বেহুদা প্যাচাল
বছরের পর বছরের অস্থিরতা, রক্তপাত শেষে অবশেষে ইত্তেফাক ভাগ হলো। গতকাল সন্ধ্যায় হোটেল শেরাটনে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইত্তেফাকের মালিকানা পেলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার সঙ্গে রয়েছেন এক বোন ও তিন ভাগ্নে-ভাগি্ন। ব্যারিস্টার মইনুল হেসেন পাবেন জমিসহ ইত্তেফাক ভবন ও নগদ ১০ কোটি টাকা।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ ইত্তেফাকের ১০ জন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি
জেনারেল ব্যারিস্টার মাহমুদুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর মঞ্জুর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, স্বাক্ষরের পরপরই চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে হস্তান্তর হলো ইত্তেফাকের মালিকানা। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেও দুই ভাই কেউ কারও মুখ দেখেননি। আলাদা-আলাদা কক্ষে চুক্তি সই শেষে প্রথমে নেমে আসেন আইনজীবীরা।
তারপর ব্যারিস্টার মাইনুল হোসেন, সাজু হোসেন ও তার ছেলেরা। এ সময় মইনুল হোসেনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, একটি পারিবারিক সমঝোতা হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের চোখ এড়িয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একই সময়ে অন্য একটি লিফটে শেরাটনের গার্ডেনের দিক দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ইত্তেফাক অফিসে চলে আসেন। সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে প্রফুল্লমনে কথা বলেন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, তার স্ত্রী সাজু হোসেন ছাড়াও দুই ছেলে জাবেদ হোসেন ও আরশাদ হোসেন শেরাটনে উপস্থিত ছিলেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী তাসমিমা হোসেন, ভাগ্নে মহিবুল আহসান শাওন, রেজাউল আহসান ফাগুন ও ভাগি্ন ফারহানা আহসান চৈতি। বোন সুলতানা হোসেন রুবি অসুস্থ থাকায় আইনজীবীর মাধ্যমে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আজ থেকে শেয়ার হস্তান্তর শুরু হবে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পরিবারের কাছে ইত্তেফাকের ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার ছিল। শেয়ার হস্তান্তর শুরুর সময় থেকে ইত্তেফাকের বর্তমান জমিসহ বিল্ডিং দলিল করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে দেওয়ার শর্ত রয়েছে।
গতকালের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে পাঁচ কোটি টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়েছে। বাকি পাঁচ কোটি টাকার চেক জমি দলিলের পর দেওয়া হবে। টাকা বুঝে পাওয়ার পর মইনুল হোসেন প্রিন্টার্স লাইন থেকে তার ও সাজু হোসেনের নাম প্রত্যাহার করে নেবেন। শর্ত অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে পুরো চুক্তি কার্যকর হবে। তিনমাসের মধ্যে ইত্তেফাকের সকল বিভাগ সরানোর জন্য ছয়মাসের সময় দেওয়া হয়েছে।
ইত্তেফাকের তিনটি মেশিনের মধ্যে ফাস্ট ৩০০ এবং ওরিয়ন মেশিনটি পাবেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, গজ মেশিনটি পাবেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
সম্মান ও নিরাপত্তার কথা ভেবে
সরে গেলাম : মইনুল
"৪০ বছর 'যুদ্ধ' করে ইত্তেফাককে টিকিয়ে রেখেছি। আর পারলাম না। তবে আমার মনে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বড় সন্তান হিসেবে আমি আমার বাবার কাছে ইত্তেফাক ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে কী জবাব দেব?" গতকাল রোববার এভাবেই সমকালের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মূলত ইত্তেফাককে দখল করে নিয়েছে।
ওই দিন আমার ছেলে আরশাদ হোসেন অফিসে ছিল। তাকেও তারা আক্রমণ করেছে। ওইদিন তারা চার কোটি টাকা বিতরণ করে ইত্তেফাক তাদের দখলে নেয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে তা বেরিয়ে এসেছে। ' তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বলেন, 'আমি আমার ছেলে ও তার মেয়েকে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলাম।
তাতে সে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে একাধিকবার লিখিত চিঠি দিয়েছি। প্রিন্টার ও পাবলিকেশন্স আইন অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সম্পাদক হতে পারে না। অন্যায়ভাবে হলেও তো মঞ্জু একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ' তিনি বলেন, 'ইত্তেফাকে কয়েকটি খুন হয়েছে।
তাই রক্তাক্ত প্রতিষ্ঠানে না থাকাই ভালো। ইত্তেফাক যেহেতু দখল হয়ে গেছে, তাই আমি সম্মান ও নিরাপত্তার কথা ভেবে আইনগতভাবে এ প্রতিষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়ালাম। ' একটি নতুন পত্রিকা প্রকাশ করার কথা ভাবছেন বলে মইনুল হোসেন ইঙ্গিত দিলেন।
মঞ্জু শেরাটন থেকে সরাসরি ইত্তেফাকে
শেরাটনে চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ইত্তেফাকে যান। নিজ কক্ষে না গিয়ে তিনি সরাসরি চলে যান কর্মচঞ্চল বার্তা কক্ষে।
প্রফুল্ল মঞ্জু বেশ কিছুক্ষণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, ইত্তেফাক আগামীতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলবে, কোনো দল কিংবা সরকারের লেজুড়বৃত্তি করবে না। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হতে তিনি তাদের পরামর্শ দেন। সাংবাদিকদের কেউ কেউ রাজধানীর উপকণ্ঠ কাজলায় ইত্তেফাকের অফিস স্থানান্তর কতটা বাস্তবসম্মত তা আরেকবার ভেবে দেখতে বলেন।
সূত্র : সমকাল, ৩ মে, ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।