পিনপতন নিস্তধ্বতা
বেশিদিন আগের কথা নয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং নিয়ে গুটিকতক ‘বোন দরদী ভাই’, ‘অতিথি লেখক’ (মান না মান, ম্যায় তেরা মেহমান টাইপ), ‘কবি+ব্লগার’ (নিজ দায়িত্বে),’ঘাস লতাপাতা খেয়ে বড় হওয়া এডমিন’ (ফেসবুক পেজ) এবং ‘চটিবাদী’ সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক গং যে মরা কান্নাটা কানলেন, তাতে টিস্যুর বাজারে বিশাল ইস্যু তৈরি হয়েছিলো।
ছিচকাদুনে এই সব ‘মাথা মোটা, বুদ্ধি চিকন’ দের জন্য মহা দু:সংবাদ অপেক্ষা করছে। এবার মুশফিকুর রহিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬তম ব্যাচের র্যাগ রাজা নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
এখন নিশ্চয়ই তারা ভাবছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের মনে হয় স্টেডিয়ামে নিয়ে মুশফিক একাই র্যাগ দিবেন। ‘প্রথম দিন ধোবেন, পরদিন কষা হবে’।
ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ থেকে নাকি এই র্যাগ অনুষ্ঠান শুরু হবে! ছি ছি, কি লজ্জা! শেষ পর্যন্ত মুশফিক?
একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি একদল হতাশাবাদীর বেশ আক্ষেপ। একটা কিছু পাইলেই হইলো, দৌড়া চিলের পিছে। আর ইস্যু যদি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, তাহলে তো সেটা ন্যাশনাল ইস্যু।
তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, শেষ পর্যন্ত মুশফিক র্যাগ রাজা হলো, তার কাছে তো মেয়ে বিয়ে দেয়া যাবে না।
সে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, অতএব বাংলাদেশের খেলা আর দেখা যাবেনা। চটিবাদী সংবাদপত্রে মুশফিকের প্রতি ‘খোলা’ চিঠি (চটিবাজরা মনে হয় খুলে রাখতেই পছন্দ করেন) লিখবেন।
তারপর আমরা যারা জাহাঙ্গীরনগরে পড়েছি বা পড়ছি আমরা বিরক্ত হয়ে মাঠে নামবো। আমরা বুঝাবো র্যাগ আর র্যাগিংয়ের পার্থক্য।
র্যাগ উৎসব হলো শিক্ষা সমাপনী উৎসব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি ব্যাচই তাদের শিক্ষাজীবন শেষে সব ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা মিলে উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন এবং ক্যাম্পাসকে বিদায় জানায়। সারা বছরে এটাই ক্যাম্পাসের সবচে বড় উৎসব। আর ভিন্ন আমেজ আনার জন্য র্যাগে একজন রাজা এবং একজন রানী থাকেন যারা র্যাগার ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হন।
আর র্যাগিং হলো সিনিয়র-জুনিয়রদের ইন্টেমেসি বাড়ানোর একটা প্রক্রিয়া। এটা সারা বিশ্বেই প্রচলিত।
র্যাগিংয়ের নামে মানসিক, শারীরিক নিপীড়ণ করা হয় সত্য। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরে করা হয় এটা আমি বিশ্বাস করিনা। সমস্যাটা আসলে দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের যারা ভুল করে জাহাঙ্গীরনগরে পড়তে আসে, এরা না পারে র্যাগ দিতে, না পারে নিতে।
এদের জন্য আমরা যারা র্যাগ খেয়ে এবং দিয়ে ক্যাম্পাসে বড় হয়েছি তাদের বারবার একটা ‘মিসকনসেপ্ট’ এর মোকাবেলা করতে হয়। বলে বলে আমরা মুখে ফেনা তুললে কি হবে, যাদের চিলের পিছে দৌড়ানোর অভ্যাস, তাদের বলে লাভ আছে?
বরং তাদের কান কেটে নেয়াই ভালো, যে জিনিস কাজে লাগেনা সেটা রেখে কি লাভ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।