আজ ৩১ ডিসেম্বর।
২০০৯ সালের শেষ দিন।
পশ্চিমা দেশগুলোতে বছরের শেষ রাতে নানা রকম অনুষ্ঠান হয়। তরুণ বৃদ্ধ সবাই উদ্দাম হয়ে ওঠেন। এটা তাদের সংস্কৃতিতে স্বাভাবিক।
কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে তা বেমানান। কারণ ওদের সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের চরম বিকৃতির ফলে স্বার্থপর একাকীত্ব তাদের বিধিলিপিতে পরিণত হয়েছে। পরিবার ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। পরিবার যেটা ভাঙ্গেনি সেটাও বহিরঙ্গের জোড়া। ভেতরটা ফাঁকাই।
বাড়ীতে ঢুকে যার যার ঘরে আপন একাকী জীবনে ডুবে যায় সবাই। ডাইনিং টেবিলেই শুধু একত্র হয়। তাই নানা উৎসবের ভেতর দিয়ে বন্ধু বা অল্প চেনা বা অচেনাদের সাথে হৈচৈ করে একাকীত্বের বেদনা ভোলার চেষ্টা করে।
আমাদের সমাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে নানা সমস্যা সত্বেও পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী।
আমাদের এইসব একাকীত্বের স্বপ্নবিলাসের খুব একটা সুযোগ নেই। আমাদের সামাজিক বন্ধুত্বের বাঁধনও খুব শক্ত। কাজকর্ম আর আড্ডা মিলে আমাদের জীবনে মানবিকতার আবহ সবসময় ঘিরে থাকে। একাকীত্ব ভোলার জন্য আমাদের অস্বাভাবিক কিছু করতে হয় না।
আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভেতর নানা উৎসব আর তার উদযাপনের নিজস্ব ভঙ্গি আছে।
সেটা আমাদের সমাজের সাথে খাপ খাইয়েই গড়ে উঠেছে। সেটা আমরা আমাদের মতো করে উদযাপনও করি। বহু শতাব্দীর সাংস্কৃতিক লেনদেনের ভেতর দিয়ে আমরা পথ চলেছি। বদলের কিছু হাওয়া যে লাগেনি তাও নয়। বদলকে আমরা আমাদের শর্তে আত্মস্থ করেছি।
অনেকবার এই বদলের হাওয়া ঝড়োরূপ ধরে আমাদের উড়িয়ে নিতে চেয়েছে। আমরা সামলে নিয়েছি।
গ্লোবালাইজেশনের ছদ্মবেশে যে নব্য সাম্রাজ্যবাদ পাখা মেলছে তার কুপ্রভাব আবার একটা ঝড়ের আভাস দিচ্ছে। তরণ প্রজন্ম সে হাওয়ায় আবেগবশত: রঙিন চমকে আকৃষ্ট হচ্ছে। আমাদের স্বাতন্ত্র্য রেখে নতুনকে বরণ করার অভিজ্ঞতা বা ধৈর্য তাদের এখনো তৈরী হয়নি।
তাই পাশ্চাত্যকে নকল করার প্রবণতা দেখা যায়। এটা খুব স্বাবাভাবিক একটা প্রক্রিয়া।
এই প্রক্রিয়াই মাঝে মাঝে বিকৃত ও অশালীন হয়ে ওঠে। টিএসসিতে বাঁধনের সাথে অশালীন আচরণের কাল থেকে থার্টি ফার্ষ্ট সবার জন্য বিশেষত: আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখান থেকে যতো দিন যাচ্ছে এই থার্টি ফার্স্ট নানা অনুষ্ঠান আর ফান মিলে বিশ্রী রূপ নিচ্ছে কোন কোন স্পটে।
সব মিলে পুরো বিষয়টি ডার্টি রূপ ধারণ করছে কখনো কখনো। যারা এই সব করে জাতে (?!) উঠতে চান বা আধুনিক (!?) বা স্মার্ট (!?) হতে চান, হবেন। কিন্তু এর বলি হতে হচ্ছে নিরীহ পথচারীদের। প্রয়োজনে যারা বের হতে বাধ্য হন তাদেরকে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়, বিশেষত: নিরাপত্তা তল্লাশীর সময় । অনেকের প্লেন/ট্রেন/বাস মিস হবার দশা হয়।
জ্যামের জন্যও দেরী হয়। প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মহিলা বা তরণীদের টিজিংয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তাদের জন্য আর আমাদের সংস্কৃতির জন্য এই থার্টি ফার্স্ট ডার্টি ফাস্টে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।
এনিয়ে বোধহয় আমাদের গভীর ভাবে ভাবতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।