“নিতু(ছদ্ম নাম) শিল্পী হওয়ার আশায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হতে এসেছিলেন। চিত্রকলায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করে নিজেকে খ্যাতিমান চিত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল তার চোখে-মুখে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম দশ জনের মধ্যেও সে ছিল। গত রোববার মাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাবির চারুকলায় এসেছিলেন ভাইভা দিতে। কিন্তু ভাইভা শেষে ডিন অফিস থেকে বের হবার সময় সংগঠিত অবিশ্বাস্য ঘটনা পাল্টে দেয় তার সব হিসাব-নিকাশ।
কয়েকজন যুবক(ছাত্র)নিতুর সামনে এসে পথ আগলে দাড়ায়। লোলুপ দৃষ্টি তাদের। ছাত্ররা ৫০০ টাকা চাদা দাবী করে বলে, চারুকলায় ভর্তি হতে হলে সিনিয়রদের এভাবে টাকা দেয়া লাগে। ৫০০ টাকা সাথে নেই নিতুর এমন জবাবে তারা ক্ষিপ্ত হয়। তখন তারা বলে টাকা না দিলে তাদের সবাইকে নাচ দেখাতে হবে।
তবে নাচের শর্ত আছে,পাজামা হাটুর উপর উঠিয়ে ব্যাঙের মতো নৃত্য করতে হবে। এতে অস্বীকৃতি জানালে তারা নিতুর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন নিতুর চল্লিশোর্ধ্ব মা। নিতু দৌড়ে এল মায়ের কাছে। মা তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, চল,তোকে এখানে আর পড়তে হবেনা”গত সতের ফেব্রুয়ারীর নয়া দিগন্তের একটি খবর ছিল এরকম।
১৬ ফেব্রুয়ারী আমার দেশ পত্রিকায় ছাপা হয় “চারুকলার শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরন করেন। তিনি বলেন,তোরা কারা,এখানে কেন আসছিস?চারুকলায় সাংবাদিক নিষিদ্ধ। র্যাগিং দেয়া চারুকলার ঐতিহ্য”
ঘটনার সূত্রপাত গত পনের ফেব্রুয়ারী। চারুকলার ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীরা ভাইভা শেষে বের হবার পর পরই চারুকলার শিক্ষক খ্যাতিমান(!) চিত্র শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য(প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট),রফিকুন নবীর সহায়তায় বখাটে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের কাছে চাদা দাবী করে এবং উলঙ্গ করানোর চেষ্টা করে। চারুকলায় এতদিন তাহলে এই হচ্ছে?খবর পেয়ে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা এগিয়ে আসলে চাদাবাজ,অশ্লীল ছাত্ররা তাদের উপর হামলা চালায়।
অধ্যাপক শিশির সাহেব এসবকে তাদের ঐতিহ্য বলেছেন অপরদিকে র’নবী হামলার শিকার সাংবাদিকদের বহিরাগত বলেছেন। বলে রাখা ভালো এরা নীল দলের শিক্ষক।
এদিকে ইত্তেফাক জানায় হামলার প্রতিবাদে ঢাবির সাংবাদিকরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা অনুষদের শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারনসহ হামলাকারী ছাত্রদের স্থায়ীভাবে বহিস্কার,আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা,ক্যামেরা,মোবাইল,মানিব্যাগসহ মালামাল ফেরত দেয়ার দাবি জানানো হয়।
শিশির ভট্টাচার্যের চাকরিদাতা প্রথম আলো গুরুত্বহীন ভাবে ভেতরের পৃষ্ঠায় রিপোর্টটি ছাপে যার শিরোণাম “শিশির ভট্টাচার্যকে লাঞ্ছিত করায় উত্তেজনা” আশা করি তাদের রিপোর্টের বাকী কথা এখানে উল্লেখ করে পাঠকদের উত্তেজনা বাড়াবোনা।
এবার র্যাগ সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশে আগত পশ্চিমা পয়সাওয়ালাদের পরিত্যক্ত ভালোবাসা দিবসের মতো অন্যান্য অপসংস্কৃতির ন্যায়RAG(র্যাগ)ও একটি ভয়াবহ ও অশ্লীল সংস্কৃতি। বরাবরের মতো এ অপসংস্কৃতির উৎপাদনকারীও নি:সন্দেহে পশ্চিমা পুজিবাদী-নগ্নবাদী সম্প্রদায়। আর বাংলাদেশে এর রিপ্রেজেনন্টেটিভ হলো ইউনিভার্সিটির বখাটে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা।
র্যাগ-বান্ধব কিছু মিডিয়া ব্যাতীত বাদবাকী অধিকাংশ পত্র-পত্রিকায় র্যাগ সংস্কৃতির ইতিহাস আমরা জেনেছি।
এও জেনেছি , সংস্কৃতির নামে নবীন-বুড়ো ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শারীরিক,মানসিক এবং যৌন নির্যাতন তথা অশ্লীলতার বিস্তার ঘটানোই এর লক্ষ্য।
প্রিয় পাঠক! এ কাজগুলি কোন গুন্ডা,বদমাস,মৌলবাদী,চাষা-ভূষারা করেন না। করেন আমাদের অতি আধুনিক ,সংশয়বাদী ভার্সিটির মেধাবী তরুন-তরুনীরা। এই তাদের শিক্ষার দৌড় ও ব্যবহার। সচেতন পাঠকরা নিশ্চয় ভুলে যাননি,কিছুদিন আগে ঢাকা ভার্সিটির দুজন সুশ্রী চেহারার নেশাখোর হেরোইন ব্যবসায়ী-ছাত্র গ্রেফতার হয়েছে।
আচ্ছা ভার্সিটির বন্ধের দাবী জানালে কেমন হয়!
