Digital Bangladesh Warriors - fb.com/openbd
নাশরাত চৌধুরী/ সোলায়মান তুষার: সরকারি ইডেন কলেজের ছাত্রীরা হঠাৎ কেন বিদ্রোহ করলেন? এর সন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে নানা তথ্য। এই ছাত্রীরা বলেছেন, তারা নিঝুম ও তানিয়ার গ্রুপেরই রাজনীতি করতেন। তাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতেই তারা বিদ্রোহ করেছেন
বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানো ছাড়াও কলেজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজের জামা-কাপড় পরিষ্কার করা, শরীর ম্যাসাজ করাসহ তাদের দিয়ে সব ধরনের কাজ করাতেন। ছাত্রীরা জানান, কেউ কথামতো কাজ না করলে বিভিন্ন অভিযোগ এনে হল থেকে বের করে দিতেন।
গ্রাম থেকে আসা প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের টার্গেট করতেন নিঝুম ও তানিয়া। মেয়েদের সাজিয়ে বের হতেন রাত ১০টার পর। কখনও সিনেমা আবার কখনও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে বের হতেন নিঝুম ও তানিয়া। হলে ফিরতেন সকাল ১০টার পর। এভাবেই চলছে নিত্যদিন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী শর্মিলা বলেন, আমাকে সবসময় নির্যাতন করতেন। আমি টাকা দিয়ে উঠতে পারিনি বলে নানাভাবে অপমান করতেন, আমাকে থাপ্পড় মারতেন। চরিত্র নিয়ে কথা বলতেন।
আমার বিরুদ্ধে ব্লেম দিয়েছেন আমি তার কথা ফাঁস করে দিয়েছি। এটা মিথ্যা ব্লেম।
আমাকে নানাভাবে অফার করতেন। নেতাদের বাসায় যেতে বলতেন। ফোন নম্বর দিতেন, কথা বলতে বলতেন নেতাদের সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে কথা বলতে বলতেন।
সবসময় টার্গেট নেন প্রথম বর্ষের মেয়েদের। গ্রামের মেয়েরা কি বোঝে? তাদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন।
মেয়েরা ভয়ে কথা বলতে পারছেন না।
বাংলা বিভাগের ছাত্রী রিনি বলেন, নিঝুম-তানিয়া হল বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য করে। এমন কোন বাণিজ্য নেই যে তারা করেননি। প্রথম বর্ষের মেয়েরা তার নির্যাতনের ভয়ে কথা বলতেন না। কেননা তারা গ্রাম থেকে এসেছেন।
তাদের ঢাকায় যাওয়ার জায়গা নেই।
ইতিহাস বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী ইয়াসমিন বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনকে ভর্তি বাণিজ্যের ভাগ দিতেন নিঝুম ও তানিয়া। এ বছরও ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন।
একই বর্ষের ছাত্রী স্বর্ণা বলে, নিঝুম প্রায় দিনই রাত ১০টায় হল থেকে বেরিয়ে যান। তার সঙ্গে আরও মেয়ে থাকেন।
অন্যদের বলে যান কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি আমি হলেই আছি। ছেলেদের নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাচল করেন। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই মারধর করে বের করে দেন।
আমাকে প্রায়ই বিভিন্ন নেতার মোবাইল ফোন নম্বর ধরিয়ে দিয়ে কথা বলতে বলতেন। কথামতো কাজ না করলে হল থেকে বের করে দেয়াসহ নানা নির্যাতন চলে ছাত্রীদের ওপর।
আরও যত অভিযোগ: পাঁচ বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও এখনও জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়াসহ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এই কমিটির মেয়াদ তিন বছর আগে শেষ হলেও দোর্দণ্ড প্রতাপে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নানা রকম অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজ প্রশাসনের যোগসাজশে লাখ লাখ টাকার ভর্তি বাণিজ্য করেছেন দু’জনে। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহফুজা চৌধুরীকেও এসব বাণিজ্যের ভাগ দেয়া হয়-এমন অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা।
আবার ভর্তির পর ছাত্রীদের হলে তুলতে ‘সিট বাণিজ্য’ করেছেন বলেও সংগঠনের একাধিক নেত্রী জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম এ কলেজে ১৯৯৭-৯৮ সেশনে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন। তার ছাত্রত্ব ২০০৫ সালেই শেষ হয়েছে।
তারা দু’জনই অবৈধভাবে টাকা কামাতে গত বছর থেকে ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেন। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রলীগ ভর্তির জন্য কলেজ প্রশাসন থেকে ৯০০ সিট পায়। তখন সবাইকে মোটামুটি ভাগ দেয়া হয়েছিল।
এবার এই দুই নেত্রী প্রায় ৭০০ ছাত্রীকে এককভাবে ভর্তি করিয়েছেন।
ইডেনে পাঁচটি হল রয়েছে। প্রতিটি হলেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি সিটে একজন ছাত্রী তোলার বিনিময়ে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়। এবার প্রায় ৫০০ ছাত্রীকে সিটে তোলা হয়েছে। এখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রায় ৫০ লাখ টাকার সিট বাণিজ্য করেছেন।
মাসিক আয় এক লাখ টাকার বেশি: একটি কলেজের সভাপতি হলেও নিঝুমের রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি। ওই গাড়ি দিয়েই ছাত্রীদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায় সে। নিজেও ঘোরাফেরা করে বেপরোয়া। আজিমপুরে তার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রীরা। ইডেনের সামনের দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।
এতদিন ইডেনে ডাইনিং ছিল। কলেজ প্রশাসনই তার তদারক করতো। সমপ্রতি পাঁচটি হলেই করা হয়েছে ক্যান্টিন। এখন তা চলে ভাড়ায়। ছাত্রফ্রন্টের নেত্রীরা প্রতিবাদ করায় তাদের মারধর করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন নিঝুম-তানিয়া গ্রম্নপ।
হলে ছাত্রদলের নেত্রীরা না থাকায় নিঝুম-তানিয়া রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এড়্গেত্রে তাদের প্রত্যড়্গ ও পরোড়্গভাবে অধ্যাপক মাহফুজা চৌধুরী সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের থামিয়ে দেয়া হলে কলেজে অন্যায় আরও বাড়বে। আমরা নিঝুম-তানিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছি বলেই আমাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা দুই কারণে- এক, অন্যদের অপকর্মগুলো চাপা দেয়া।
দুই, যাদের বাণিজ্য রমরমা তা চাঙ্গা রাখা।
আমরা যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি তা বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেরই বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা তাদের কথা বলতে গিয়ে এমন সব নেতার নাম আসছিল যে তারা এই বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আমাদের সম্পর্কে উপর মহলে ভুল মেসেজ পাঠিয়েছে। আমরা জানি নিঝুম-তানিয়াদের আয়ের টাকার কারা ভাগ পায়। ওই নেতার নাম বললে আসল পরিচয় বের হয়ে আসবে এই আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
সত্য বলার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নানাভাবে আমাদেরকে চাপের মুখে রাখা হয়েছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। গ্রেফতার করা হবে। উপর থেকে ওই রকম নির্দেশ দেয়া হয়েছে লালবাগ থানা থেকে জেনেছি।
সূত্রঃ মানবজমিন Click This Link
এই হলো আমাদের দেশের রাজনীতি। এর পেছনে দায়ি হিসাবে যদি দুই জনের নাম চাওয়া হয় তবে সে নাম দুটি অবশ্যই হবে হাসিনা ও খালেদা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।