যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই
২রা এপ্রিল। জার্মানির হাইওয়ে অভাবনীয় ভিড়। ভাবা যায়, এত বড় দেশের হাইওয়েতে স্টাও (জ্যাম) লাগতে পারে। আসলে ইষ্টার সানডেতে ৪দিন ছুটি পেয়ে সবাই এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে ছুটে যায়। কেউবা ছোট একটি উরলাউবের ( বেরানো) আশায় আর কেউবা চলছে আপনজনদের সাথে দেখা করবার জন্য।
দুপুর ২টায় সবাই একমত হলাম, ক্ষিধেয় সবার পেট ত্রাহি ত্রাহি বলছে। একটি পার্ক প্লেসে নামলাম আমরা সবাই। (এখানে জার্মানি বা ইউরোপের হাইওয়ের একটি প্রশংসা না করলেই নয়। এই হাইওয়েগুলোতে প্রতি ১০/২০ কিলোমিটারের মাঝে রয়েছে গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নেবার জায়গা। যেখানে বসতে হলে কোন টাকা দিতে হয়না।
রয়েছে খুব পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেট)। নামতেই আমি ঘটালাম বিপত্তি। আমি যে পাশে বসেছিলাম, সেখানকার সামনের মিরর ভিওর নামিয়ে রেখেছিলাম। শান্তিদাকে নামাতে গিয়ে রাজা সেটি ভেঙে ফেলল। গেল না মন খারাপ হয়ে।
এখন পুরো বার্লিন যাত্রায় আমার মনে হবে আমি সব নষ্টের মূল। কিন্তু রাজা আমায় বললো, ''ভুলে যাও। যে কেউ এই ভুলটি করতে পারে!!!!''
যখন আমরা বার্লিন পৌছালাম, তখন ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ছয়টা। তারমানে আমরা প্রায় ১০ ঘন্টা ড্রাইভে ছিলাম। বার্লিনে ঢুকতেই ''সিগেসাওলে'' বা বিজয়ের প্রতীক চোখে পড়ল।
জাজ্বল্যমান এই বিজয়ের প্রতীক দাড়িয়ে আছে কুইনিগ্স-প্লাটসে( রাজকীয় স্থানে) বর্তমানে স্থানটির নাম প্লাটস ডেয়ার রিপাবলিক। শুনলাম এই স্থাপত্যের ইতিহাস!! প্রথম এই স্থাপত্য তৈরীর ভাবনা শুরু হয় ১৮৬৪ সালে ডাচ- প্রুসিয়া যুদ্ধে প্রুসিয়া বিজয় লাভ করার পর। তারপর ১৮৬৬ সালে শুরু হয়, অস্ট্রিয়া-প্রুসিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধেও প্রুসিয়া বিজয় ছিনিয়ে আনে। ১৮৭০-১৮৭১ সালে যখন আবার ফ্রান্স এবং প্রুসিয়া যুদ্ধে প্রুসিয়া জয় অর্জন করে তখন নতুন করে উদ্দীপনা জাগে প্রুসিয়ানবাসীদের (বর্তমান পোল্যান্ডের একটি প্রাচীন নগরী।
একসময় বার্লিন এবং প্রুসিয়া সংযুক্ত ছিলো) মাঝে এই বিজয়ে প্রতীক বা সিগে-সাওলে নির্মাণ করার। এর দৈর্ঘ্য ৮.৩ মিটার আর ওজন ৩৫ টন। বিজয়ের প্রতীক হাতে যে দেবী দাড়িয়ে আছে,সেটুকু পুরোটাই ব্রোন্জ্ঞে তৈরী। ১৮৭৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর শুরু হয়, সিগে-সাওলে নির্মানের প্রথম কার্যক্রম।
বার্লিনে পৌঁছে, প্রথমে গেলাম আমরা নমিদার কুক-কুকস-আইয়ে।
