লক্ষ্যহীন এক মানুষের পথচলা অবলোকনের আশায় আমায় দেখ। তবে সাবধান, অনুকরণ করোনা যেন! নিজস্ব গতি নদীকে কখনো পথ দেখায় না, নিজস্ব গতিতেই সে তার নিজের পথ করে নেয়। শুভ কামনা রইল সবার প্রতি!
না - না, সঙ্গা নয়; অনুভূতির কথা বলছি আমি। আর তা যদি হয় প্রিয়ার প্রথম স্পর্শ, - অন্তত: আমার মতো লাজুক প্রকৃতির মানুষের জন্য। আচ্ছা, স্পর্শ বলা কি ঠিক হবে? সেযে - রীতিমতো আঁকড়ে ধরা! আর সে সময়ের হৃৎপিন্ডের সেই ধরফরানিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল অন্য এক অজানা ভয়; - বলতে পারো, হয়তো মৃত্যু ভয়! সেদিনের অনুভূতির এই অদ্ভুত মিশ্রণ - আমাকে চিরদিন স্মরণ করিয়ে দেবে পঁাচ বছর আগের সেই ১৪ ফেব্রুয়ারীর কথা।
শ্রেনীকক্ষে পাঠদান করাতে করাতে - কথা শিল্পটির সুন্দর প্রয়োগের সুনাম থাকলেও "মনি"র সহাস্য মৌনতা আমার সবকিছুকে কেমন যেন গুলিয়ে দিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তরুণ শিক্ষকের অন্য সব লেকচার যেমন তেমন হলেও- প্রিয় ছাত্রী মনি-র ক্লাসের পাঠদানের দক্ষতা ছিল লক্ষ্যনীয়; নিজেই বিস্মীত হতাম মাঝে মাঝে। অথচ সেই ছাত্রীটিই একা একা কিছু বুঝতে অফিস রুমে এলে কে যেন গলাটাকে চেপে ধরতো। অদ্ভুত! বন্ধুরা হেসে বলতো:"এমনই হয়!!" প্রথমে না বুঝলেও সেদিনের চার বছর পর ঠিকই বুঝেছিলাম - আসলেই এমনটা হয়। আর তাইতো ২০০৫ এর ১৪ফেব্রুয়ারী বিকেলে লজ্জার মাথা খেয়ে মনিকে অনুরোধ করেছিলাম ঘুরতে যেতে।
তার ফুল্লরক্তকুসুমকান্তি অধরযুগল আলতো নাড়িয়ে সম্মত হয়েছিল সে।
বুঝতে পারো, আমার এর পরের অনুভূতির কথা? জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় সেদিন আমার লেগেছিল বিকেলে তৈরী হতে! ঢাকার সংসদভবনের কাছে গোলাপী - সাদা শাড়িটি পরে মনি যখন আমার পাশে রিকশায় উঠলো - আমার মনে হলো, আমি যেন রাজ্য বিজয় করে ফিরছি! চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো- "বৌমনি, বৌমনি --বৌ--ম---নি"! তখনো বলতে পারিনি; তবে পড়ন্ত বিকেলের সেই আবছা
আলোয় হঠাৎ দেখি পাশদিকের পার্কের ভিতর থেকে দুটো ছেলে দৌড়ে আসছে, আর বলছে, "ধর, ধর, ধর। " ছিনতাইকারী নাতো -- গুলি করবে নাতো ---ছুরি? মুহূ্তের্ মাথায় খেলে গেলো হাজারো চিন্তা। চেয়ে দেখি, আমার প্রিয় মনি আমার বাহু জড়িয়ে ধরেছে শক্ত করে। আমিও ধরলাম ওর হাত।
বুঝতে পারছি হৃৎপিন্ডটা নেচে উঠছে --- ভীষণভাবে! প্রিয়ার স্পর্শ আনন্দে, নাকি ভয়ে? ভাববার সময় নেই। আমি চিৎকার করছি - "রিকশা জোরে চালও---, আরো জোরে--"।
ছেলে দুটো রিকশা ধরে ফেলেছে দু'পাশ দিয়ে। ব্রেক কষে দঁাড়িয়ে গেছে রিকশাওয়ালা। আরো জোরে আমায় জাপটে ধরেছে মনি।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় এই আমি হঠাৎ শুনলাম হঁাপাতে হঁাপাতে ছেলেটি বলছে, "সালাম স্যার। এটা ম্যাডাম নাকি, স্যার? আসসালামুআলাইকুম ম্যাডাম। প্রথম বর্ষের ছাত্র আমরা -- --" মনে হলো আমার ঘাড়ের উপর থেকে কেউ তলোয়ার নামিয়ে নিয়েছে। হায়রে সুপ্রিয় স্যারের প্রতি বদান্যতা! একটু কঠিন হয়ে বললাম,"ধর, ধর---করছিলে কেন?" অবাক হয়ে ওরা বললো, "না তো। বলেছি, স্যার, স্যার -- --"
রিকশা চলতে শুরু করলো আবার।
আমার মনি'র হাত নরম হয়নি তখনো। বললাম, "একটু আস্তে ধরবে? ব্যাথা পাচ্ছি তো?" বিদ্যুত গতিতে হাতটা সরানোর চেষ্টা করেছিল ও। পারেনি, -- আমার জন্যে। তবে ভালোবাসা দিবসের পড়ন্ত বিকেলের আমার এই বৌমনিটির সেই লজ্জাবনত মুখ আর সেই প্রথম স্পর্শের বর্ণনাতীত হর্ষ অম্লান হয়ে থাকবে চিরদিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।