ মিশে ছিলো তা আমার জানা নেই ....।
কনকনে ঠাণ্ডা ! এতো সকালে স্যার ক্লাশ দিছেন !!! স্যার যে কি না ? নামাজ পড়ে কোনমতে নাকে মুখে চা ঢাললো রুপা । দক্ষতার সাথে তৈরি হয়ে ৬ঃ৪৫ এ বাসা থেকে বের হলো ক্লাশের উদ্দেশেয । চারদিকে কুয়াশাছন্ন !!! চট করে বাসে উঠে পড়লো রুপা । বাস যত আগাচ্ছে কুয়াশা যেন তত ঘন হচ্ছে !!!! বংশী নদির পানি কুয়াশার ঘনত্ব বারিয়ে দিলো কয় এক গুণ !!!
হুট করে কুয়াশা,নদি,বাস সব ভুলে গেলো রুপা ! চলে গেলো আজ থেকে ১৩/১৪ বছর আগে এক মফঃস্বল শহরের মসজিদে আরবি শিখতে যাওয়া মেয়ের কাছে !!! জুবুথুবু হয়ে প্রতিদিন ভোরে সুর করে মসজিদে আরবি পড়তো সে ।
এত কষ্ট করে পড়তে যাওয়া যায় ? পড়ে ফেরার পথে বাসার সামনে একটা মাঠ ছিল । ঐ মাঠের মায়ায় মেয়েটি রোজ যেত । পড়া শেষ করে খালি পায়ে মাঠে ছুটে বেড়াত । শিশির আর কুয়াশার সাথে পাল্লা দিয়ে শীতকে বাঁধতে চাইতো ! সবচেয়ে ভালো লাগতো শুকনো ঘাস গুলো পায়ে লেগে থাকতো আর কোথাও দাড়িয়ে পড়লে কুয়াশা গলে গলে শিশির হয়ে পুরো মুখে মাখাতে ।
হার্ড-ব্রেক !!!! চমকে বাস্তবে চলে আসলো রুপা ।
কিছুক্ষণ পর চলে গেলো ক্লাশে । সারাদিন ক্লাশ , আড্ডা , খাওয়া দাওয়ার ফাঁকে মনে পড়তে লাগলো সেই ৭ বছরের শৈশবকে ।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রুপার মন মেজাজ চরম অস্থিরতায় ছেয়ে গেলো । যে করেই হোক ফিরতে হবে শৈশবে । কিন্তু এই ইট কাঠের শহরে তাকে কুয়াশাভেজা মাঠ কে দিবে ???
পরদিন সন্ধ্যায় নানু বাড়ির পুকুর ঘাটে বসে এসব ভাবতেছিলো রুপা !
শেষ পর্যন্ত মা আসতে দিলো ! কি রাগারাগি না করতে হইছে ওর ।
একা কে নিয়ে যাবে ? এত দূর ? যদি বিপদ হয় ? ইত্যাদি ইত্যাদি !!!? মায়ের কথা সত্যি কিন্তু গ্রামে আসতে না পারলে সত্যি রুপার মাথা খারাপ হয়ে যেত । সব সুখ তো আর কল্পনায় নেয়া যায়না !!!?
রাতে নানুকে জড়িয়ে ঘুমায় রুপা । নানুর কাছে নিজের দস্যিপনা আর তার ফলে তার মায়ের দেয়া শাশ্তি দেয়ার স্মৃতি গুলো পুনরায় ঝালাই করে নেয় !
নানু ঘুমিয়ে গেছে সেই কখন ! রুপা নিসচুপ জেগে থেকে গান শোনে শিশিরের । টিনের চালে ছন্দবদ্ধ টুপটাপ শিশিরের আছ্রে পড়া যেন বেহুলা সুন্দরীর রুপার গুঙ্গর আছ্রে পড়ছে ইন্দ্রসভায় !!!
রাত পোহালো যদিও আঁধার কাটেনি । কাছে পীঠে কোন এক কাছারি ঘর থেকে ইমামের আজানের সুর ভেসে আসলো ।
রুপা উঠে পড়লো । অজু করে নামাজ পড়লো । চুপিসারে যেন নানু উঠে না পড়ে !!! তাহলে সর্বনাশ !!!
দুয়ার খুলতে এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে দিলো রূপাকে । বাহির পানে পা বাড়িয়ে দিলো রূপা ...
সাদা শাড়ি আর সাদা শালে পরির মত না দূর থেকে কেউ দেখলে ভাবে ভূত বুঝি । যদি কেউ দেখতে পায় তো ? ভেবে আপন মনেই হেসে উঠে রূপা ।
আসলে ইন্দ্রাণীর মত লাগছে রূপাকে ! সাদা শাড়ি, কাঁধ ছাপানো এলো চুল ...................
বাহির হলো রুপা শৈশবকে নতুন করে বাহির করতে । পুকুর পাড় ঘেঁষে চলে যায় গ্রামের প্রান্তে নদির তীরে , এখানে জমাট কুয়াশা । আঁধারের ফাঁক দিয়ে অনুভব করে রূপা তার হারানো শৈশবকে । আর ফিরবে না ! আর আসে না সেই নিরমলানন্দ । আর ছুটে বেড়াতে সাধ হয়না রুপার ।
মনে হচ্ছে শিশির আর কুয়াশার এই মিলন বড্ড বেশি ঝাপিয়ে পড়ছে তার শূন্যতায় । মুহূর্তে মন খালি হয়ে গেল তার । ধির পায়ে ফিরে আসছে বয্রথ মনোরথে ।
আসেনি !!! হাহাকার করে উঠে কেউ ? আসেনি সেই বালিকা ! যে এক ছুটে পাড় হত কুয়াশাছন্ন ভেজা মাঠটা । তার জায়গায় ভর করেছে বেদনায় রিক্ত এক তরুণী যার সাথে মিল আছে কমলার ।
কমলা ! কমলা সুন্দরী । সব পেয়েও সুতর টানে চলে গিয়েছিলো পাতাল পুরীর দেশে ! রাজকুমার হারিয়ে পেয়েছিলো পাতাল কুমার। তবু কি মন ভরেছিলো কমলার ? সুখি হয়েছিলো সে পাতালপুরীর অঢেল ধনে ? না গুমরে কেঁদে মরেছিলো মাটির রাজার ছেলের সনে ???
কেন কমলার পিছু নিলো না রাজকুমার ? কেন উদ্ধার করলো না তাকে ? কেন একা একা ভালোবাসার বিসর্জনে জীবন দিল কমলা ?
উফফ !!! এত ভাবনা একসাথে কেন আসে ? সব কিছু অসহনীয় করে দিচ্ছে । রূপা আবার কাঁদে আকুল হয়ে । তার মন জুড়ে ভালবাসার ছাপ ।
কাউকে নিজের খুব কাছে দেখার আকুতি !!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।