আমার স্বপ্ন, আমার ভালবাসা... আমার নিঃস্বাস, আমার বিশ্বাস... আমার ঠিকানা..
পাথরের শহরের যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে চলুন ঘুরে আসি আজ ইছামতি নদীর তীরে অবস্হিত, নবাবগঞ্জ জমিদারবাড়ি থেকে। নবাবগঞ্জ জমিদারবাড়ি খ্যাত জজবাড়ি, নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপায় অবস্হিত।
যাওয়ার উপায়ঃ
ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জ জমিদারবাড়িতে আপনি অনেক ভাবেই যেতে পারেন, সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে আপনার সাথে যদি নিজের গাড়ি থাকে। ফ্যামেলি নিয়ে অথবা সব বন্ধুরা মিলে একজোট হয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন দারুন একটা দিন।
রেন্ট-এ-কার ও যেতে পারেন।
ঢাকার ফ্রামগেট থেকে ইয়োলোক্যাব নিয়ে গেলে আপনার যাওয়া আসার খরচ পরবে ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে (গ্যাস, ব্রিজ টোল সহ সবকিছু)। তবে ক্যাব নিলে আগে থেকে সব কিছু মিটিয়ে নিয়ে যাবেন। যাওয়া আসার পথে অনেক গুলো যায়গায় প্রায় ২০০ টাকার মতন টোল দিতে হয়।
সিটিং সার্ভিসেও যেতে পারেন। পল্টনের গোলাপশাহ মাজারের কাছে নিয়মিত বান্দুরাগামী বাস সার্ভিস আছে।
যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টার মতন।
কো-অর্ডিনেট
নবাবগঞ্জ জমিদার বাড়ী (যা জজবাড়ি হিসেবে খ্যাত) কো-অর্ডিনেট হচ্ছেঃ 23°39'28.62"N 90°08'31.59"E, এখন আপনি ইচ্ছে করলেই গুগুল ম্যাপ দিয়ে এই কো-অর্ডিনেট ধরে ভার্চুয়াল ট্যুর দিয়ে আসতে পারেন।
ঢাকা থেকে দিনে যেয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়, তবে সকাল ১০ টার ভিতর যাত্রা শুরু করাটা হবে যথার্থ। কারন তাতে আপনার হাতে থাকবে বেশ অনেক কিছু সময়, ধীরে সুস্হে দেখতে পারবেন প্রাচীন নির্দশনগুলো।
নবাবগঞ্জ যেতে হয় ২য় বুড়ীগঙ্গা ব্রিজ দিয়ে কেরানীগঞ্জ হয়ে।
চার পাশে চিরায়িত সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে আপনি চলে আসবেন ২০০ বছরের ইতিহাস সম্বলিত নবাবগঞ্জের জমিদার ব্রজেন সাহার জমিদার বাড়িতে, যা এখন জজবাড়ি নামে খ্যাত।
১. জজবাড়ি ২. নতুন বাড়ি ৩. কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি ৪. তেলেবাড়ি/মঠবাড়ি ৫. পাইন্না বাড়ি ৬. জমিদার বাড়ি ৭. আন্দরকোট্টা/বিগ্রহ মন্দির
জজবাড়ি
কলাকোপার প্রাধান আর্কষন এই জজবাড়ি যা আগে জমিদার ব্রজেন সাহার সময়ে ব্রজ নিকেতন হিসেবে পরিচিত ছিল, পরে আশির দশকে এক বিচারক পরিবার এইখানে বসবাস করা শুরু করলে এটি জজ বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়।
নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় এই জজবাড়িকে। প্রচুর গাছ গাছালির সমারোহ, পাখির কিচির মিচির শব্দ আর চিত্রা হরিনের পাল দেখতে দেখতে কখন যে অনেকটা সময় পার হয়ে যাবে আপনি জানতেও পারবেন না।
