মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
বিরোধী দল বিএনপি’র সভানেত্রী রাজধানীর গুলশানে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। উত্তরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণের কোনো নজির শীতার্ত মানুষ দেখেনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদের সিদ্বেশ্বরীতে শীতবস্র বিতরণ করে শীতার্তদের উদ্ধার করেছেন।
এদিকে গরীব,অসহায়,দুস্থ ও ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের জন্য ত্রাণ ও পুণবার্সন অধিদপ্তর প্রায় ৫ লাখ ছিন্নমুল মানুষের বিপরীতে দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার পিছ কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে।
এ পর্যন্ত দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৫২০ টি, দিনাজপুর পৌর সভায় ১৯৩টি, বিরলে ২৮৭টি, বোচাগঞ্জে ১৪৮টি, সেতাবগঞ্জ পৌর সভায় ৩০টি, কাহারোলে ১৬৮টি, বীরগঞ্জে ৩১০টি, বীরগঞ্জ পৌর সভায় ২১টি, খানসামায় ১৮৫টি, চিরিরবন্দরে ৩২৫টি, পাবর্তীপুরে ৩৯৮টি, পাবর্তীপুর পৌর সভায় ৩৪টি, ফুলবাড়ীতে ১৮৫টি,ফুলবাড়ী পৌরসভায় ৩৪টি, বিরামপুরে ১৫২টি, বিরামপুর পৌরসভায় ৩৪টি, নবাবগঞ্জে ২৫০টি, হাকিমপুরে ৮০টি, হাকিমপুর পৌরসভায় ২৩টি, ঘোড়াঘাটে ১০৪টি, ঘোড়াঘাট পৌরসভায় ২৩টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তীব্র শীতে মানুষের যখন নাকাল অবস্থা তখন এ অপ্রতুল কম্বল বরাদ্দ জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁপছে সারাদেশের মানুষ। উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশী।
নতুন বছরের শুরু থেকে প্রচণ্ড শীত জেঁকে বসার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত। হাড় কাঁপানো এই তীব্র শীতের কারণে ৪ জানুয়ারী পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে শতাধিকে। তীব্র শীতের ৪ দিন পরেও সারাদেশের শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্র বিতরণে কোনো মহলই তেমন সাড়া দিচ্ছে না।
উত্তরাঞ্চলসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া শৈত্যবাহের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়ার পরে এবার ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ অব্যহত রয়েছে।
ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁপছে উত্তর জনপদ।
এই শৈত্যপ্রবাহ আরো দু'দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস আভাস দিয়েছে। পশ্চিমা লঘু চাপের প্রভাবে দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস আরো জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের পুরো সময় জুড়েই এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে।
আর দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরো নেমে যাবে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৮.৫ ডিগ্রী, দিনাজপুরে ৯.১, যশোরে ৯.৫ এবং রাজশাহীতে ও রংপুরে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
সিরাজগঞ্জে গত ২৪ ঘন্টায় নিউমোনিয়া ও শৈত্যপ্রবাহে ৩ শিশুসহ ৬ জন মারা গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, কামারখন্দ উপজেলার চক-শাহাবাজপুর গ্রামের মোহনা পারভীন (৩২ দিন) ও ঝাপড়ি গ্রামের আকলিমা (১৪ দিন) শনিবার রাতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার পর প্রথমে কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তির পর উভয়েই মারা যায়।
শৈত্যপ্রবাহের কারনে মারা গেছে, বেলকুচি উপজেলার রান্ধুনীবাড়ি গ্রামের আবু সাঈদ খান (১০৩), তাড়াশ উপজেলার হরিণচড়া গ্রামের আব্দুর রহমান (৭৩), সদর উপজেলার টুকরা ছোনগাছা গ্রামের আমীর আলী (৭) এবং সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে কলোনী মার্কাস মাঠে অনুষ্ঠিত তাবলীগ জামাতে আগত মুসল্লী সামসুল হক (৭০)।
দিনাজপুর অঞ্চলে ভয়াবহ শীতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বছরের শুরু থেকে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে খেটে খাওয়া ছিন্নমুলদের ত্রাহি অবস্থা দাঁড়িয়েছে। গতকাল দিনাজপুরে তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় এই ৩ জেলা প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যে মধ্য ডিসেম্বর থেকে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করে কৃষকেরা।
তিন জেলায় ২৫ হাজার একর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ইতোমধ্যেই ১৫ হাজার একর জমিতে বীজতলা তৈরির করা হয়েছে। বাকী ১০ হাজার একর জমিতে বীজতলা তৈরির কাজ আগামী ১৫ জানুয়ারীর মধ্যে শেষ হবে। বীজতলা সদ্য গজিয়ে উঠা বোরো চারা প্রচণ্ড ঠান্ডা ও অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীত জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
কৃষি বিভাগের ভাষায় এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুরি ও ছাত্রক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, প্রায় অর্ধেক বীজতলা ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
ছত্রাক রোগ ও কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত বীজতলার কোচি সবুজ চারা গুলো প্রথমে হলুদ ও পরে তামাটে বর্ণ ধারণ করছে। কৃষকেরা জানায়, অতিরিক্ত কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারনে বীজতলায় এধরনের রোগের প্রকট দেখা দেয়। জেলা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, তাপমাত্রা কমে গেলে এবং শীতের প্রকট বাড়লে বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি ও ছত্রাক আক্রমণ দেখা দেয়। তবে তাপমাত্রা বাড়লে কোন প্রকার প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছাড়াই বীজতলা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।