.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা
১৯৯০ সাল। রেল ওয়ে এন্ড হাই ওয়ে এঞ্জেনিয়ারিং এর কুখ্যাত "নানা স্যারের" দোর্দন্ড প্রতাপ। কোন এক ব্যাচে হিসেব নিলে গড় মানের প্রতি ৮ জন ছাত্রের মাঝে ৬ জনই ফেল করার রেকর্ড আছে এ বিষয়ে, সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন বিভাগে, যে কোন বিষয় বিবেচনায় সবচেয়ে কঠিন তম বিষয় ধরা হত এটিকে। তার ঠিক ৩ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ছাত্রটি আবির্ভাব ঘটে। নম্বর সিস্টেমের যুগে দফায় দফায় ১০০/১০০ স্কোর করার ঘটনা গুলো অধ্যাপক মহলে শোরগোল তৈরি করে ফেলে।
সহকর্মীদের কাছে নাম শুনে বেপরোয়া নানা স্যার বোর্ডে একটা অবাস্তব সমস্যা দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সেই ছাত্রটিকে। নির্ভুলভাবে প্রতিটি শূণ্যস্থান পূরণ করে দেয় সে। হতভম্ভ হয়ে যান নানা স্যার। ছাত্রদের গালাগাল আর তাচ্ছিল্য করাই যার স্বভাব ছিল, সে স্বভাব অনুযায়ী সেই ছাত্রের কথা মাথায় রেখে কঠিনতম প্রশ্নটি চূডান্ত পরীক্ষায় করেন। যথারীতি ১০০/১০০।
পি এল শুরু হবার সাথে সাথে নিজে থেকে সমস্ত সমাধান করে ফটোকপি আকারে নিজে গিয়ে হলে হলে ঝুলিয়ে আসতো সে। মাঝে কোন ভুল হলে সেটি হলে হলে গিয়ে শুধরে আসতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার সময়সূচী নিয়ে আবার গোলমাল শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ শাস্তি স্বরূপ পর পর দু'ব্যাচকে একই সাথে একই সময় পাশ করানোর সিদ্ধান্ত নেয় একবার । তীব্র প্রতিবাদ জানায় সিনিয়র ব্যাচের ছাত্ররা, ঘটনাচক্রে সেই বিখ্যাত ছাত্রটি সিনিয়রদের ব্যাচে ছিল।
কর্তৃপক্ষ পরে আশ্বস্ত করে এক সাথে পরীক্ষা হলেও জুনিয়রদের ফলাফল ৩ মাস পরে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জঘন্যভাবে তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। দু'ব্যাচের ফলাফল এক সাথে প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগীয় সর্বকালের রেকর্ড ভাঙ্গা ছেলেটি কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ, অভিমান বশত বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন ছেড়ে বেরিয়ে আসে একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে, "আই উইল নেভার স্টেপ ইন মাই ক্যাম্পাস এগেইন। "
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহলে আবার শোর গোল শুরু হয়, এতটা দুর্দান্ত ছাত্র কে শিক্ষক হিসেবে হাত ছাড়া করতে তারা রাজি না।
তৎকালীন অধ্যাপক জে আর সির সমন্বয়ে এবং জোর উদ্যোগে সেই ছেলেটির জন্য নিয়মের বাইরে আইন করে আলাদা ইন্টারভিউ বোর্ড গঠন করা হল। ছেলে কিছুতেই ফিরে যাবেনা তার ক্যাম্পাসে। শিক্ষক জে আর সি ও বাবার প্রবল চাপে পড়ে ছেলেটি নির্বিকারভাবে হাজির হয় ইন্টারভিউ বোর্ডে। প্রশ্নের ফাকে কৌতূক করে একজন জিজ্ঞেস করে বসেন, "তুমি ইন্টারভিউতে এত দেরি করলে কেন?"
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর এতটা শক্তিশালী কিন্তু অপমানজনক আঘাত এর আগে কেউ করেনি। "আমি তো নিজে থেকে আসিনি, আপনারাই আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
" ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সে।
এর পর টেক্সাস অস্টিন থেকে মাস্টার্স ও টেক্সাস এ এন্ড এম থেকে পি এইচডি করে দেশে ফিরে এসে নিজের ক্যাম্পাস থেকে দূরে কোথাও গাধা পিটিয়ে মানুষ করার মহান ব্রত নিয়ে এখনও নিভৃতচারে আছেন। চিরকুমার এ অধ্যাপক এখন ছাত্র পড়িয়ে সুখ খোজেন, ব্যক্তি ধর্ম কর্ম পালন করেন নিষ্ঠার সাথে। বিশ বছর পরেও ক্যাম্পাসে, হলে, দালানে, কোরিডোরে তার নামের ফিসফাস উচ্চারণ শোনা যায়। কুখ্যাত নানা স্যার অবসরে যাবার আগ পর্যন্ত ছাত্রদের কাছে স্মরণ করে গিয়েছেন তার নাম।
তার কিংবদন্তী তুল্য ঘটনা গুলো এখনও লোক মুখে চলে।
নাম গোপন রাখা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ করা গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।