আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্নের অভিমান



ভাগ্নেটা পিচ্চিকাল থেকেই মায়ের বড় ন্যাওটা। মা সব কাজ ফেলে শুধু তাকেই সময় দিবে এটাই সে চায়। ওর যখন তিন বছর বয়স তখন ওর মা বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সারাদিনে সুযোগ পেলেই (মানে ভাগ্নের চোখ থেকে বাঁচার সুযোগ পেলেই) বিসিএস এর গাইড বই নিয়ে বসত। ভাগ্নের সেটা মোটেই সহ্য হত না।

রাগের চোটে প্রতিটা গাইড বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়ত আর গজগজ করে বলত, বি চি এচ, বি চি এচ! ওর মায়ের প্রতিটা বইয়ের প্রথম দশ-বারো পৃষ্ঠা ছেঁড়া ছিল। ভাগ্নের বদদোয়ার জন্যই কি না জানি না, বেচারীর বিসিএস টা হল না। তবে একই সময় অন্য একটা ভালো চাকরির সুযোগ এসে গেল। সরকারী চাকরিই যেহেতু, শুরুতে গ্রামে পোস্টিং হল। ভাগ্নের তখন চার বছর বয়স।

যেদিন প্রথম ভাগ্নেকে রেখে ওর মা কর্মস্থলে থাকতে গেল, ভাগ্নে সারাদিন নিজের মত খেলাধূলা করল, মায়ের কথা একবারও জিজ্ঞেস করল না। এমনকি মা ফোন করে ওর সাথে কথা বলতে চাইলে ফোনও ধরল না। রাতে ভাগ্নেকে আমার সাথে নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। এই প্রথম সে মাকে ছাড়া ঘুমাতে গেল। খুব আগ্রহ নিয়েই ঘুমাতে গেল, খুব মজা হবে আন্টিমনির কাছে ঘুমাব।

লাইট অফ করে চুপচাপ দুজন শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর ভাগ্নে আস্তে করে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা আন্টিমনি, মাম গেল কেন? মনের যত ক্ষোভ আর বুক ভরা কষ্ট সারা দিন পর ঐ একটা প্রশ্নেই ঝরে পড়ল। আমি বললাম, -মাম তো চাকরি পেয়েছে, চাকরির জন্য যেতে হয়েছে। --চাকরি করার কী দরকার? -চাকরি না করলে যে টাকা পাবে না, চাকরি করলে বেতন পাবে তো। --টাকা দিয়ে কী হবে? -টাকা দিয়ে মাম তোমার জন্য জামা কিনবে, বই কিনবে, ব্যাগ কিনবে, কলম-পেনসিল, ইরেজার-শার্পনার সব কিনবে, তোমাকে স্কুলে ভর্তি করাবে তো।

--ও আচ্ছা। এরপর মাকে নিয়ে আর কোন প্রশ্ন করেনি। সপ্তাহ শেষে যখন ওর মা বাড়িতে এল, ভাগ্নে দেখি খুশি হবার বদলে রাগে গজগজ করছে। আমি বললাম, কী হল তোমার, মাম আসছে খুশি হওনাই? ভাগ্নে ফোঁস ফোঁস করে বলে, তুমি যে বললা মাম ব্যাগ আনবে, বই আনবে, কলম-পেনসিল আনবে, আরও কি কি আনবে, কই কিছুইতো আনে নাই। আনছে শুধু মধু।

প্রায় দেড় বছর ভাগ্নের মা এইভাবে সপ্তাহান্তে বাড়ি এসেছে, আবার ছুটি শেষে কাজে ফিরে গেছে। তখন ভাগ্নে আমাকে মায়ের নামে নালিশ করত, দেখ আন্টিমনি, মামটা কেমন? ভোরবেলা চলে যায়, যখন আমি ঘুমিয়ে থাকি, আমাকে একটু বলেও যায় না। এরপর অনেক ধর্ণা দিয়ে অবশেষে ভাগ্নের মা বদলির ব্যবস্থা করতে পারল বাড়ির কাছাকাছি জায়গায়। ওর বদলির কয়েকদিন পর আমি ভাগ্নেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, কেমন আছ? ভাগ্নে খুশিতে লাফাতে লাফাতে বলে, এখন তো আমি অনেক ভালো থাকি, কারণ এখন মাম আর আমাকে ফেলে চলে যায় না।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।