ফতুল্লায় নববধুকে গণধর্ষনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী মহল। নারায়ণগঞ্জের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং ৬টি খুনের মামলাসহ মোট ১৯টি মামলার আসামী তোফাজ্জল হোসেন শিকদার। সে জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি। তার আপন ছোট ভাই আব্দুল হক শিকদার ওরফে হক্কার নেতৃত্বেই এ পৈচাশিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আব্দুল হক শিকদার ওরফে হক্কা ও পাগলা এলাকার যুবলীগ নামধারী কুখ্যাত সন্ত্রাসী।
এক ডজন মামলার আসামী ফলে সন্ত্রাসী হক্কা এবং তার বাহিনীর সদস্যদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে সরকারী দল আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী একটি মহল। গতকাল তাদেরকে ফতুল্লা থানায় এবং আদালতপাড়ায় ব্যাপক তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে। এদিকে গত বুধবার মামলা করার পর থেকে ধর্ষিতা গৃহবধুকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। গতকাল ধর্ষিতাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেশ হাসপাতালে মেডিকেল চেক আপ করানো হয়েছে।
তবে এ রিপোর্ট লিখার সময় পর্যন্ত কোন মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। কর্তব্য পালনকারী ডাক্তার জানিয়েছেন নববধুর চেক আপ করা হয়েছে। রিপোর্ট সিভিল সার্জন অফিসে জমা দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীবন কান্তি সরকার জানিয়েছে এ চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৩ আসামী আমজাদ (২৫) তাজুল (৩০) ও ওসমান মোল্লা (৩২)কে আদালতে হাজির করে ৫দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আদালত মেডিকেল রিপোর্ট না পাওয়ায় কোন আদেশ দেয়নি।
আগামী ১২ অক্টোবর আবার রিমান্ড শুনানী হবে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য ফতুল্লার পাগলা এলাকার ত্রাস যুবলীগের সন্ত্রাসী আব্দুল হক শিকদার ওরফে হক্কার নেতৃত্বে ৭ সন্ত্রাসী স্বামীকে বেধে রেখে তরুণী নববধুকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় গত বুধবার ধর্ষিতা নিজেই বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর পুলিশ উল্লেখিত ৩ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু ধর্ষণকারীদের নেতা কুখ্যাত সন্ত্রাসী হক্কাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীবনকান্তি সরকার জানান, গত ১ অক্টোবর জালকুড়ি এলাকার এক যুবকের সাথে ধর্ষিতা তরুনীর বিয়ে হয়। পরবর্তীতে গত ৩ অক্টোবর ওই তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে পাগলার নুরবাগ এলাকায় তার আত্মীয়ার বাড়িতে বেড়াতে এলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী এবং এক ডজন মামলার আসামী হক্কা তার ৬ সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়ি থেকে তরুণীকে তুলে নিয়ে পাশের চান মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তার স্বামীকে বেধে ৭ সন্ত্রাসী পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় শরীফ, আমজাদ, হক্কা, স্বপন, তাজুল ওসমান ও সুমনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে গতকাল সারাদিন ধর্ষিতা তরুণীকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। শত চেষ্টা করেও সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলতে পারেনি।
সূত্র জানায় গতকাল দুপুরের পর থেকে ধর্ষিতাকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
অপরদিকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান জানান তিনি গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে ওইদিন নববধুকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ স্পটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তবে তাকে সেখানে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা মেডিকেল রিপোর্টেই জানা যাবে।
সন্ত্রাসী হিসেবে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার তৈরী করেছিল মেছের
