আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্ন ভঙ্গের আর্তনাদ



অনেকদিন আগে সকালে একটি দৈনিক পত্রিকায় (যুগান্তর) রাজনীতিবিদ নির্মল সেন এর লেখা পড়েছিলাম- লেখাটি আদমজী জুট মিল এর বন্ধ হওয়ার বিষয়ে। একটি ভাবনা মনে গাঁথল, আদমজী কেবল একটি মিল নয়, একটি পল্লী। এখানে কেবল যে পাট উৎপাদনই হয় তা-নয় এখানে স্কুল আছে যেখানে শ্রমিকদের সন্তানেরা পড়েন। আজ গাণিতিক হিসেব দিয়ে, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বড় অংকেরা ক্ষতির পরিমাণ দেখিয়ে এই পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ করার কারণের পিছনে এই অর্থনৈতিক য়ুক্তিকে যথেষ্ট মনে করে নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অর্থশাস্ত্রে প্রথম পাঠেই একটি শব্দ পড়ানো হয়-other things remain constrained. . অবাক হই বাস্তব প্রয়োগের সময় যে আরও সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে বিবেচনা করতে হয়, এই চিন্তাকে কেন বিবেচনায় আনা হলো না? সম্ভাবনার নতুন দিকগুলোকে হিসেব করা হলো না। দুইটি ছোট কথা বলি। সরকার পরিবেশ বাঁচাতে পলেথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। অতএব, এখন তা-ই চট, কাগজের ব্যাগের ব্যবহার বাড়বে। একসময় পাট আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল।

মাঝে বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা (demnad) কমে যায়, আমাদের দেশেও পলেথিন ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তা-ই শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়াও বাজারের মন্দা পাট শিল্পের ক্ষতির পিছনে কাজ করেছে। আজ পলেথিন নিষিদ্ধ করার শুভ উদ্যোগের কারণে চটের ব্যাগ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে অভ্যন্তর বাজারে পাটের ব্যবহার বাড়বে। অতএব, নতুন করে যখন চাহিদা বাড়ছে তখন যোগানে (supply) র সুযোগ হারানো সহজ অর্থনীতির যুক্তিতে মেনে নেবার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং, ভর্তুকি দিয়ে হলেও এর যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ করে এর উৎপাদন ক্ষমতা (productivity) বৃদ্ধি করা অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য লাভ সর্বোচ্চকরণের (profit maximization) জন্য সমীচীন।

রাতে খবরে দেখলাম, একদল ছাত্রী কাঁদছেন। তারা আদমজী-র বাসিন্দা, এই পল্লীতে বসবাস করছেন। আগামী বছর এস,এস,সি, পরীক্ষা দেবেন। খুব বড় আশা নয়, ছোট ছোট স্বপ্ন দিয়েই হয়তো তারা তাদের আগামীকে বুনেছেন। তাদের শিক্ষা জীবন হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

নিজের স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে, পাট রচনা পাঠের কথা গুলো কানে বাজে -“পাটকে ‘সোনালি আঁশ’ বলা হয়। পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। ” কথাগুলো বিদ্ধ করে। এই পাট শিল্পের বিকাশ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পিছনে যে শ্রমিকেরা খেটেছেন তারা হয়তো কখনই খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না। তবুও তাদের সন্তানেরা একটু লেখাপড়া করেছিলেন আর একটু ভাল আগামী-র আশা।

সে-ই কিশোরী নানা চড়াই উৎড়াই পার করে (সহজেই অনুমান করা যায়, একজন মেয়েকে শিক্ষা জীবন চালাতে কত রকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়) আজ স্বপ্ন ভঙ্গ হতে যাচ্ছে। স্কুলে পড়াবার সময় সামনে বসে থাকা কিশোর-কিশোরীদের নতুন স্বপ্নের কথা বলি, সুন্দর আগামীর কথা বলি। কিশোরীর স্বপ্ন ভঙ্গের আর্তনাদ শুনে মনে হচ্ছে, আসলে যা বলি তার কতটুকুই সত্য?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.