আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারিদের এখন দুঃসময়



বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারিরা এখন দুঃসময় পার করছেন। ওয়ান ইলেভেনের কঠিন সময়ে দলের মহাবিপর্যয়ের ত্রাতা হিসেবে যারা আবির্ভূত হয়েছিলেন এখন তারা দলে দিন দিন গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন। ক্ষোভে-অভিমানে এসব নেতার কেউ কেউ পদত্যাগেরও চিন্তা-ভাবনা করছেন। অনেকে দলীয় কার্যক্রম থেকে নিজেকে স্বেচ্ছায় গুটিয়ে নিয়েছেন। আবার কেউ মনের কষ্ট মনে রেখেই সংস্কারপন্থিদের পেছনের চেয়ারে বসে সুদিনের প্রহর গুণছেন।

ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাবন্দি ও সংস্কারপন্থিরাই এখন দলীয় কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘিরে সংস্কারপন্থিরা এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারাই এখন বিএনপির মূল শক্তি হিসেবে মাঠ পর্যায়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। দলীয় কর্মসূচি তৈরী ও তার বাস্তবায়নেও সামনের সারিতে আছে ওয়ান-ইলেভেনের সুযোগ সন্ধানীরা। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছে না ।

দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে বেগম জিয়াকে বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন সংস্কারপন্থিরা। এমনকি সভা-সমাবেশেও তারা সে আদলেই বক্তব্য রাখছেন। পক্ষান্তরে ওয়ান ইলেভেনের দুঃসময়ে ঝুঁকি নিয়ে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নেতারা সরকারের বর্তমান অবস্থানকে চূড়ান্ত বাকশালের গতিপথ হিসেবে অভিহিত করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। এ কারণে তাদেরকে দলের মধ্যেই সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনকে ঘিরে ওয়ান ইলেভেনে সংস্কারপন্থিদের মহাসচিব মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আবারও বিএনপির রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।

আর দুঃসময়ের কাণ্ডারি বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন। তিনি দিন দিন দলের সাবেক বর্ষিয়ান রাজনীতিকদের কাতারে ঢুকে যাচ্ছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে মিডিয়ার সামনে এসে ত্যাগী নেতার ভান ধরার অভিযোগ রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে তারাও এখন খোন্দকার দেলোয়ারের সাথে খুব একটা সৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারি দেলোয়ার হোসেন। তিনি মহাসচিবের মুকুট পরে থাকলেও মূল দায়িত্ব পালন করছেন দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়ান ইলেভেনের সময় মির্জা আলমগীরের ভূমিকা দলের জন্য নেতিবাচক কী ইতিবাচক সেটা বড় কথা নয়। তবে খোন্দকার দেলোয়ারের মতো এতটা সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকা মির্জা আলমগীর পালন করেননি। অপরদিকে দেলোয়াররের বিকল্প হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও ওয়ান ইলেভের সময় বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। যদিও তিনি সংস্কারপন্থিদের সাথে হাত মিলিয়ে গ্রেফতার এড়াতে চেয়েছিলেন। ত্যাগের পরীক্ষায় তিনি দেলোয়ারের কতটা সমকক্ষ তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ।

কিন্তু মোশাররফ হোসেন এখন সুসময় পার করলেও খোন্দকার দেলোয়ারকে দুঃসময় পার করতে হচ্ছে। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পর ব্রি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, অধ্যাপক এম এ মান্নান, নুরুল কবির শাহিনসহ বেশ কয়েকজন নেতা ওয়ান ইলেভেনের চরম দুঃসময়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে চেয়ারপারসনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু এদের অনেকেই এখন দুঃসময় পার করছেন। কেউ কেউ দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এদেরকে দলীয় কর্মসূচির বিষয়েও খুব একটা জানানো হয় না।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ লাভের পর প্রথম দিকে হান্নান শাহকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যেত। কিন্তু এখন তাকে দলীয় কর্মসূচিতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অতি সমপ্রতি মুক্তাঙ্গনে অনুষ্ঠিত ভোলা-৩ উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রায় হান্নান শাহ-গয়েশ্বরকে দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, দলের গুরুত্বপূর্ণ এ কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, দলের অনেক শীর্ষ নেতা ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।

দলের ক্ষতি করেছেন। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ করার জন্য তারাই এখন বেশি বেশি সক্রিয়তা জাহির করছেন। তবে এসব সুবিধাবাদিরা যত বেশি দৌড়ঝাঁপ করবে দলের শুভাকাঙ্ক্ষি-হিতাকাঙ্ক্ষিরা এদেরকে ততবেশি সন্দেহের চোখে দেখবে। তিনি আরো বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় কেউ আমার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়নি। দায়িত্ববোধ থেকেই দলের জন্য কাজ করে গেছি।

ভবিষ্যতে দলের প্রয়োজনে এমনিভাবে কাজ করে যাবো। কারো কৃপা বা অনুগ্রহে রাজনীতি করি না। রাজনীতি করি জনগণের জন্য। জনগণই আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.