জজ বাড়ির পাশের পুকুরের বাধাঁনো ঘাটে বসে থাকতে পারেন কিছুক্ষন।
জজ বাড়ির পাশের বাড়িটি দেখতে জজ বাড়ির মতনই, এটিতেও আছে বাধাঁনো ঘাট, ফুলের বাগান। এইটিকেও নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয়।
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি
জজ বাড়ির পাশের ভগ্ন প্রায় বাড়িটির নাম কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি। এই বাড়িটির সামনে একটি মন্দির আছে। বাড়িটির মতনই এর অবস্হা।
আপনার যদি ছবি তোলার নেশা থাকে তো তৈরী হন, এখন থেকেই শুরু হবে আপনার ছায়া শিকার। কালের সাক্ষীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়ির প্রতিটি অংশ জুরে খেলা করছে আলো ছায়া। ২০০ বছরের ভগ্ন বাড়িটি হয়ত কোন অব্যাক্ত ইতিহাস নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
সামনের ভাঙ্গা মন্দির ভিতরে মস্তক বিহিন একটা মুর্তি বসে আছে ভাঙ্গা বেদীর উপর। এক সময়ের সোনালী সময় এখন শুধুই অতীত।
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির কো-অর্ডিনেটঃ 23°39'30.41"N 90°08'34.14"E
তেলেবাড়ি/মঠবাড়ি
এইবার চলুন তেলেবাড়ির দিকে যা মঠবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির ডান দিকের চিকন পথ ধরে একটু সামনের দিকে এগুলেই হাতের বামে পরবে তেলেবাড়ি। ইছামতি নদীর কোল ঘেঁষে এই তেলেবাড়িটি এখন আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্প। এই বাড়িতে এখন ২৯ আনসার ব্যাটালিয়ানের বসবাস। প্রচলিত আছে, এই বাড়ির মালিক লোকনাথ তেল বিক্রি করে ধনী হয়েছিলেন বলে তার নামে এর নাম।
তেলেবাড়ির কো-অর্ডিনেটঃ 23°39'36.78"N 90°08'33.11"E
পাইন্না বাড়ি
তেলেবাড়ির পরে ইছামতির কোলঘেষেঁ যে কয়েকটি দালান আছে তার সবচেয়ে প্রথমে যে দালানটি তার নাম পাইন্না বাড়ি। তেলেবাড়ির সামনেই এর অবস্হান। কথিত আছে, এই বাড়ির অন্যতম মালিক মধুবাবু পান বিক্রি করে ধনী হওয়ায় এর নাম পাইন্না বাড়ি। মনোমুগ্ধকর কারুকাজ প্রতিটি দেওয়াল ঘিরে। বেশ অনেকটা যায়গা নিয়ে এই পাইন্না বাড়ি।
পাইন্না বাড়ির কো-অর্ডিনেটঃ 23°39'37.76"N 90°8'35.14"E
ইছামতি নদীর অন্য পাশে ইটের ভাটা, নদীতে পাল তোলা নৌকা, জীবন যাত্রা দেখতে দেখতে আরও সামনে এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে বাজার। হাটবার হলে অনেক লোকজনের সমাগম হয় নতুবা প্রায় জনশুন্যই থাকে। হাটতে হাটতে ক্লান্ত শরীরটাকে গাছের ছাঁয়ায় বিশ্রাম দিতে পারেন কিছুক্ষন। নদীর পাড়ে, চায়ের দোকানের ভাঙ্গা টুলটা। সাথে গরম গরম পুরি আর চা।
খুব একটা মন্দ হয় না।
পাইন্না বাড়ি থেকে বাজার পর্যন্ত আসার পথে অনেক ভাঙ্গা প্রাচীন বাড়িই দেখতে পাবেন। যার সবগুলোতেই এখন স্হানীয়দের বসবাস। লাল হয়ে ক্ষয়ে যাওয়া ইটগুলো এখন শুধুই কালের সাক্ষী।
