অর্ধ শতাধিক ছাত্রীকে ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ ও কলেজ প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হলে থাকার অভিযোগ এনে কলেজ প্রশাসন এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগ। গত ১২ মার্চ ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মী ও সাধারণ ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা, ভর্তিবাণিজ্য ও টেন্ডার-বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের পরবর্তী ছাত্রীদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। এদিকে ওই ঘটনার পর এ পর্যন্ত কলেজের ভর্তি বাতিল ও বদলের আবেদন করেছে ১৫৯ ছাত্রী।
ইডেন কলেজে পাঁচটি ছাত্রী হল আছে।
এগুলো হলো—রাজিয়া আক্তার হল, জেবুন্নেসা হল, আয়েশা সিদ্দিকা হল, ফজিলাতুন্নেছা হল ও হাসনা হেনা হল। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ছাত্রদলের নেত্রীরা হলে নেই। হলে ডাইনিংয়ের বদলে ক্যান্টিন করার প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি ছাত্রফ্রন্টসহ বাম সংগঠনের নেত্রীদের বের করে দেয় ছাত্রলীগের সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক তানিয়া গ্রুপ।
এছাড়া সাম্প্রতিক ঘটনার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তানিয়া ভিন্নমত পোষণকারী কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক ছাত্রীকে গত কয়েকদিনে হল থেকে বের করে দিয়েছেন। কয়েকজন ছাত্রীকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কলেজে এ অচলাবস্থা ও সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন সহায়তা করছেন এমন অভিযোগও করেছেন নির্যাতিতরা। ইডেন কলেজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় বুধবার মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন কলেজ সভাপতি নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক তানিয়া।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রাবণী দাস, ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রাজিয়া চৌধুরী তৃণা, ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রোকেয়া চৌধুরী তিসা, বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের রোকেয়া চৌধুরী মুক্তা, ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নাছিমা খাতুন রুমকী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইয়াসমিন, বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী রেশমা আক্তার, সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার, একই বিভাগের ছাত্রী তনুশ্রী দাস, গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তানজিলা নারগিস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নওরিতা, বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আঁখি আক্তার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী জুঁই আক্তার, বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লাবণী সরকার, রাশবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী জেসমিন খানম মিশু, ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুলতানা আক্তার, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা, ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তাসলিমা আক্তার, বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তানজিলা নওরিন, ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিনি, ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রুমকি আক্তার, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সুমী আক্তার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী ইসমত আরা হ্যাপী, সমাজকল্যাণ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া আক্তার, সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তনুরাধা চাকমাসহ আরও অনেককে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
এসব ছাত্রীর অভিযোগ, নিঝুম-তানিয়ার বিভিন্ন প্রস্তাব না মানায় তাদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম বলেন, আমি কাউকেই হল থেকে বের করে দেইনি।
সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়া সাংবাদিকদের বলেন, হলে থাকার বৈধতা না থাকার কারণে কিছুসংখ্যক ছাত্রীকে প্রশাসন বের করে দিয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আপনারও হলে থাকার বৈধতা নেই, তারপরও থাকছেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এধারা চালু আছে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।
বহিষ্কৃত নেত্রী চম্পা খাতুন ও কানিজা ফাতেমা বলেন, অনেক সাধারণ মেয়েকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। হল থেকে বের হতে রাজি না হওয়ায় কয়েকজনকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেককে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, অর্ধ শতাধিক ছাত্রী হল থেকে বের করে দেয়ার তথ্য আমার জানা নেই।
তবে বহিষ্কৃত ৪/৫ ছাত্রলীগ নেত্রীর ছাত্রত্ব না থাকায় তাদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।