২০০৬ সালের ২২ জানুয়ারিতে প্রায় দেড় কোটি ভুয়া ভোটার নিয়ে নির্বাচন করতে যাচ্ছিল তৎকালীন সরকার। আমরা প্রতিবাদ করলে বলেছিল, ২২ তারিখের মধ্যে নির্বাচন না হলে তো সংবিধানই শেষ হয়ে যাবে। সবাই শুধু সংবিধান দেখাচ্ছে। তখনো দেখানো হয়েছিল, এখনো দেখানো হচ্ছে। মানুষ কী চায় আগে সেটা যাচাই করুন।
প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। তাদের উপেক্ষা করে কোনো রকম সংবিধান দেখানো অর্থহীন। গত মঙ্গলবার সময় টেলিভিশনের টকশো 'সম্পাদকীয়'-তে সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন। আহমেদ জোবায়েরের উপস্থাপনায় তিনি বলেন, '৬৯, '৭১-এ যারা রাজনীতি করেছেন তারা জনগণের স্বার্থের বাইরে কিছু করেননি। এখন রাজনীতি হয়ে গেছে খুবই সংকীর্ণ।
রাজনীতিকদের চিন্তা শুধু কীভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারি অথবা কীভাবে ক্ষমতায় যেতে পারি। নির্বাচন কীভাবে হবে তা ১৬ কোটি মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আট কোটি ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তারা চায় একটা গ্রহণযোগ্য সন্তোষজনক পরিবেশে ভোট দিতে। দেখতে হবে তারা কী চায়।
দুই একটি জরিপ হয়েছে। প্রয়োজনে আরও জরিপ করেন। জেলায় জেলায় মাইক নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
ড. কামাল বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। বলা হয়, অন্যান্য দেশে তো নির্বাচন কমিশন করে দিলে হয়।
এখানে হচ্ছে না কেন? আমরা তো '৭২-এ নির্বাচন কমিশন করেছিলাম। নির্বাচন কমিশন হবে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ। যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা স্বচ্ছভাবে সবার মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। আমি প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় ছিলাম। আমরা কমিশন গঠনের সময় সবার মতামত নিয়েছিলাম।
২০০৮ সালে যে সরকার ছিল তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে একটা আইনের খসড়া করে দিয়ে গিয়েছিল। প্রস্তাবটা ভালো ছিল। সেখানে বলা ছিল একটা নিরপেক্ষ কমিটি সবার মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য লোকদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেবে। আমি নিজে খসড়াটি প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের হাতে দিয়েছি। কিন্তু, আইনটা হয়নি।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, '৯৬ সাল থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হলো। এখানে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে তো কোনো বিতর্ক হয়নি। এটা বাতিল করার কোনো অঙ্গীকার তো নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল না। এ জন্য জনগণ ভোট দেয়নি। আদালতের রায়েও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরও দুই বার তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন করা যাবে এমন কথা বলা ছিল।
তাহলে এত তাড়াহুড়ো করে সংবিধান সংশোধনের কী প্রয়োজন ছিল? সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাইকে এক টেবিলে বসান। তাহলেই তো মানুষের মতামত জানতে পারবেন। তিনি ক্রিকেট খেলার উদাহরণ টেনে বলেন, আমি একটা দলের ক্যাপ্টেন আবার আমিই আম্পায়ার, এভাবে তো ক্রিকেট ম্যাচ হতে পারে না। ন্যায়-নীতিবোধ থাকলে মানুষ এটা কীভাবে মেনে নিতে পারে? '৮৬ সালে সরকারি দল যে নির্বাচন করেছিল তা ছিল ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও জঘন্য। তখন এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু হলো যে, যিনি সরকারে আছেন তাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না।
সবাই নির্বাচন বয়কট করেছিল। '৮৮ তে নির্বাচন দেওয়া হলো। সেটাও সবাই বয়কট করল। অবশেষে প্রেসিডেন্টকে বিদায় নিতে হলো। সরকারকে উদ্দেশ করে ড. কামাল বলেন, এখনো তো চার মাস আছে।
অনেক কিছুই করার সুযোগ আছে। শুধু দুই দলের মধ্যে আলাপ নয়, সবার মতামত নিন। এখন যেভাবে গণমাধ্যমের বিস্তার ঘটেছে, সেখানে জনমত যাচাই করা খুবই সহজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।