আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকার এর দিনবদলের কাজ----

Mofiz of North Bangle

এই সরকার দিনবদলের লক্ষ্যে সুশাসনের কথা বলেছিল। কিন্তু বিগত ১৪ মাসে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জনমনে আশাবাদ জাগাতে সমর্থ হয়নি। কেন সমর্থ হয়নি তা আজকের পত্রিকায় (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০) প্রকাশিত কয়েকটি খবরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই উপলব্ধি করা যাবে। যেমন-- নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংসদীয় কমিটির, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল চত্বর থেকে ধরে নিয়ে তরুণীকে গণধর্ষণ ছাত্রলীগ কর্মীদের : গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস, কচুয়ায় এসিল্যান্ডকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের ২ ক্যাডার : কর্মবিরতি উপজেলা অফিসে, নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেটের কব্জায় : অর্থমন্ত্রী, খবরের সংখ্যা আর না বাড়িয়ে উল্লেখিত খবর কয়টির আলোকেই উপলব্ধি করা যায় সুশাসনের আজ কী অবস্থা! সরকারি ঘরানার লোকজন তাদের প্রতিদিনের কর্মকান্ডে শুধু সুশাসনেরই বারোটা বাজাচ্ছে না, জনগণের জীবনযাপনকেও কষ্টকর করে তুলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকান্ড দেখে এখন অনেকেই বলছেন, সরকার তাদের দিন-বদলের ইশতেহারের কথা ভুলে গেছে।

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আইন-শৃক্মখলা, দ্রব্যমূল্যের স্থিতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এসব বিষয়ও এখন সরকারের গুরুত্বের তালিকায় নেই। সরকার এখন দলীয় রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনকেই সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। ফলে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়নের কাজেই সরকারের উৎসাহ দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে, আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে আশংকাজনকভাবে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে দফায় দফায়।

সরকার দলীয় রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সুশাসন ও মানবাধিকার রক্ষার মতো বিষয়কেও উপেক্ষা করছে নির্বিকারভাবে। উন্নয়ন সহযোগীরাও এসব ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় উন্নয়ন সহযোগীদের বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দুর্নীতি ও আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে বলা হয়েছে। গত শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি গণতন্ত্রের পক্ষে সহায়ক নয়। বিরোধী মতকে সহ্য করার মানসিকতা রাখার জন্য সরকারকে উপদেশ দেয়া হয়েছে।

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। বেসরকারি সংস্থা ‘অধিকার'-এর হিসাবে গত ১৩ মাসে বাংলাদেশে ৩০০ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে মোটা চালের দাম প্রতিকেজি ৩০ টাকার বেশি। চিকন চাল কেজি ৪০ টাকারও বেশি। মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি।

অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে মানুষ দিশেহারা। গরমের মওসুমে এই সংকট আরও বাড়বে বলে আশংকা করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিনিয়োগ, উৎপাদন, রফতানি ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে অশনি সংকেত। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট রফতানি হয়েছে ৭২৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য।

অথচ এর আগের বছরে (২০০৮-২০০৯) একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এতে আমাদের রফতানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। একই সময়ে ওভেন, নিট পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, পাদুকা, পাট ও চা জাতীয় পণ্য থেকেও রফতানি আয় কমে গেছে। এসব বিষয় জনগণের জন্য দুঃসংবাদ বহন করে, এগুলো সরকারের জন্যও কোনো সুসংবাদ নয়। কিন্তু এসব নিয়ে সরকারকে তেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে না।

সরকারের এখন নির্বিকার চিত্ত দেখে প্রশ্ন জেগেছে পর্যবেক্ষক মহলে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়তো জনগণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের সমর্থনের ওপরই সরকারের টিকে থাকা, না থাকা নির্ভর করে। কিন্তু ক্রমেই গণসমর্থন কমে আসার পরও সরকার তার ভ্রান্তপথে অবিচল থাকে কোন বিবেচনায়? কাদের পরামর্শে ও আশ্বাসে দেশ চালাচ্ছে সরকার? তবে এখানে বলে রাখা ভাল যে, জনগণের পরিবর্তে বাইরের কোনো মহল বা শক্তির ওপর নির্ভর করে কোনো সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি এই জনপদে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.