যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই
জার্মানিতে আসার পর একটি বিষয় খুব নাড়া দেয় আমায়। এর কারণ হিসেবে বোধ করি আমি এমন একটি দেশ থেকে এখানে এসেছি যেখানে সরকারি ছুটি পাই আমরা বিশেষ কিছু সময়ে। ঈদে, পুজায়, খ্রীষ্টমাসে, বৌদ্ধ-পূর্ণিমায়, পহেলা বৈশাখ, ঈদে- মিলাদুন্নবীতে অথবা ইস্টার সানডেতে। এটা সত্যি যে, ইসলামিক পার্বণগুলোতে ছুটির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে কিন্তু প্রতিটি ধর্মাম্বলীর মানুষ বিশেষ দিনগুলিতে ছুটি পায় অবশ্যই। কিন্তু এদেশের বেশির ভাগ ছুটি খ্রীষ্টধর্মের বিশেষ দিনগুলিতে দেয়া হয়ে থাকে।
অবশ্য মানুষ চাইলে ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারে। কিন্তু এখানে আবার বছরের নির্দিষ্ট ছুটি কমে যাবে।
যাই ফিরে যাই আমার ভ্রমণ কাহিনীতে। ইষ্টার-সানডেতে একসাথে ৪দিন ছুটি পেলাম আমরা। আর এখানে এতদিন ছুটি পাওয়া মানে হলো কাজে লাগাতে হবে।
ঠিক হলো, বার্লিন যাবো আমরা। আমরা হলাম চারজন (আমি, আমার বর, আমার বরের বন্ধু প্রবর তপু আহেমদ মনির উদ্দিন আর নওরোজ বানু গার্গী আপা)। ঠিক করা হলো কুইনিগসভিন্টার থেকে আমরা গাড়ি নিয়ে রওনা হবো। আর ফ্রান্কফুর্ট থেকে গার্গী আপাকে তুলে নিব। কিন্তু বার্লিন গেলে থাকবো কোথায়? ফোন করা হলো নমিদাকে।
নমিদা ৩০ বছর ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন। বার্লিনে তার একটি রেষ্টুরেন্ট কাম বার আছে। যার নাম কুক-কুকস- আই( যার অর্থ কোকিলের ডিম)। ঠিক তার ওপরেই তিনি একটি বিশাল বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। নমিদাকে ফোন করার পর তিনি যা বললেন তা শুনেতো আমরা অভিভুত।
বললেন আমরা তার বাসায় গিয়ে উঠলে তিনি খুবই খুশী হবেন। আমরা তার বাসায় গিয়ে যতদিন খুশী থাকতে পারি। অনেক জল্পনা কল্পনা চলতে থাকলো এই বার্লিন যাত্রা নিয়ে। ঠিক করা হলো, এই বার্লিন যাত্রায় আমাদের গাইড হবেন গার্গী আপা। কারণ, আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি বার্লিন ভ্রমণ করেছেন তিনি।
ছুটি পেলেই গার্গী আপা বার্লিন ঘুরতে যান। বার্লিন তার সবচেয়ে প্রিয় শহর। এর মাঝে গার্গী আপা ফোন করে জানালেন, আমাদের পথের সঙ্গী হবেন শান্তিদা (শাহ্ব আলম শান্তি, তিনি অরিত্র নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক। জার্মানিতে শুধুমাত্র এই বাঙালি পত্রিকাটিই রয়েছে)। তবে শান্তিদা যাবেন তার ব্যক্তিগত কাজে।
আমাদের সাথে নমিদার বাসায় থাকবেন না। সবাই মিলে তেলের টাকা ভাগ করে দিব আমরা তাও ঠিক হয়ে গেলো। কারণ বার্লিনে ড্রাইভ করে যাওয়া-আসায় ২০০ ইউরোর বেশি প্রয়োজন। যদিও ট্রেনের যাত্রার চেয়ে কম খরচ। তারপরও একা ২০০ ইউরো খরচ করা একটু বেশি হয়ে যায়।