পাঠকরা আমার এই আজগুবি প্রস্তাবে অবাক হচ্ছেন? কিন্তু নির্লজ্জ্বের মতো, গুটিকয়েক ছাত্রের কান্ড দেখে যারা ইসলাম শিক্ষা কেন্দ্র তথা মাদ্রাসা বন্ধের দাবী জানায়,তারা কতটা মূর্খ?বলা বাহুল্য এই সব মূর্খেরা তথা ধূর্ত সুশীলেরাই আবার র্যাগ-বান্ধব আজব প্রাণী। র্যাগ অপসংস্কৃতির নেপথ্যের কলকাঠি নাড়ে এরাই। এরাই পশ্চিমাদের উচ্ছিষ্ট ভোগী,এরাই পশ্চিমা খ্রিস্টবাদী সমাজের ফেলে দেওয়া থিওরী,ভাষা-বিবৃতি,পোশাক-আশাক,চালচলন,সংস্কৃতি ধারন করে ধণ্য হয়। আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারী তৈরীর পাদপীঠ আজ যেন এদেরই অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। এরা কখনোই জ্ঞানের জন্য,জানা ও মানার জন্য পড়েনা,এরা পড়ে শুধু টাকা,বাড়ী ও গাড়ী,খ্যাতি ও নারীর জন্য।
এরা জীবনটাকে গড়ে নেয় এক নষ্ট কাব্যে। আমাদের ভার্সিটি, মিডিয়া,সাহিত্য,বিজ্ঞাপন আজ এদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রনে।
প্রিয় পাঠক! অনেকেরই ভুলে যাওয়ার কথা নয়,তবু একটু স্মরন করিয়ে দিচ্ছি ড: আনোয়ারুল্লা চৌধুরীর কথা। হ্যা,আমি বিএনপি ক্ষমতাসীন হবার পরে ঢাবির নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি আনোয়ারুল্লাহ স্যারের কথা বলছি। তথাকথিত প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীদের অব্যাহত আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে তিনি অবশেষে পদত্যাগ করেন।
আন্দোলনের সেই মানব-বন্ধন,পোস্টার,গান,নৃত্য,মায়াকান্না-হাসির মোহনীয়তাকে জমিয়ে তুলেছিল একটি সুশীল পত্রিকা ও দুনীর্তিবাজ একুশে টিভি। বিএনপি বিরোধী মিডিয়া চোখ বন্ধ গাধা মত সে আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢালে।
এবার আন্দোলনের একদম শুরুর কথা একটু ভাবি। কে না জানে,ঢাবির ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বখাটে অংশ সবচেয়ে আধুনিক স্বাধীন যৌন চর্চা করে। তাও ভার্সিটির অভ্যন্তরের বিভিন্ন অলি-গলি,ফুটপাত,টিএসসি,গাছতলায়,ফুলার রোড প্রভৃতিতে।
অত্র স্থানগুলিতে স্থাপিত লাইটগুলো অজ্ঞাত কারনে বছরের পর বছর সন্ধ্যার পর হতে বন্ধ থাকত। জনাব আনোয়ারুল্লা স্যার এ নোংরামি বন্ধের ক্ষুদ্র উদ্যোগ নেন এবং রাত্রে নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্রীদের হলে ফেরা নিশ্চিন্ত করেন। তাতে যৌন পূজারীদের মাথায় হাত পড়ে। আর যায় কোথায়,ছাত্র মৈত্রী নামক তথাকথিত ছাত্র সংগঠনের বরাত দিয়ে সুশীল পত্রিকাগুলো খবর ছাপে ভিসির বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপের অজুহাতে। ঐ সেই আন্দোলনের শুরু।
রাতের অন্ধকারের গোপন,নোংরা,অবৈধ অভিসারই সুশীলদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। তাইতো তারা র্যাগ নামক অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে মূক বধির,অশ্লীলতাবিহীন শিক্ষা কেন্দ্র ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
র্যাগ তথা এরুপ অশ্লীল অপসংস্কৃতির নেপথ্য ধারক বাহকদের বিরুদ্ধে সত্য-সুন্দর পথের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যায়ের কাছে কিছুতেই মাথা নত করা যাবেনা। ২৩/০২/২০০৯
Email:
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।