যে কোন লড়াই শেষ পর্যন্ত লড়তে পছন্দ করি।
সন্তু লারমার সাথে সাক্ষাৎকার
শরীফ এ. কাফী
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, যিনি সন্তু লারমা নামে সমধিক পরিচিত, এর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় তাঁর রাঙ্গামাটির বাস ভবনে। সাক্ষাৎকারে দেশের পার্বত্য তিনটি জেলায় শান্তি স্থাপন এবং শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় তিনটি কাজের কথা তিনি উল্লেখ করনে।
তিনি বলেন, প্রথম কাজটি হ’ল ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সকল শর্ত বিবেচনায় রেখে চুক্তিটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা। তাঁর মতে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগ সরকারের কেবল মাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, এটি বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্বও বটে।
দ্বিতীয় কাজটি হ’ল পার্বত্য জনগোষ্ঠির ভূমি অধিকার ও ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়গুলি দ্রুত সমাধান করা। এ জন্য সমতলের বাঙ্গালীদের এন নতুন নতুন বসতি স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং পার্বত্য জেলা সমূহে ভূমি জরীপের নামে দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের নামে জমি রেকর্ড করে তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠার যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চক্রান্ত শুরু হয়েছে তাও অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে(কেননা এই ধরণের উদ্যোগ পার্বত্য জেলাগুলিতে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়বে যা নতুন করে সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিতে পারে)।
তাঁর পরামর্থ হ’ল, পার্বত্য জেলা গুলিতে ভূমির মালিকানা জরিপের পূর্বে পার্বত্য আদিবাসীদের জমিগুলি চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে অনিয়ম এবং জালিয়াতির মাধ্যমে পার্বত্য আদিবাসীদের মালিকানাধীন এবং/বা ভোগ-দখলাধীন জমি অন্য কেউ রেকর্ড করে নিতে না পারে।
তিন নম্বর কাজ হ’ল, সরকারের দিক থেকে পার্বত্য চুক্তিটির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী পার্বত্য পক্ষকে অস্থায় রাখা।
কেননা, চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্যজেলায় সকল মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম পার্বত্য অঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শক্রমে বাস্তবায়িত হওয়া উচিৎ। তিনি মনে করেন এই শর্তটি পালিত হচ্ছে না। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর রাঙ্গামটি সফরের কথা পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে অবহিত করা হয়নি। তিনি মনে করেন, পার্বত্য জেলাসমূহে বিদ্যমান সমস্যাদির সমাধান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চুক্তিকে কাজে লাগাতে হলে অবিলম্বে পার্বত্য জেলাসমূহে একটি সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে এবং জেলা পরিষদের নির্বচন অনুষ্ঠান করে পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরও মনে করেন, পার্বত্য জেলাসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আইন-শ্রঙ্খলা রক্ষায় একটি মিশ্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, যেখানে ৫০% করে পাহাড়ী ও বাঙ্গালী পুলিশ সদস্য থাকবে।
এই কাজটি করতে সময় লাগবে। তাই এখন পার্বত্য জেলার যে সমস্ত পুলিশ অফিসার ও কর্মকর্তা দেশের অন্য স্থানে নিয়েজিত আছেন, তাদেরকে জরুরী ভিত্তিতে পার্বত্য জেলায় পোষ্টিং দেয়া যেতে পারে।
পার্বত্য জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন, বর্তমানে চালু ডিগ্রী কলেজ গুলিতে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করে এই সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়। এজন্য এখনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোন প্রয়োজন নাই। নিতান্তই যদি একটি বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হয় তাহলে একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উচিৎ যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়েও লেখাপড়ার সুযোগ থাকবে।
একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন পার্বত্য জনগোষ্ঠী এ পার্বত্য ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা ও আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন একটি চক্রান্ত, যে বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝানো হচ্ছে এবং পার্বত্য জনগন ও ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত ও অকাঙ্খাকে উপক্ষো করা হচ্ছে।
(চালু ডিগ্রী কলেজ গুলিতে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করলে সরকারের ব্যয় কম হবে, পর্যাপ্ত সিট সংখ্যা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, সেখানে পার্বত্য জেলাসমূহের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ বাড়ীর কাছাকাছি তুলনামূলক যাতায়াত সুবিধায় এবং স্বল্প ব্যয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে সমর্থ হবে। কিন্তু তিন জেলা মিলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করলে ব্যয় বেশী হবে, চাহিদা অনুযায়ী সিট কম হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যাতায়াত ও শিক্ষা ব্যয় অনেক বেশী হবে। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।