আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বার্লিন, বার্লিন এবং বার্লিন - ৫

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই

এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ ২০১,ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সকাল ১১টা। এখন কি হবে। এত বড় বার্লিন কেমনে দেখবো!!! গার্গী আপা বললেন, ''চলো চলো তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নাও। তারপর আমরা দৌড় দিব'', আমাদের গাইড গার্গী আপা। উনার কথা শুনতে হবে।

তাই কথা না বাড়িয়ে ছুটলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। গোসলখানা থেকে বেড়িয়ে দেখি গার্গী আপা নাস্তা রেডি করে ফেলেছে। এরই মাঝে বের হয়ে তিনি নাস্তা রেডি করে ফেলেছেন। গরম গরম ব্রোটসেন( জার্মানিতে শত শত ধরনের বনরুটি পাওয়া যায়, যা খুবই সুস্বাদু) এবং সালামি আর চা। উফ!!! গ্রেট গার্গী আপা....আপনার তুলনা শুধু আপনি।

আমরা যার বাসায় উঠেছি, আমাদের চেঁচামেচিতে নমিদা ঘুম থেকে উঠে গেলেন। বেচারা নমিদা রাত ৪টা পর্যন্ত নিজের বার কাম রেষ্টুরেন্টে সময় দেন। শীত, বর্ষা, হেমন্ত সবসময় নমিদার ব্যবসা জমজমাট। উনার এত গুণগ্রাহী। বাংলাদেশীরাতো আছেই; উনাকে জার্মানরাও খুব ভালবাসে।

নমিদা ঘুম থেকে উঠতেই উনার বিড়ালরা উনাকে ঘিরে ধরলো। গর!গর! শব্দে উনার গা ঘেসছে আর আমি শুধু দেখছি ঘর ভরতি বিড়ালের লোম!!!! যাইহোক, আমরা নমিদাকে প্রশ্ন করলাম, আমরা কিভাবে ট্রাম ধরতে পারি? আর সারা শহর ঘুরতে পারি। আমরা আগেই ইন্টারনেটে খবর নিয়েছিলাম যে, ১০০ নাম্বার বাসে ঘুরলে সারা শহর দর্শনীয় এলাকাগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়া যাবে। নমিদাকে যেই না বলা, উনি ওমনি রেডি; ''বললেন চলো তোমাদের ট্রাম ষ্টেশনে পৌছে দেই'',নমিদার বাসা থেকে ২০ মিনিট বা ২ কিলোমিটার হাটলে ট্রাম ষ্টেশন। ট্রাম-ষ্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, পথে দেখলাম বিশাল ''ভোখেনএন্ডে মার্কট' অর্থ্যাৎ সপ্তাহের বাজার বসেছে।

জার্মানিতে এই মার্কেট সাধারণত সপ্তাহে শুধুমাত্র শনিবারে বসে। আমরা যথারিতী ঢুকে গেলাম সেখানে। কত কি যে পাওয়া যায় এখানে। দেখলাম বেশ ভিড় এই বাজারে। আমি একটা দোকান থেকে একটা ঘন্টা কিনলাম।

কি আনন্দ!! বার্লিনে প্রথম কেনাকাটা। এরপর পৌঁছে গেলাম ট্রাম ষ্টেশনে। আমরা ১৫:৪০ ইউরো দিয়ে সারাদিনের জন্য গ্রুপ-টিকেট কিনলাম। আগের দিন গার্গী আপা আমাদের জন্য টিকেট কেটেছিলেন। আজ আমি কিনলাম।

তপুভাই দৌড়ে এলেন ভাগের চার ইউরো দেয়ার জন্য। বললাম, ''গতকাল গার্গী আপা টিকেট কাটলো সবার জন্য। আজ আমি টিকেট কাটি সবার জন্য, কাল আপনি কেটেন তাহলেই হবে''। শুনে তপু ভাই কিছু না বলে সরে গেলেন। আর আমার বর আমাকে বকা শুরু করলেন, ''কেন তুমি ওকে বললে টিকেট কাটতে''।

কি আজব আমরা সবাইতো ঘুরে বেড়াবো। কথা ছিলো, যা খরচ হবে সমান সমান ভাবে সবাই ভাগ করে দিব। আমি নাকি টিকেট কাটার কথা বলে নিজেকে ছোট করে দিলাম। এরপর, জুলাগিশের গার্টেন নামের একটি ষ্টেশনে পৌঁছালাম। ট্রাম-ষ্টেশনটির পাতালে অবস্থান।

