আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে আসুন দোহার-নবাবগঞ্জ (কমপ্লিট ট্রাভেল গাইড এন্ড সাইট ডেসক্রিপসান)

আসুন অন্যের বিচার করার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখি। অনেক দিন যাবত ভাবছি দোহার-নবাবগেঞ্জের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং নিদর্শন নিয়ে কিছু লিখব। তাছাড়া অনেক ব্লগারকে দেখছি দোহার-নবাবগঞ্জ নিয়ে অনেক আগ্রহ প্রকাশ করতে। তাই সকলের দাবি মেটানোর জন্য এবং অন্যদের দোহার-নবাবগঞ্জে ভ্রমনের উৎসাহ যোগানোর জন্য আজ দোহার-নবাবগঞ্জের কিছু দর্শনীয় স্থান এবং এসব যায়গায় ভ্রমনের উপর একটা পরিপূর্ণ দিক নির্দেশিকা দিলাম। আমি আশাবাদী আপনারা যারা ভ্রমন পিয়াসী তারা অতি শীঘ্রই দোহার-নবাবগঞ্জ ভ্রমনের জন্য মনোস্থির করবেন এবং বাংলার কয়েক শত বছরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং নিজের চোখে অবলকন করতে পারবেন।

আপনাদের সুবিধার জন্য বেশ কিছু ছবি যুক্ত করলাম। সময় সল্পতার কারনে এবং সংগ্রহে না থাকার কারনে খুব বেশি ছবি দিতে পারলাম না। ঐতিহ্যবাহী জজ বাড়িঃ এটি নবাবগঞ্জের কলাকোপা নামক স্থানে অবস্থিত। একটি সুন্দর বাগান ঘেরা এবং বিশালাকৃতির এই জমিদার বাড়িটি মূলত জজ বাড়ি নামে পরিচিত। বাড়ির পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর।

রয়েছে পোষা হরিনের একটি খামার। বাগানের হাজারো রকমের ফুল আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে অনায়াসে। জমিদার বাড়িটি অতি প্রাচীন কালের ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরী। যা আপনাকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও সেই পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিবে। এই বাড়িটি প্রায়্ই নাটক এবং চলচিত্রের সুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কোকিল প্যারি জমিদার বাড়িঃ এই জমিদার বাড়িটি জজ বাড়ির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বলা যেতে পারে এটি জজ বাড়ির ওল্ড ভারসন। জজ বাড়ি বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা হলেও এটি রয়ে গেছে সেই আগে যেমনটি ছিল। এই জমিদার বাড়িতেও রয়েছে শত শত দৃষ্টিনন্দন ফুলের গাছ আর বাড়ির ঠিক সামনে রয়েছে বিশালাকৃতির স্বচ্ছ পানির পুকুর। রয়েছে বিশালাকৃতির পুকুর ঘাট।

ঘাটে বসে ইচ্ছা করলে পানিতে পা ভিজিয়ে আড্ডাও দিতে পারবেন অনায়াসে। হয়তো কিছু ছোট ছোট মাছ আপনার পায়ে কামর দিয়ে ছুটে পালাবে। বৌদ্ধ মন্দিরঃ এই বৌদ্ধ মন্দিরটি কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ির ঠিক বাইরে অবস্থিত। মন্দিরটির ভেতরে একটি ভাঙা মুর্তি আছে। কথিত আছে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী এই মুর্তিটি ভেঙে রেখে গিয়েছিল।

সংস্কারের অভাবে মন্দিরটির দেয়াল খসে খসে পড়ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কারো কোন হস্তক্ষেপ আজ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। খেলালামদার বাড়ি (আন্ধার কোঠা) এটি এক সময় সকলের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কিন্তু সংস্কার এবং রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। এখনো মাটির উপর ২ তলা একটি জড়াকীর্ণ ভবন দেখতে পাবেন।

