.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা
পুরনো দেড় তলা দালানের নিচেই মূল ফটকের পাশেই উনি বসেন। আসন্ন ঈদে জনশূন্য ক্যাম্পাসে এক অপরাহ্ন। ছড়ানো ছিটানো বহু দিস্তা কাগজ, জং ধরা আলমিরার পাশেই একটা ছোট হিমায়ক যন্ত্র। কিছু অর্ধ শূণ্য কফের সিরাপ। মুল চেয়ারে না বসে গালে হাত রেখে পার্শ্ব চেয়ারে বসে ঝিমান, খুক খুক করে কাশেন।
রোদ ফাটা দুপুরেও ঘরটাতে আঁধার আর গুমোট মাখা সন্ধ্যে নামে। ডায়বেটিসের প্রকোপ নিয়ে প্রাণ ভরে খান চিনি যুক্ত পানীয়, বেচে থাকার ইচ্ছে ছিলনা কখনও আপন ভাষ্য মতে। ডাক্তার দেখানোর টাকা নেই, তাই ক্যান্সারের অগ্রিম আশংকা নিয়ে দিন যাপন।
পরের দিনে সেই পুরনো পোশাকে ৩০ টাকার রূপসা চপ্পল পায়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে যান ক্লাশে কোন কাগজ ছাড়াই, খালি হাতে । লিখা শুরু করেন, যন্ত্রের মত বলে যান জ্ঞান আর বিজ্ঞানের কথা।
ছাত্ররা সায় দেয়, স্যার ভাল মানুষ, তাই ভাল থাকেন সব সময়। আবারও ঘরে ফিরেন সেই রাতে, পালক এতিম সন্তান গুলো ঘুমিয়ে পড়ে তত ক্ষণে, ভাত রান্না করে ডেকে তুলে খাওয়ান। আবার কখনও ডায়বেটিস এলে শয্যাশায়ী হন অন্তিম শয্যার প্রবল কামনা নিয়ে, সেবা করতে ঘিরে ধরে সেই এতিম শিশু গুলোর মুখ।
আমেরিকার শীতলতম প্রদেশে পিএইচডি করতে গিয়েছিলেন। শুরুতেই গবেষণা পত্রের দঙ্গলে পড়ে চলে যান এয়ারপোর্টে, ঘর নেই, স্বজন নেই, তবু্ও ঝামেলা এড়িয়ে ঘরে ফেরার টান।
টিকিটের দামে শখানের ডলার কম পড়ে। বাধ্য হয়ে ফিরে যান গবেষণার দঙ্গলে।
ফ্যাকাল্টি ডিন হয়ে ব্যাংকে দাড়িয়ে পড়েন ছাত্রদের কাতারে, ঝুলে যাওয়া শার্টের পকেট, বঞ্চিত-অবঞ্চিত মানুষের সামনে জ্যান্ত টাকার গাছ। মানবতা আর প্রযুক্তির জন্য নিজেকে ছিড়ে ছিড়ে নিঃস্ব করা একজন।
আমরা ভীষণ অকৃতজ্ঞ, প্রতিহিংসা পরায়ণ।
আমৃত্যু চিরকুমারের অস্তিত্বকে সমাজে অবৈধ, এক ঘরে করে দিই। শারিরীক অক্ষমতার কুৎসা থেকে শুরু করে প্রেমে ব্যর্থতার গল্প ফেদে রস পেতে ভালবাসি আমরা। সব কিছুকে নিজেদের বদ্ধ মানসে বিচার করে গতানুগতিক ধারণা নিতে ও দিতে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। স্যারের মুখে হাসি দেখিনি, ভুল করে বাসার বেল টিপে দিলে সেই গম্ভীর কন্ঠে, "কে?"
দরজা খুলতেই সেই পাথর মূর্তি। ভর দুপুরে ঘুট ঘুটে অন্ধকার ঘরের ভিতরটা।
কাছেই একটা ইজি চেয়ার, আপন আধারে শুয়ে থাকার জন্য। সেই ভোর পাচ টায় অপিসের দারোয়ানদের নিয়ে ফজরের নামায পড়ে কর্ম দিবস শুরু, এমনকি শুক্রবারেও।
কাল ও স্থানের ব্যবধানে আমার বর্বর-কঠোর অবষ্থান গলতে থাকে। হাতে দুটো বাদামের ঠোঙা চলে আসে, ছায়ার মত কেউ একজন দাড়িয়ে যায় জিয়া উদ্যানে, কিংবা নীল রক্তধারীদের আলো আধারি মাখা পানশালা.... একটি টেবিল, দুটো চেয়ারের একটাতে আমি বসি, আরেকটা কারো জন্য অপেক্ষায় থাকে। কিংবা গাজীপুর শালবনে ঝম ঝম বৃষ্টি নামে, বনের মাঝ দিয়ে চলা আমার ২০০৬ মডেলের গাড়িতে হালকা সুরে গান বাজে।
কিন্তু পাশের সিট টা খালি ভাবতেই অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠি। মানুষ একা বাঁচে কিভাবে?
গড্ডালিকার মূর্খতায় আক্রান্ত মানুষ গুলো ধর্মের দোহাই দিতে ভালবাসে। বিয়ে করা নাকি ফরয! স্যার সন্ন্যাস আর যান্ত্রিকতার সমন্বয়ে শুদ্ধতম মানুষ ছিলেন, আছেন, থাকবেন। দ্বিতীয়বারের মত তীর্থ যাত্রা করে আজ শ্মশ্রুধারী ।
সংসার ধর্মের বিরুদ্ধ অবস্থানের জন্য স্রষ্টার ক্ষমা থেকে কি তিনি বঞ্চিত হবেন? এতটা কঠোর কি স্রষ্টা হতে পারবেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।