বিশ্রাম শেষে এখন চলুন ঘুরে আসি জমিদার বাড়ি থেকে।
সাধারনত যারা নিতান্তই আনন্দ ভ্রমনে এই নবাবগঞ্জ আসেন তারা পাইন্না বাড়ি থেকেই ঘুরে চলে যান।
কিন্তু আপনি যদি আডভেঞ্চার প্রিয় হন তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আরও দুইটি দালান যার একটির নাম জমিদারবাড়ি, অপরটি আন্দরকোট্টা।
জমিদার বাড়ি
নবাবগঞ্জের এই এলাকার সব কয়টিকেই এক ভাষায় জমিদারবাড়িই বলা হয়। কিন্তু প্রাচিন জমিদারবাড়ি আসল সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এই জমিদার বাড়ির বিকল্প নাই।
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির যে আলো ছায়ার বর্ননা দিয়ে ছিলাম, এখনটার কাছে ঐটা কিছুই না।
দুই তলা বিশিষ্ট এই জমিদার বাড়ির সামনের দিকে বিশাল বিশাল কয়েকটি স্তম্ভ আছে। আছে ঝুলানো বারান্দা। কাঠের জানলাগুলো ভেঙ্গে গেছে কোথাও কোথাও।
জানালার রডগুলোতে নেই আর সেই উজ্জলতার ভাব। মরিচা আজ সেখানে বাসা বেঁধেছে।
আছে অনেক কুঠুরী, যার কোনাটাতে সুর্যের আলো পৌঁছায়ও না। আবছায়া আলো খেলা করছে কোন কোন যায়গায়। ইটের ক্ষয়ে যাওয়া সিঁড়িগুলো নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে পাখির ডাক, ভেঙ্গে দিচ্ছে সেই নিরবতা। সেঁতসেঁতে দেয়াল জুড়ে ফাঙ্গাস।
জমিদার বাড়ির কো-অর্ডিনেটঃ 23°39'39.32"N 90° 8'39.65"E
আন্দরকোট্টা/বিগ্রহ মন্দির
এই জমিদারবাড়ির ডান দিকের রাস্তা চলে গেছে আন্দরকোট্টার দিকে। একা একা এখানে না যাওয়ার পরামর্শ থাকল। বিশাল একটা দিঘীর পাড়ে দুই তলা বিশিষ্ট এই আন্দরকোট্টা। অনেকগুলো কুঠুরী আছে নিচের তলায়। নিকোশ কালো অন্ধকার সেগুলোতে।
যাওয়ার রাস্তাও নাই। আর উপরের তলাতে যাতে কেউ উঠতে না পারে তাই চার পাশের সিঁড়ি গুলো ভেঙ্গে দেওয়া। চেষ্টা করলে ভাঙ্গা অংশ দিয়েই আপনি উপরে উঠতে পারবেন। নয় গম্বুজ বিশিষ্ট এই আন্দরকোট্টা। গম্বুজ গুলো দেখতে ছনের ঘরের চালের মতন।
মাঝখানেরটি সবচেয়ে বড়। পুজোবেদীর মতন দেখতে। লম্বাটে জানালা গুলো দিয়ে আসছে সুর্যের আলো।
অনেকে এটিকে খেলারাম এর বিগ্রহ মন্দিরও বলে থাকেন। কথিত আছে, মা’কে বাচাঁতে খেলারাম এই পুকুরে নেমে ছিলেন আর উঠে আসে নাই।
আন্দরকোট্টা/বিগ্রহ মন্দিরের কো-অর্ডিনেটঃ 23°39'35.62"N 90°08'45.39"E
শেষ হল যাত্রা...
ভগ্ন বিলুপ্তির পথের এই দালানগুলোকে দেখে একটা কথাই শুধু চিন্তা করি, কালের আবর্তনে ইতিহাসের মতনই হারিয়ে যাবে এইসব কালের সাক্ষী যদি না আমরা এখনই এইগুলো সংরক্ষন করার চেষ্টা করি। এগুলো আমার সম্পদ, আপনার সম্পদ, দেশের সম্পদ
আমার ব্লগ
পুঠিয়া রাজবাড়ি, রাজশাহী
রাতের গুলশান লেক, ঢাকা
খানাইয়া দিঘি মসজিদ, ছোট সোনামসজিদ, কানসাট চাপাইনবাবগঞ্জ
পুঠিয়া রাজবাড়ি, রাজশাহী
সুনামগঞ্জের হাওর, সিলেট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।