দেখি, নমিদা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। নমিদার এই রেষ্টুরেন্টে কাম বারটি পশ্চিম জার্মানিতে। এই এলাকায় এই বার এবং নমিদা ভীষণ জনপ্রিয়। দেখলাম আশেপাশের প্রতিবেশী জার্মানরা এসে নমিদাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে অথবা কুশলাদি জিজ্ঞ্যাসা করছে। দারুণ ব্যাপার! কে ভাববে এরা হিটলারের জাতি আর বিদেশীদের পছন্দ করেনা।
আমার অভিজ্ঞতায় বলে, জার্মানরা বিরক্ত হয় তখনি যখন আসলে দেখে এদের সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি করছি। অথবা ওদের ঘাড়ের ওপর উঠে না লাফাচ্ছি। আর দু/একটি ব্যাতিক্রম সব দেশে আছে। তবে এরা যেহুতু অন্য ভাষায় কথা বলতে খুব পারদর্শী নয়, তাই চায় এদেশে বসবাসরত মানুষ যেন জার্মানভাষা শিখে নেয়। তাহলে পরস্পরের সাথে যোগাযোগে বেশ সুবিধা হয়।
নমিদার বাসায় মালপত্র রাখতে গিয়ে দেখি, উনি ২টা বিড়াল পোষেন। ১টা বিড়ালের নাম কুকি অন্যটি মায়া। ভয়ে আমি শিউরে উঠলাম। দুটি বিড়াল পায়ের কাছে ঘুরছে। ছোটবেলা থেকে আমি বিড়াল খুব ভয় পাই।
এর কারণ, একবার বিড়াল আমাকে খাঁমচে দিয়েছিল । আর একবার আমি একটি ধবধবে সাদা বিড়ালকে একটি ইদুর ধরে পালাতে দেখেছি রক্তাক্ত মুখে। এরপর থেকে বিড়াল যেখানে থাকে আমি তার দশ হাত দূরে থাকি।
বিড়ালগুলো সারা বাড়ি দৌড়াচ্ছে। নমিদা কোলে নিয়ে ঘুরছেন এবং বলছেন, এই প্রাণীদুটি তাঁর সন্তান।
পুরো জার্মানিতে বন্ধুবান্ধব আর এই বিড়াল ছাড়া তাঁর কেউই নাই। প্রতি ঘরে ঘরে বিড়ালের জন্য ঘর তৈরী করা। আকাশে- বাতাসে, সারা বাড়িতে বিড়ালের লোম উড়ছে।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর নমিদা এসে বললেন, 'চলো'। যাত্রা শুরু হলো মিলন ভাইয়ের ( বাংলাদেশী কিন্তু নাগরিকত্ব জার্মানির।
কাজ করছেন প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে) বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। প্রথমে ২ কিলোমিটার হেটে ট্রাম ধরলাম আমরা। মিলন ভাইয়ের বাসার সামনে বিশাল মেলা বসেছে। উনার বাসায় পৌঁছে দেখি, শুধু আমরা আমন্ত্রিত নই, আরো অনেক বাঙ্গালীকে সেদিন দাওয়াত করেছেন তিনি। শুরু হলো জম্পেস আড্ডা।
আর মিলন ভাইয়ের রান্না!! আহা! সাধু, সাধু !!
রাত ২টায় ফিরছি আমরা। সাথে নমিদা আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। রাত ২টা বাঁজে। অথচ ছুটে চলছে বার্লিন নগরী। ছুটির দিনে এখানে সারারাত ট্রাম চলে।
তরুণ-তরুণীরা ছুটছে, আড্ডা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে দিনেরবেলা দুপুর ২টা। কেউ কাউকে বিরক্ত করছেনা। যার যার মতো মানুষগুলো ছুটে চলছে। আমরা ক্লান্ত কিন্তু মনের মাঝে উত্তেজনা বিরাজমান।
কারণ, পরেরদিন শুধু বার্লিনের পথে ছুটবো আর জানবো তাঁকে। তাই সেই রাতে তাকে জানালাম, আউফ-ভিদারসেহেন। বিদায়! বিদায় আজ রাতের জন্য। দেখা হবে আবার কাল সকালে।
চলবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।