"ব্লগকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই"...গরীব স্ক্রীপ্ট রাইটার
গত ২৮ ও ২৯ তারিখ হয়ে গেল আমাদের খুলনা ইউনিভার্সিটির‘০৪ব্যাচের র্যাগ ডে। প্রথম দিন একরাশ আতঙ্ক নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মত র্যাগ ডে প্রথম দিন গেলাম। মেইনগেটেই রিকশা থামিয়ে দিল। ভয়ে ভয়ে ক্যাফেটেরিয়ার পাশ দিয়ে এক নং এ্যাকাডেমিক বিল্ডিং (আমাদের বিল্ডিং) এ পৌছালাম কোন রং ছাড়াই তারপর খইতলায় যাবার পথে আমার সাথে থাকা সখীকে অন্য ডিসিপ্লিনের ২টা ছেলে হিন্দি সিরিয়ালের শাশুড়ির মত করে রং মারলো আমার মাথায় শুকনো রং। এরপর খইতলায় পৌছাবার পর ভাবলাম আর বোধহয় কেউ রং দিবে না।
ক্লাসের এক ছেলে এসে দিল প্লাসিকের বোতলে গোলানো রং। আমি তাকে মারতে গেলে দেখলাম রং সব শেষ তখন আরেক বন্ধু ব্লগার হীরক রাজা আমাকে ড্রেনের পানি যোগাড় করে দিল রং এর বদলে। আমি শেষ পর্যন্ত তাকে অবশ্য ড্রেনের পানি মেরে আমি প্রতিশোধ পূরণ করলাম এবং হীরক রাজা তার কুকর্মের জন্য নিজেও ড্রেনের পানি হতে রক্ষা পায় নি
এরপর পিচ্চি পোলাপাইনের নাটক! সেকি ভাব! এক পিচ্চি দেখি ডিজাইন করে প্যান্ট কেটে এনেছে আর যেহেতু সবারই টিশার্ট ছিড়ে ফেলা হয়েছে তাই সে তার ছেড়া টিশার্ট গলায় বেধে উদ্ভটভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এরপর পিচ্চিরা নিজেদের পিঠে সবুজ বস্তায় মারা লিকুইড রং মারতে লাগলো। আমাদের এক বন্ধু কমান্ডো সাজতে ২গালে সবুজ রংটা মারার পর যখন শুনলো এই রং সহজে উঠবে না, ওর মুখের এক্সপ্রেশন ছিল দেখার মত
এরপর সবাই চলে গেল বাসায় বিকালের প্রোগ্রাম দেখতে আসার ওয়াদা করে।
আমি আর আরেক বান্ধবী গেলাম আমার জানী সখীর বাসায়। ওখানে যাবার পথে লোকজন আমাদের দেখে হাসাহাসি শুরু করলো, এক লোক সানগ্লাস পরে রাস্তাদিয়ে হেটে যাচ্ছিল, সে হালকা অন্যরকম কিছু একটা বোধ করায় সানগ্লাস খুলে দেখলো তার চোখ ঠিকাছে কিনা, কিছু বাচ্চা পাগল/ভূত ভেবে চিৎকার করতে লাগলো, তখন আমার এক সখী বাচ্চাদের সাথে কলহে লিপ্ত হল নিলর্জ্ঝের মত।
বিকালে পৌছে দেখলাম ইসিই ডিসিপ্লিনের অশ্লীল নাটক এ যুগের সিরাজউদ্দৌলা টাইপ কিছু একটা নাম। এরপর কিছু ফালতু ছেলেরা গান বাজনা শুরু করলো যারা সুর বা লিরিকের ধারে কাছ দিয়ে যাচ্ছিল না। তবে মেয়েরা ৩জন গান গেয়ে মুগ্ধ করেছে।
ভার্সিটিতে এতদিন নাদান ছাত্রী হিসেবে তেমন কাউকে না চিনলেও ওইদিন ভার্সিটির খ্যাতনামা সুন্দরীদের দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছিলাম। এক মেয়ে পাঞ্জাবীওয়ালা গান গেয়েছিল, তারপর থেকে গানটার ফ্যান আমি
এরপর সেন্ট্রাল ভাইভা আরেকটি অশ্লীল নাটক এবং সবশেষে আমার ভার্সিটির ছেলেমেয়ে হিসেবে মান রাখতে একটা বাংলা সিনেমা এবং সেটা অশ্লীল ছিল না পরে ভ্যানভ্যান করে অনেক বেসুরা গান হল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত
