শেষ কবিতা লেখা হয়ে গেছে
এক অস্থির জীবন পেয়েছিলাম। রাক্ষসজীবন! শুনলে, যে কেউ ভাববে_ এটা একটা বাড়াবাড়ি। কিন্তু ইন্টারনালি ট্রুথ_ এটা বাড়াবাড়ি নয়। কী সেই অস্থির, রাক্ষস জীবনের মতি, কী তার ধর্ম? রাক্ষস কবিতা লিখত। কী আশ্চর্য! রাক্ষসের কবিতা ছাপাও হত।
কাগজে, রাক্ষসের কবিতা পড়ে কেউ কেউ অবিশ্বাস্য প্রশংসা করত। কিন্তু রাক্ষস খুশি হত না।
তার মানে, রাক্ষস হয়তো কবি ছিল। হয়তো কিশোর বয়সে কবিত্বভাবই ভর করার পর সে এক মানুষের বাচ্চা থেকে একভোরে রাক্ষস হয়ে গিয়েছিল। তারপর যতবারই বসন্তকাল এসেছে, রাক্ষস আরো বেশি রোমান্টিক হয়ে উঠেছে, রাক্ষস আরো কবি হয়ে উঠেছে।
সেই রাক্ষসের নিক নেম টোকন ঠাকুর।
রাক্ষস টোকন ঠাকুর গত ২২ ডিসেম্বর সনাতন মেলায় যাবার আগে তার জীবনের শেষ কবিতাটি লিখে রেখেছে। কবিতাটির শিরোনাম_ একদিন কবি ছিলাম। তার মানে সে এখন কবি নয়, মানে রাক্ষস নয়। তবে কি সে মনুষ্যে ফিরল? মোটেও না।
একবার যে রাক্ষস হয়, সে কি আর মানুষ হতে পারে? টোকন ঠাকুর তার শেষ কবিতায় লিখেছে_ ওয়ানস আপন এ টাইম আই ওয়াজ এ পোয়েট...
সে যাই হোক, শেষ কবিতাটি লেখার পরে তো আর কবিতা লেখা যায় না, তাই লিখিও না। আজ কতদিন হল, সেই বাইশ ডিসেম্বর আমি শেষ কবিতাটি লিখেছিলাম
আর আমি কবিতা লিখব না। আর আমি বংশাই নদীতে জোছনা নামলে আমাকে
ভাসাব না। আর আমি আমার প্রাণের কথাতে শব্দ সাজাব না। আর আমি এই
ডিজিটাল দিনেও এনালগ থাকব না।
আর আমি বলব না_ পৃথিবীর সব ট্রাক সব লরি ফায়ার সার্ভিসের লালগাড়ি হয়ে ছুটে যাক দিকে দিকে। আর আমি আগুনের মধ্যে শুয়ে ভাবব না_ যাকে অমর ভালোবাসা যায়, সেই তো প্রকৃত ফায়ার সার্ভিসের লালগাড়ি
একটি বাংলা শব্দের জন্যে আমি সারারাত বসে থাকব না। কারণ, অনেকদিন আগেই আমার শেষ কবিতাটি লেখা হয়ে গেছে
এখন, সেই অপাপবিদ্ধ রাক্ষসজীবন থেকে বেরিয়ে, পাপবিদ্ধ, অসহায় ও ভণ্ড মানুষের দিকে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু একবার যে রাক্ষস হয়, সে কি আর মানুষ হতে পারে? চন্দ্রমোহ ত্যাগ করতে পারে?
....................................
নিঃশ্বাসের শব্দ
চিত্রনাট্য লিখতে লিখতে তোমার কথা মনে আসে
আমার সর্বশেষ চিত্রনাট্য - নিঃশ্বাসের শব্দ
অথচ প্রতিটি চিত্রনাট্যই পারতপে আলাদা বিষয়ের, আলাদা চরিত্রের। মনে হয়, বিপত্মীকের বালিশের পাশে কোনো না কোনোভাবে ছায়াবউ ঘুমিয়ে থাকে।
এভাবে, প্রত্যেকটি চিত্রনাট্যেই তোমার উপস্থিত আমার জন্য হুমকিস্বরূপ, রচনাকে বৈচিত্রহীন করে তুলতে পারে।
তোমার অস্বীকারের সামর্থ আমার নেই, হে পন্নগী
তুমি আঁকাবাঁকা আমার পায়ের নিচে তোমার পথ হয়ে থাকা... শীতের মাঠের দিকে তুমি শর্ষেলাবণ্যমাখা তুমি প্রতিদিনই সর্পিণী বলে তোমার কৃতিত্ব ফণায় ছোবলে ছোবলে, বিষে
লেখালেখি নামেমাত্র ঝানু ওঝা হওয়ায় নিহিত উদ্দেশ্য, ছত্রিশের
আগে ও পরে
...................................................
একটি বই পড়েছিলাম- মরণের আগে ও পরে
তাহলে কি মৃত্যু মধ্যবর্তী এক ফুলস্টপ মুহূর্তমাত্র?
আর একটা বই আমি ফুটপাথ থেকে কিনলাম
এবং এই বইটার নাম শুনলেই মনটা কেমন করে-
মিলনের আগে ও পরে
তবে কি বিস্মরণে উধাও মিলিত-সময়?
