আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৈকতের সতের স্তূপে আট মূল্যবান খনিজ সম্পদ

সত্যের চেয়ে অপ্রিয় আর কিছু নেই
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ১৭টি মূল্যবান ভারি খনিজ সম্পদের স্তূপ আছে। যেখানে আছে আটটি অতিমূল্যবান খনিজ সম্পদ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সম্পদের মূল্য হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন গবেষণা করে এসব মূল্যবান খনিজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এখনই সমুদ্র সৈকতের এই সম্পদ তোলা সমীচীন হবে না বলে মন্তব্য করেছে।

পর্যটনের কথা বিবেচনা করে এই মতামত দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কিছু এলাকায় খনিজ সম্পদ তোলা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা নিয়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে জ্বালানি বিভাগ। সমুদ্র সৈকতের কুতুবদিয়া, মহেশখালি, কক্সবাজার সদর, উখিয়া, টেকনাফ এই ছয়টি এলাকায় ভারি খনিজ সম্পদ আছে।

সাত হাজার ৯৮৬ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই সম্পদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সরকারিভাবে এই সম্পদের ব্লক ভাগ এখনো হয়নি। প্রতিবেদন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে সৈকতে খনিজ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। এখানে যে জিরকন ও মোনাজাইট আছে তা তেজষ্ক্রিয়। খনিজ উত্তোলন ও আলাদা করলে তেজষ্ক্রিয়তা বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

তবে নিউক্লিয়ার সেফটি এ্যান্ড রেডিয়েশন কন্ট্রোল এ্যাক্ট-এর রেডিয়েশন সেফটি মেনে চললে এই তেজষ্ক্রিয়তা কমানো সম্ভব। অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি কিছু দিন আগে সরকারের কাছে সমুদ্র সৈকতের সম্পদ তোলার আবেদন করে। তারা কিছু এলাকায় পাঁচটি ভাগে ভাগ করে কাজ করার আবেদন করে। সে সময় তাদের শুধু অনুসন্ধানের অনুমতি দেয়া হয়। সৈকতের ৫০ কেজি বালি অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে তারা গবেষণা করে দেখেছে এখানে প্রচুর ভারি খনিজ সম্পদ আছে।

এরপর তারা তা উঠানোর প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাব বিবেচনা করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করতে সরকার উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি গঠন করে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করে এখনই পুরো এলাকা থেকে খনিজ তোলা সমীচীন হবে না বলে জানিয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকও এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জ্বালানি বিভাগে পাঠিয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জ্বালানি বিভাগে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্র সৈকত থেকে খনিজ তোলা হলে পর্যটকের ক্ষতি হবে।

একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হবে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জানান, সৈকতের খনিজ তোলার অনুমতি দিলে এলাকার লোকজন জমি হারাবে, জীব, পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ করলে পর্যটনের ক্ষতি হবে। খনিজ ও পরিমাণ বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইল, গারনেট, জিরকন, রুটাইল, মোনাজাইট, ক্যায়নাইট ও লিউকপ্রিন-এর মতো মূল্যবান ভারি খনিজ সম্পদ আছে। উপকূলের বদরমোকাম, সাবরং, টেকনাফ ও সিলখালিতে মোট ইলমেনাইট আছে চার লাখ ৫০ হাজার ৯৪৪ টন, গারনেট আছে ৬৪ হাজার ৮৬৪ টন, জিরকন আছে ৭০ হাজার ৭২২ টন, রুটাইল আছে ১৮ হাজার ৬৬৪ টন, ম্যাগনেটাইল ২১ হাজার ৫৬৯ টন, লিউকপ্রিন ৫১ হাজার ৮৩৬ টন, ক্যায়নাইট ১৯ হাজার ৮৬২ টন, মোনাজাইট ১২ হাজার ১০১ টন।

সৈকতে কাঁচা বালি আছে দুই কোটি পাঁচ লাখ টন। ভারি খনিজ আছে ৪৩ লাখ টন। এই বিভিন্ন পদের খনিজের মধ্যে আর্থিক ও বাণিজ্যিকভাবে আটটি তোলা যাবে। যার পরিমাণ ১৭ লাখ ৬১ হাজার টন। কক্সবাজার জেলার টেকনাফে পাঁচটি ব্লকে এই খনিজ এলাকা ভাগ করা হয়েছে।

এর মধ্যে এক ও দুই নম্বর ব্লকে দুই কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টন খনিজ বালি আছে। এই বালির মধ্যে এক লাখ ৯৩ হাজার টন আছে জিরকন ও ৫৫ হাজার টন রুটাইল। অন্য ব্লকগুলোতে ৮০ হাজার টন জিরকন ও ২০ হাজার টন রুটাইল আছে। এখান থেকে প্রতিবছর ছয় হাজার টন রুটাইল, ১৭ হাজার টন ম্যাগনেটহিট, ৩০ হাজার টন গারনেট ও ৭০ হাজার টন ইলমেনাইট তোলা সম্ভব। প্রতিবছর ২২ হেক্টর জমি থেকে খনিজ তুললে ১০ বছরে তা তোলা যাবে।

প্রস্তাব অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার মিনারেল কোম্পানি লিমিটেড প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ হেক্টর জমি থেকে খনিজ তোলার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, যে বালি তোলা হবে তা হতে ৭ থেকে ১০ ভাগ আলাদা করা হবে। বাকি ৯০ থেকে ৯৩ ভাগ আবার আগের মতোই খনন করার স্থানে রেখে দেয়া হবে। কমিটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব আশরাফ আলীকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে অন্যদের মধ্যে ভূমি, বিমান, বিজ্ঞান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর, পরমাণু কমিশন, খনিজ সম্পদ ব্যুরো ও প্রিমিয়ার মিনারেল কোম্পানির প্রতিনিধি ছিলেন। সুত্র: ইত্তেফাক
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.