অপেক্ষার দিন যেন শেষ হয়না। কবে আসবে ২রা এপ্রিল। এর মাঝে বার্লিনে বাস করছেন এমন অনেকে আমাদের আমন্ত্রণ করছেন, একবেলা অন্তত যাতে তাদের বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করি। আরে কি আনন্দ !!! কলাও বেচা হলো, সেইসাথে রথও দেখা হবে। সবার মাঝে উত্তেজনা।
বার্লিন যাবো, বার্লিন।
১লা এপ্রিল অফিস থেকে একটু জলদি জলদি বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে গোছানো শুরু করলাম। আমার বর আমার চেয়ে এক বললে ভুল হবে দুই কাঠি বেশি। ও আগে ৪/৫ বার বার্লিন গেলেও আমাকে নিয়ে প্রথম বার্লিন যাচ্ছে।
আর বড় শহর আমার বরকে ভীষণভাবে টানে। আর আমাকে ডেকে চলছে বইয়ে পড়া বার্লিনের ইতিহাস --- আয়, আয়, আয়!!! গোছানো শেষ করে, রান্না শুরু করলাম আমরা। আমার বর সব কাটাকুটি করে দেয় আর আমি রান্না করি। বার্লিনে যেতে সময় লাগবে ৮ ঘন্টা। ৫ জন মানুষ হাইওয়েতে রেষ্টুরেন্টে না খেয়ে নিজেদের রান্না খাবো বলে ঠিক করলাম।
রাত ১২টায় যখন ঘুমাতে গেলাম দেখি এতো কাজ করার পরও ক্লান্ত লাগছেনা। বরং কাজ করছে উত্তেজনা।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে, একটু নাস্তা করে রওনা হলাম আমরা তিনজন (তপু ভাই এবং আমরা) ফ্রান্কফুর্টের উদ্দেশ্যে। ফ্রান্কফুর্ট থেকে গার্গী আপা আর শান্তিদাকে তুলে নিয়ে যাত্রা শুরু করবো আমরা বার্লিনের পথে। ফ্রান্কফুর্ট থেকে বার্লিনের পথে রওনা হলাম সকাল ১০:৩০টায়।
প্রথমেই বিপত্তি শুরু করলো নেভিগেটর । ভুল পথ দেখানো শুরূ করলো আমাদের কি যন্ত্রণা!! পিছন থেকে শান্তিদা বললেন, ''রাজা বন্ধ করেন নেভিগেটর। আমি যেমনে কই ওমনে যান, দেখবেন গেছেনগা বার্লিন'' আমরা সঙ্গে সঙ্গে বললাম, '' না কি বলেন শান্তি দা, নেভিগেটর মাঝে মাঝে আবহাওয়া খারাপ থাকলে একটু সমস্যা করে ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ সময় সহজ পথটা দেখায়''। কিছুক্ষণ পর আমাদের চুপসে দিয়ে নেভিগেটর বললো, ''তার ভুল হয়েছে, এখন গাড়ি ঘুড়াতে হবে''। শান্তিদা বললো, ''দেখছেন- অভিজ্ঞতার একটা দাম আছেনা''।
শুরু হলো বার্লিনের পথে যাত্রা। হাইওয়ে ধরে এগিয়ে চললাম আমরা। জার্মানির হাইওয়ে এককথায় অপূর্ব সুন্দর। মসৃণ পিচ ধালা রাস্তা। হাইওয়েতে প্রতিটি মোড়ে নির্দেশনা দেয়া আছে, কিভাবে সহযে গন্ত্যব্যে পৌছানো যায়।
অনেক নিয়ম কানুন আর ক্যামারায় দিয়ে গাড়ির গতি মাপা হয়। যদি কেউ নির্দিষ্ট গতির বাইরে গাড়ি চালায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিশাল জরিমানা। গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে আশেপাশে অপূর্ব মনোরম দৃশ্য মন কেড়ে নেয় সবার। শুনেছি, জার্মানি হাইওয়ের পরিকল্পনা প্রথম যিনি করেছেন, তার নাম এডল্ফ হিটলার। পরবর্তীতে ইউরোপের প্রতিটি দেশই এডল্ফ হিটলারের এই পরিকল্পনাকে লুফে নিয়ে নিজেদের দেশে তৈরী করেছন একই ধরনের হাইওয়ে।
চলবে........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।