কথিত আছে এই পাঁচ তলা ভবনটি এক রাতে ৩তলা পর্যন্ত মাটির নিচে চলে গিয়েছিল। ভবনটির উপরের তলাতে একটি বড় চৌবাচ্চা আছে। কথিত আছে জমিদার খেলালামদা এর মা একদিন তার সন্তানের কাছে দুধ খেতে চাইলে সে তার মায়ের জন্য এই চৌবাচ্চা বানানোর নির্দেশ দেন। পড়ে সেই বিরাট চৌবাচ্চায় দুধ এবং কলা দিয়ে পূর্ণ করে তার মাকে সেই চৌ্বাচ্চায় নামিয়ে দেন। তার মা সাতার কেঁটে কেঁটে মনের সাধ মিটিয়ে দুধ খেয়েছিল।

এই বাড়িটির পাশেও একটি বিরাট পুকুর আছে। কথিত আছে এই পুকুরের পাশে এসে কেউ কিছু চাইলে তার পর দিন তাই মিলে যেত। তবে এসব কাহিনীর সত্যতা কতটুকু তা নিয়ে কোন যুক্তিতে যেতে চাচ্ছিনা। এক সময় এই ভবনের নিচের তলাগুলোতে সিড়ি বেয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু সিড়িগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়ায় এখন এর প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এই ভবনের ভেতরে অন্ধকার এতই ঘন যে অতি উজ্জল আলোও এখানে স্তিমিত হয়ে যায়। এর জন্যই এই ভবনকে আন্ধার কোঠা বলা হয়ে থাকে। কলাকোপা আনসার ক্যাম্পঃ জজ বাড়ির সন্নিকটেই কলাকোপা আনসার ক্যাম্প অবস্থিত। এটিও একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান। ছায়া সুনিবিড় সুন্দর একটি পরিবেশ।

পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আনসারদের বসবাসের জন্য অনেক বড় একটি এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নয়নাভিরাম ক্যাম্পটি। ইছামতি নদীঃ প্রাকৃতিক সৌদর্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এই নদীটিকে ঘিরে সেই আগের মত প্রাণ চাঞ্চল্য না থাকলেও সূর্য়াস্তের সময় আপনি মূগ্ধ হয়ে এর রুপ অবলকন করতে সক্ষম হবেন। বান্দুরা ভাঙা মসজিদঃ কথিত আছে এই মসজিদটি এক রাতে গায়েবীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল।

যেরাতে এটি সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন ভোরে কোন এক লোক এই মসজিদটি প্রথম আবিষ্কার করেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণ সৃষ্টি হতে পারেনি। কিন্তু মানুষের চোখে পড়ে যাওয়ায় এটি সেরকম অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এর একটি অংশ ভাঙা থাকার কারনে এটি ভাঙা মসজিদ নামেই পরিচিত। মসজিদটি দেখতে দারুন।

অনেকে এখানে এসে নিজের মনবাসনা মহান সৃষ্টিকর্তাকে জানান। কেউ কেউ তাদের মনবাসনা পূরণ হয়েছে বলেও জানান। সাত মাথার মুর্তিঃ এটি মাঝির কান্দা নামক স্থানের অদূরে অবস্থিত। একটি বিরাট বটগাছের নিচে এই মুর্তিটি নির্মান করা হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মাধ্যমে। প্রতি বছর এই মুর্তিকে ঘিরে পূজা এবং মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বান্দুরা গির্জাঃ অনেক বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই গির্জাটি। গির্জার ভেতরের দিকটা বেশি আকর্ষনীয় এবং সামনে একটি বিশাল খোলা মাঠ এর সৌদর্য হাজারগুন বৃদ্ধি করে দিয়েছে। গির্জাটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কিছু খৃষ্টান মিশনারী ক্যাম্প। মৌনট ঘাটঃ বর্ষাকালে এটি তার চুড়ান্ত রুপ লাভ করে। পদ্মানদী যখন কূলকিনারা ভরে প্রবাহিত হয় তখন এই মৌনট ঘাট লাভ করে এক অপরুপ রুপ বৈচিত্র।

প্রতিদিন এখানে ভিড় করে হাজার হাজার দর্শনার্থী। পদ্মার চরঃ মুলত যখন পদ্মার পানি কমতে থাকে তখন পদ্মার বুকে এসব চর পরতে শুরূ করে। মূল ভুমি থেকে ভাড়া নৌকায় করে এসব চরে যেতে হয়। এসব চর হতে সূর্যাস্ত দেখাটা এক চরম অনুভুতি। মহাকবি কায়কোবাদের জন্মভুমিঃ নবাবগঞ্জের আগলা নামক স্থানে মহাকবি কায়কোবাদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