আমরা উপরে এসে দেখি একটি বিশাল ভাঙ্গা গীর্জা দাড়িয়ে আছে সামনে। এটি সাক্ষী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। আমরা গীর্জার ভিতরে ঢুকে এর অতীত ইতিহাস জানার চেষ্টা করলাম। প্রাচীন এই গীর্জায় পুরানো নকশা, ভাস্কর্য্য, দেয়াল ভাস্কর্য্য আর চিত্র-কর্ম রয়েছে। রয়েছে পুরোনো রাজ-পরিবারের ইতিহাস।

এবং পূর্বে গীর্জাটি কি অবস্থায় ছিলো তার মডেল। গীর্জা থেকে বেড়িয়ে আরো আধা-কিলোমিটার হাটার পর গার্গী আপা বললেন, উনার ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে। তাই যেখান থেকে বাস ধরবার কথা সেখান থেকে আরো ২ কিলোমিটার হেটে যেতে হবে। শুরু বার্লিন শহর হাটা যাত্রা। ব্যাংক যে স্থানে অবস্থান করার কথা সেখানে পৌঁছানোর পর গার্গী আপা বললেন, তিনি নাকি ব্যাংক খুঁজে পাচ্ছেন না।

আরো কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক খোঁজার পর উনাকে উনার ব্যাংকের নাম জিগ্যাসা করলাম, বললেন: SEBEC Bank. আমি বললাম পিছনে ফেলে এসেছি আমরা। গার্গী আপা বললেন, আমি নাকি ভুল দেখেছি। গার্গী আপা আরো এদিক-ওদিক ঘুরলেন তারপর বললেন, কোথায় দেখেছো তুমি? বললাম আরো আধা-কিলোমিটার পিছনে। কথা মতো হাটতে হাটতে আমার বলা জায়গায় ব্যাংকটিকে খুঁজে পাওয়া গেল। গার্গী আপা বললেন, আসলে অনেকদিন আসা হয়নাতো।

তবে মনে হয়, ব্যাংকটি আগের জায়গা থেকে এখানে সরিয়ে আনা হয়েছে। আবার শুরু হলো পদযাত্রা ১০০ নাম্বার বাসের উদ্দেশ্যে। সামনে দিয়ে অসংখ্য ১০০ নাম্বার বাস চলে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের গাইড গার্গী আপা বাস-স্টপেজ খুঁজে পাচ্ছেন না। অবশেষে আরো ২০ মিনিট পদযাত্রার পর দেখা মিললো ১০০ নাম্বার বাসের। ডেটিকেটে বাসটিকেটও কভার করে।

আমরা উঠে বসলাম দোতলা বাসে। চলছে তপু ভাই আর গার্গী আপার ফটোশুটিং। ১০ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম, ডেম ডয়েচেন ফোলকেনের সামনে ( জার্মানি পার্লামেন্টের সামনে)। যাক, এতক্ষণের হাটাহাটি সফল হলো। জার্মানি পার্লামেন্টের সামনে ফটোশুটিং পর গার্গী আপা বললেন, ওইযে দূরে দেখতে পাচ্ছো লাল-রংয়ের DB( ট্রেন-ষ্টেশন), এটি আমার খুব প্রিয়।

চলো দেখে আসি। আবারো ১ কিলোমিটার হাটার পর আমরা পৌঁছালাম সেখানে। বেলা ২টা বাঁজে। হাটতে হাটতে ক্ষিধায় প্রাণ যায়। সামনে ম্যাগডোনাল্ডস।

বললাম, চলেন ঢুকি। গার্গী আপা বাধ সাধলেন। বললেন, না না ডোনার খাবো। এখানে খুব সস্তায় ডোনার পাওয়া যায়। ১ ইউরো দাম ম্যাগডোনাল্ডস বার্গার আর ডোনারের দাম ৩ ইউরো করে।

গার্গী আপা বলে কথা। উনার কথাতো ফেলা যায়না। এবার হাটা শুরু করলাম, ব্রান্ডেস বুরগার টুরের ( বার্লিন গেট)দিকে। বাসে চড়ে যাওয়া যায়। কিন্তু গার্গী আপা বললেন, এইতো এখানে।

''এইতো এখানে'' দেখা গেল আরো দেড় কিলোমিটার পদযাত্রার পর। আজযে কি হবে !!! এ পর্যন্ত হিসাব মতে ১৫ কিলোমিটার হেঁটে ফেলেছি। জয়তু গার্গী আপা!!!! চলবে.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.