পরেরদিন ফর্মাল প্রোগ্রামে এ্যাটেন্ড না করায় এক সখীর কাছে অকথ্য গালিগালাজ শুনলাম এরপর আমরা একসাথে লাঞ্চ করে খইতলায় বসে থাকলাম। এরপর প্রথমে বর্তমানের গান শুরু হল। বর্তমান ব্যান্ডটাকে দেখে মনে পড়ল এরা আমাদের ডিসিপ্লিনের কনসার্টে আসতো বাজাতে কোনদিন এদের গাইতে দেয়া হয় নাই আজ তেনারা ডিরকস্টার নাকি!! এরা এসে মেজাজ খারাপ করা সংগীত পরিবেশন করতে লাগলো, আমাদের ডিসিপ্লিনের পোলাপান সামনের দিকে দাড়িয়ে ভূয়া ভূয়া এবং ওয়াক থু বলে চিল্লাতে শুরু করলো। বর্তমান ব্যান্ড দলের ব্যান্ড তখনই বেজে গেল এরপর উপস্থাপক তরু যে এতক্ষণ ফর্ম্যাল সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল হঠাৎ দেখি বিএনসিসির ড্রেস পরে হাজির।
দেখে মনে হচ্ছিল নেভি সিগারেটের এ্যাড করতে এসেছে। তারপর সে যা করলো তা আরো হাস্যকর..তার বক্তব্য ছিল এরকম...”তোমাদের বারবার সাবধান করছি তোমরা ভদ্রভাবে থাকো..ফেন্সের যেন কোন ক্ষতি না হয়..কালকে আমাদের ভার্সিটির মাঠে আসবেন...তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান...কি নাম যেন....ফকরুদ্দীন...কাজেই ফেন্সে হাত দিবে না....
অফিসারের ছবি
আমাদের পোলাপানরা এবার তরুর বক্তব্য শুনে আমারো পরান যাহা চায়..সহ বর্তমান সময়ের কিছু জনপ্রিয়গান বিশেষ করে মিলার গান ধরলো..তরু নাজেহাল হয়ে স্টেজ থেকে নেমে গেল।
এরপর বহুল প্রতিক্ষীত আর্টসেল আসলো এবং তাদের সংগীত পরিবেশন শুরু করলো...কিন্তু কনসার্ট তেমন জমলো না সাউন্ডএর কি যেন একটা প্রবলেম ছিল। তারপরও মেয়েরা অনেক লাফালাফি করলো..মজা পেলাম আমার ২ বান্ধবীর অবস্থা দেখে...একটা কোন কারণ ছাড়াই বাচ্চাদের মত লাফাচ্ছিল আরেকজন মুড অফ ভাব নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। আমি পিছনে যেয়ে বসে পড়লাম তখন সে (যার মুড অফ) আমার কাছে ব্যাগ বস্তা দিয়ে ধুড়ুমধাড়াম লাফ দেয়া শুরু করলো….
আমাদের ১১০১ ক ক্লাসরুম আছে যাকে আমরা বিএ ডিসিপ্লিনের মনে হয় সবাই ভালবাসি সেখানে যেয়ে পিছনের বেঞ্চে যেয়ে বসতে মনে চায়..ক্লাসে গান বাজিয়ে নাটক দেখে অফ পিরিয়ড কাটাতে।
কিন্তু সে অধিকার হারিয়েছি গত কয়েকমাস ...এখন সবকিছুতেই আমাদের অধিকার নেই....অনেকদিন পর যখন আমাদের একটা প্রোগ্রাম হলো অনেক ভাল লেগেছে....যদিও আমাদের ডিসিপ্লিনের সবকিছুই আমরা অনেক আনন্দ ফূর্তিতে করেছি....আর ভার্সিটির প্রোগ্রামে বরাবরের মতই আমাদের ডিসিপ্লিনের উপস্থিতি কম। এভাবেই শেষ হল র্যাআগ ডে আমাদের ’০৪ ব্যাচের। অনেকদিন পর কিছু বন্ধুবান্ধবদের সাথে ২টা দিন কাটিয়ে অনেক ভাল লেগেছে যদিও যারা আসে নি তাদের কথা ভেবে নিজেদের অনেকটা অসহায়ই লেগেছে যখন দেখেছি বাকি সব ডিসিপ্লিনের সবাই উপস্থিত আর আমরা ১০/১২জন মাত্র। তারপরও যারা আসে নি তারা কাজে কামে ব্যস্ত আছে...ভাল আছে এটা ভেবেই ভাল লেগেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।