আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিলে গেল আলেয়ার আলো...

ছোট্ট দেশ, ছোট্ট শহর, ছোট্ট আমার কুড়েঘর

অবশেষে নিভে গেল আলেয়ার আলো। মাত্র ১৮ বছরে অনেক চাওয়া-পাওয়া অপূর্ণ রেখে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যার চলে যাওয়া....। যে আলেয়া বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু এই সমাজ আলেয়ার আলোকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করল। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা......তারপর জীবন-যুদ্ধের লড়াই....তারপর মৃত্যু....! অর্থ-কষ্টের সংসারে সারা দিনই ছিল খাওয়া-পরার চিন্তা।

এর মধ্যেও ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা। ছিল ছোট্ট দুটি ভাইয়ের ভরণ-পোষণের ভাবনা। আবার বাবাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা। মায়ের অসুস্থতার পর দ্বিতীয় বিয়ে করে বাবা থাকেন অন্য সংসারে। এমন পরিস্থিতে গোটা পরিবারের দায়িত্ব পড়ে তরুণী আলেয়ার কাঁধে।

কিন্তু তাতে দমে যায়নি সে। সংসারের হাল ধরতে চাকরি নেয় একটি গার্মেন্টে। এই ছোট্ট বয়সে নিজেকেসহ চারটি মুখের অন্ন জোগাতে অদম্য সাহসের সঙ্গেই পথে নামে কিশোরী আলেয়া। কিন্তু হায়, তার অপরাধ সে দেখতে সুন্দরী। আর জন্মগ্রহণ করেছে গরিবের সংসারে।

গার্মেন্টে যাওয়ার পথে তার ওপর চোখ পড়ে বখাটে খোকনের। এরপর নিয়মিত তাকে উত্ত্যক্ত করত খোকন ও তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে আলেয়ার পরিবারের কাছে বিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলেয়ার পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, খোকন বিবাহিত। এমনকি তার এক সন্তানও রয়েছে।

এছাড়া খোকনের নেই কোনো বৈধ অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থাও। মাদক বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত সে। এসব তথ্য জানার পর আলেয়ার পরিবার খোকনকে সাফ জানিয়ে দেয়, আলেয়ার সঙ্গে তার বিয়ে সম্ভব নয়। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গত বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের ৩৮ নম্বর বাসা থেকে ১১ নম্বর বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেই খোকন তার তিন সহযোগী বিল্লাল, রনি ও বাবুকে নিয়ে আলেয়ার শরীরে পেট্রোল ঢেলে দেয়। ওই দিন আলেয়া তার খালা রাজিয়া খাতুনকে নিয়ে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়েছিল।

অন্ধকার গলিতে হঠাৎ তাদের রিকশা আগলে দাঁড়ায় আলেয়ার বখাটে প্রেমিক খোকন। এ সময় বাসার পাশে ডেকে নিয়ে খোকন ও তার তিন সহযোগী মিলে আলেয়ার গায়ে পেট্রোল ঢেলে দেয়। ওই রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টানা পাঁচদিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল আলেয়া। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিল সে।

মৃত্যুর কাছে হার মেনে গতকাল সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে চিরকালের জন্য নিভে গেল আলেয়ার আলো। তার অকাল মৃত্যুতে গতকাল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরপরই আইসিইউতে বিলাপ করছিলেন তার মা হাছনা বেগম ও বাবা আবদুর রশিদ। তারা বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, 'ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না। ' অসুস্থ শরীর নিয়ে মেয়েকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ায় গতকাল সকালেও মাকে বকাবকি করে আলেয়া।

এসব কথা বলে ক্যান্সার আক্রান্ত মা বলছেন, 'আমার মৃত্যুর আগেই ওর লাশ দেখে যেতে হলো। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.