হরিপুর গ্রামে তপা-পারুল দম্পতির বাস ৷ তপা দিনমজুর, সারাদিন খাটিয়া যাহা পায় তাহা দিয়া দিন চালায় ৷ তাহাদের ৩ বৎসর বয়সী একটি শিশুসন্তান আছে ৷
তপা এমনিতে খুব বদমেজাজী, তাহার উপর সারাদিন পরিশ্রম করিয়া মেজাজ একেবারে অগ্নিশর্মা হইয়া থাকে, গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া প্রায়ই সে তাহার বদমেজাজ পত্নীর উপর নির্মমভাবে প্রয়োগ করে,
পারুল সর্বদা সন্ত্রস্ত থাকে এই বুঝি কোন ছুতায় তাহার পতি তাহাকে প্রহার করিবে ৷
সেদিন অপরাহ্নে সে রন্ধনকার্য্য সমাধা করিয়া স্বামীর প্রতীক্ষা করিতেছিল এমন সময় শিশুটি ঘরের বারান্দায় মলত্যাগ করিয়া দিল ৷ বারান্দাই হইল তাহাদের আহারের স্থান, সেখানে মল থাকিলে স্বামীর ক্রোধ হইবে তাই পারুল দ্রুত মল পরিস্কার করিবার উদ্যোগ করিল, কিন্তু তখনই গৃহের বাহিরে স্বামীর আগমনের শব্দ শুনিতে পাইল, তখন সে তড়িঘড়ি করিয়া উপস্থিত বুদ্ধি খাটাইয়া একটি ধামা দ্বারা মলকে ঢাকিয়া রাখিল, তাহার উদ্দেশ্য ছিল স্বামীর আহার সমাপ্ত হইলে সে ধামা অপসারণ করিয়া মল পরিস্কার করিবে, কিন্তু বিধি বাম !
তপা গৃহে প্রবেশ করিয়া আহারের নিমিত্ত বারান্দায় উপবেশন করিল এবং পারুলকে হুকুম করিল খাদ্য পরিবেশন করিবার জন্য ৷ পারুল রান্নাঘরে গেল খাদ্য আনিতে, আর তখনই ঘটিল মহা অঘটন, তপা দেখিল বারান্দায় একটি ধামা উল্টানো অবস্থায় রাখা আছে তাহাতে তাহার আয়েশ করিয়া বসিতে অসুবিধা হইতেছে, সে তখন ধামাটিকে ঠেলিয়া সরাইতে গেল, তাহার ফলে ধামার তলার মলের যে দুরবস্থা হইল তাহা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য ৷
এইবার তপার ক্রোধ দেখে কে ! সে মহা ক্রোধে প্রজ্জলিত হইয়া একটি লাঠি দ্বারা স্ত্রীকে নির্মমভাবে প্রহার করিতে লাগিল, পারুল ব্যথায় কাতর হইয়া আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করিয়া ক্রন্দন করিতে লাগিল, তাহার চিৎকারে প্রতিবেশীগণ ছুটিয়া আসিল কিন্ত তাহাকে রক্ষা করা তো দূরের কথা, মজা করিয়া তামাশা দেখিতে লাগিল,
প্রহারের এক পর্যায়ে তপা পারুলকে বলিয়া ফেলিল, "মাগী তোকে তিন তালাক দিলাম, এই নে এক তালাক, এই নে দুই তালাক, এই দিলাম তিন তালাক" ৷
প্রতিবেশীরা স্বকর্ণে শ্রবণ করিল এই তালাকের উচ্চারণ এবং সকলে বলিতে লাগিল তপা -পারুলের তালাক হইয়া গিয়াছে তাহারা আর একত্রে থাকিতে পারিবে না ৷
এই লইয়া গ্রামে মতভেদ দেখা দিল,সকলে মহোৎসাহে আলোচনা সমালোচনা করিতে লাগিল, তালাক হইয়াছে না হয় নাই এই লইয়া দলাদলি শুরু হইয়া গেল ৷
অতঃপর, গ্রামে আলেম ওলামা এবং মোড়ল-মাতব্বরদিগকে লইয়া বিরাট সালিশ বসিল, সকলে ঘটনা শুনিয়া পারুলকেই দোষী সাব্যস্ত করিলেন, কারণ সে মলের মত জঘন্য বস্তুকে ধামাচাপা দিয়াছে,অতঃপর তাহাদের তালাক কার্যকর হইল ৷
পারুল অনেক চেষ্টা করিয়াও বুঝাইতে পারিল না যে সে স্বামীর প্রহারের ভয়েই মল ধামাচাপা দিয়াছিল,তাহাতে যে হিতে বিপরীত হইবে সে বুঝিতে পারে নাই, কিন্তু কেহই তাহার কথায় কর্ণপাত করিল না ৷
পাড়ার বয়স্কা মহিলারা বলিতে লাগিলেন, " কেন যে পারুল অতি চালাকী করিতে গেল, মার খাইয়া সংসার করা কি তালাক অপেক্ষা ভাল ছিল না?
জহুরুল হক
ল্যান্কাশায়ার
বিলাত
৫ই মাঘ,১৪১৬ বঙ্গাব্দ
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।