এই স্থানটিও ঘুরে দেখার মত। বিশেষকরে যারা মহাকবি সম্পর্কে জানতে চান তারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন আগলায় আসলে। মরিচা এবং তুলসীখালী সেতুঃ পর পর দুটি বিরাট সেতু পড়বে মরিচা এবং তুলসীখালী নামক স্থানে। গাড়ি থামিয়ে কিছু সময় এই সেতু দুটোতে পার করে দিলে লাভই হবে বলে মনে হয়। কেননা সেতুর উপর থেকে চোখে পড়বে সেতুর নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতির রুপ লাবন্য।

সাথে বোনাস পাবেন পাশের দিগন্ত বিস্মৃত ফসলের মাঠ। শীতকালে যখন মাঠে রবি শস্য থাকে তখন আপনার চোখ জুড়াবে তার রুপ অবলকন করে। দোহার নবাবগঞ্জ কলেজ, শহীদ মিনার এবং আরো অনেক প্রাচীন স্থাপনাঃ উপরের বর্ণিত স্থান সমূহ ছাড়াও একটু পড়ে পড়েই নানান রকম স্থাপনা আপনাদের চোখে পড়বে। যেগুলো বর্ননা দিতে অনেক সময়ের ব্যাপার। সবগুলো স্থান এবং স্থাপনাই কোন না কোন ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্বাক্ষী।

কিভাবে আসবেন ???? ঢাকার গুলিস্থানের গোলাপ শাহ মাজার থেকে বান্দুরাগামী এবং জয়পাড়াগামী বাস পাওয়া যায়। আপনি বেশি উপকৃত হবেন যদি বান্দুরাগামী কোন বাসে চেপে বসেন। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই নবাবগঞ্জ এবং পরে সেখান থেকে সহজেই দোহার যেতে পারবেন। ভাড়া নিবে ৬৫ টাকা। আর নিজস্ব গাড়ী থাকলেও তো কথাই নেই।

দল ধরে গেলে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই উত্তম হবে। নবাবগঞ্জ হয়ে প্লান করলে যে স্থান সমূহ পর্যায়ক্রমে পড়বে তা হলো---- মরিচা এবং তুলসীখালী সেতু > আগলা > নবাবগঞ্জ (শহীদ মিনার, দোহার নবাবগঞ্জ কলেজ) > কলাকোপা (আন্ধার কোঠা, বৌদ্ধ মন্দির, কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি, জজ বাড়ি, আনসার ক্যাম্প, ইছামতি নদী) > মাজিরকান্দা (সাত মাথার মুর্তি) > বান্দুরা (ভাঙা মসজিদ, হাসনাবাদ গির্জা) বান্দুরা থেকে চলে যাবেন কার্তিকপুরের মৈনট ঘাটে। সেখান থেকে জয়পাড়া হয়ে নারিসা পদ্মার চরে। নারিসার কিছু দূরেই যেতে পারেন সাইনপুকুর এলাকায়। এই এলাকাটাও ঘুরে দেখার মত।

পদ্মার তীরে সুন্দর একটি লোকালয়। এছাড়া আসার পথে জয়পাড়ায় দেখতে পাবেন নব্য নির্মিত স্বাধীনতার ভাস্কর্যটি। এছাড়াও ঘুরে দেখার মত আরো অনেক জায়গা আছে। কিন্তু সবকিছু ঘুরে দেখার জন্য আপনাকে দুই দিনের ভ্রমন প্লান করতে হবে। একদিনে আমার বর্ণিত স্থানগুলোই দেখতে পারেন।

তারপরেও সময়ের অনেক টানাটানি লেগে যাবে। বান্দুরা গেলে মিষ্টি খেতে ভুলবেন না। সাথে রসমালাই। অনেক সংক্ষেপে দোহার-নবাবগঞ্জের কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।

আর কোন তথ্য দরকার হলে জানাবেন। আমার সাধ্য মত আপনাদের জোগান দিতে চেষ্টা করবো। তো কবে যাচ্ছেন দোহার-নবাবগঞ্জ ????? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.