পাগলায় সন্ত্রাসের জনক তোফাজ্জল পরিবার
পাগলায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী তোফাজ্জল ফিরে এসেছে। তোফাজ্জলের সঙ্গে ফিরে এসেছে সন্ত্রাস। আবার সন্ত্রাসীরাই এখানে করছে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল। সর্বশেষ তোফাজ্জলের ভাই আঃ হক ওরফে হক্কা কর্তৃক এক নববধুকে ধরে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। বিয়ের ৩দিন পর জালকুড়ি থেকে স্বামীর সঙ্গে পাগলার নূরবাগে বেড়াতে এলে এলাকায় যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হক্কা নববধুকে পতিতা আখ্যা দিয়ে ধরে নিয়ে যায় এবং ৭ জনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
গত ৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীদের একটি আড্ডাস্থলে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, পাগলা, নয়ামাটি, নিশ্চিন্তপুর, ভুইঘর, দেলপাড়া ইত্যাদি এলাকার লোক সোচ্চার হয়ে এ ঘটনার নিন্দা করলেও কেউ নাম প্রকাশে রাজী নয়। এই জনপদের পূরনো অধিবাসীরা জানিয়েছে, তোফাজ্জলদের পরিবারটি একটি অপরাধী পরিবার। গোলাম রসূল, মেছের, তোফাজ্জল ও আঃ হক ওরফে হুক্কা এই ৪ ভাইয়ের নামেই খুনের অভিযোগ রয়েছে। দু’টি জোড়া খুনসহ তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে রয়েছে ৬টি খুনের মামলা।
সন্ত্রাসী হিসেবে সবচেয়ে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার তৈরী করেছিলো মেছের আলী। সে কত খুন করেছে তা কেউ বলতে পারবে না। ডেমরায় দনিয়া বাজারে তরকারী বিক্রেতা হিসেবে জীবন শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যেই সে দূর্ধর্ষ যুবলীগ ক্যাডার খেতাব অর্জন করে। ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে এ পরিবারটি পাগলায় এসে বাড়ি করে। এ সময় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এ দু’টি নগরীর মধ্যবর্তী বিলঘেরা গ্রাম্য জনপদ পাগলার অবকাঠামো পরিবর্তন শুরু হয়েছিলো।
দ্রুত গড়ে ওঠছিলো রি-রোলিং মিল, স্টীল মিল, ডায়িং ফ্যাক্টরী, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীসহ নানা শিল্প কারখানা। এসময় মেছেরের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠে। শুরু হয় ভু-সম্পত্তি দখল বে-দখলের সন্ত্রাস। এ সময় মেছেরের নেতৃত্বে প্রথমে সেলিম, দেলোয়ার জোড়া খুন সংঘটিত হয়। তারপর আরও দু’ যুবক খুন হলে এলাকাবাসী সংগঠিত হয়ে মেছেরদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
এরপর শুরু হয় রাতের আধারে মেছের বাহিনীর চোরাগোপ্তা হামলা। এসময়ে এলাকবাসীর নিরাপত্তা বিধানে পাগলার নয়ামাটি শ্মশান এলাকায় একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও গড়ে উঠেছিলো। এ দূর্ধর্ষ মেছের পরবর্তীতে ঢাকার মালিবাগ বাজারে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়। হক্কার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ এক ডজন মামলা রয়েছে। বড় ভাই গোলাম রসূলের বিরুদ্ধেও রয়েছে খুনের মামলা।
৯০’র দশকে ফতুল্লা থানা পুলিশ তোফাজ্জলদের বাড়িতে সুড়ঙ্গ পথও আবিষ্কার করেছিলো। কুখ্যাত সন্ত্রাসী হলেও এই ৪ ভাই পদবী হিসেবে সব সময় যুবলীগ নেতা ব্যবহার করেছে। বিগত আওয়ামীলীগ আমলে শামীম ওসমানের হয়ে কাজ করার পুরষ্কার হিসেবে গোলাম রসূল কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হয়েছিলো।
২০০১ সালে বিএনপি মতায় এলে এই সন্ত্রাসী পরিবারটি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিগত নির্বাচনে মহাজোটের বিজয়ের পর আবার পুরো পরিবার ফিরে এসেছে।
এদের সঙ্গে পাগলা জনপদে ফিরে এসেছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ইত্যাতি। এরা একদিকে সন্ত্রাস করে, অপরদিকে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতা সেজে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিলও করে। এলাকাবাসীও পরিবারকে ভয় পায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।