আমি সদা ফেরি করি মূর্ত-বিমূর্ত।
আমার পাঁজরে বহু শীত জমে গেছে।
মনে হচ্ছে আমিও একটা বই লিখব; লিখব
নজিরবিহীন কুয়াশাহীন শিশিরটিশির কিচ্ছু নেই
কিন্তু বইয়ের নাম রাখব- শীতের আগে ও পরে
যার মধ্যে পৌঁষমাঘ কিছুই থাকবে না
কিন্তু আমি শীত শীত বলে হাঁক দিয়ে যাব...
পুরো শীতকাল শুধু একটি শব্দ হয়েই থাকবে?
সান্ধ্যভাষার ব্যসন
..................................
সনেট প্রকল্প মার খেয়ে গেল। পয়ার প্রকল্প
ফেল করে গেছে।
তাই কি উত্তর-আধুনিক শাসন
চলছে চর্যা হইতে অভ্যাগত বাঙলা কবিতায়?
ধুনোট প্রকল্প শিরোপা লভিছে, বুনট হাওয়ায়
উদারা-মুদারা-তারা, এ কি মহাফাল্গুন রজনী?
পৃথিবীর ছয়শো কোটি মানুষের মধ্যে সদানন্দ
আমি মণ্টু; সর্বোত্তম দানাদার খেতে ভালোবাসি।
দানা দানা চিনি, ঝাঁ ঝাঁ ঝিঁনি ঝিঁনি- কবিতা না গল্প
নাকি রূপচাঁদা উপন্যাস? সান্ধ্যভাষায় ব্যসন
লিখি অগ্নি-কর্মশালা, শেষমেশ বনপোড়া ছাই...
মৃগয়ারা আমার পাঠিকা, আলেখ্য সান্ধভাষায়
পাঁচজনা পাঁচ মানে পায়; অ-তে অপার, অশনি
প-তে পুষ্প, প-তে পাথর... বস্তুর ভেতরই দ্বন্দ্ব
দ্বন্দ্ব দেখতে কেমন? আমি কি দ্বন্দ্ব দেখতেই আসি?
গূঢ়ায়তনিক কবিতা
....................................................
সাধু ভাষায় রচিত এই স্বপ্ন:
ভীষণ দুপুর ছিল, চলিয়া যাইতেছে
দুপুরের মধ্যে দাঁড়াইয়া দুপুরের ঘুম পাইতেছে
কয়েকটা উড়োছবি ছাই হইতেছে, পুড়িয়া...
অবশ্যই ঘুঘু ডাকিতেছে ঘুঘুর আব খুঁড়িয়া
দাঁড়ানো লোকটি, কবি কবি ভাব, কিন্তু অভাব, সে তাই ভাতের প্রভাব
হইতে দূরে রহিয়া চাহিল শরাব
সাধু ভাষায় রচিত এই কল্পনা:
আমি কল্য মনের শল্য মিটাইতে তোমা-রজনীতে
চলিত ভাষায় কুঁচকে যাব মাঘনিশিথের শীতে;
তারপর হয়তো মৌখিক ভাষাতেই ফিরে আসব। হঠাৎ মনে পড়বে
কী মনে পড়বে? মনে যা পড়বে সেটা করিব ভাষায়- ‘সর্বস্বের লোভে
আজ সে সমুদ্রকূলে, জোছনায়, নদীর সঙ্গে শোবে’
তারপর নির্বাক বালির চরে
ঘুমায়ে পড়িব না, ঘুমোবার ভান করে, আপন স্নেহের আদরে
কিছুণ শুয়ে ফের সাধুভাষায় স্বপ্ন দেখিব, কল্পনা করিব-
আবার এক নির্জন নদীতে নামিয়া ঢেউয়ের উপর ফেনাকে ধরিব
ছন্দের বিরুদ্ধে
.....................................
ছন্দে কিছু লেখার উপায় নেই
ভাবনাগুলো দ্বন্দ্ব ভালোবাসে
ছন্দ মেনে লিখতে যদি যাই
বিষয়বস্তুর আভা কমে আসে_
বিষয়বস্তু হয়ত পাহাড়চূড়ো
ছন্দে ফেলে লিখতে গেলেই টিলা
হয়ত ছিল মনটা কষে বাঁধা
ছন্দ এসে টান করে দেয় ঢিলা_
ছন্দ ভীষণ সংকোচনও করে
বাক্যরা তাই ছোটো ছোটো হয়
শাদা পৃষ্ঠার স্বাধীনতা ভেঙে
সতর্ক সে, ভেঙে যাবার ভয়_
ছন্দ যদি ভাঙে, ছন্দ মন!
এরপরেও কি ছন্দ প্রয়োজন?
ছন্দ যদি দ্বন্দ্বে মাজুল হয়
ছন্দ ছাড়াই বলব, করি পণ_
ডাহুক যখন ডাক দিল রে, শুনে
লেখামাত্রই ছন্দ-কবলিত
খাতার ডাহুক লেখার পরেই চড়ুই
কিচিরমিচির ভাষায় প্রকাশিত_
চিত্রা যখন ঢেউ দেখিয়ে যায়
ছন্দ তখন আমায় শাসন করে_
চিত্রা তখন আগুন, আভা, আঁচে
ছন্দ মেনে পোকারা পুড়ে মরে_
পোকা, আমার আগুন মনে ধরে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।