আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডার্টি স্টোরিঃ সারভাইভ ।।

আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে ।
[ সংবেদনশীল পাঠকের সতর্কতা কাম্য ] বাচ্চাটা আপন মনে খেলছে । ঘর জুড়ে ছুটছে । ছন্দতালে ছড়া কাটছে । তাল কেটে হাঁপাচ্ছে ।

তার বাবা অবিরাম বকছে । একটানা বকাবকি বেশ পুরনো অভ্যেস বাবার । সাঁজ সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই বকাবকি । স্নান ঘরে যেতে আসতে বকাবকি । দাঁত মাজা নাস্তা খাওয়ায় বকাবকি ।

অফিসযাত্রায় তৈরি হতে বকাবকি । অশ্রাব্য কটু শব্দগুলো কবেই ছেলেটির অভ্যস্ত কানে মানিয়ে গেছে । তার মা বসে বসে ধুঁকছে । পুরনো চশমার ফ্রেমে চোখের কালি ঢাকা পড়েছে । একমনে সুঁই সুতো দিয়ে সুইস ভয়েল কাপড়ে ফুলের নকশা আঁকছে ।

এক আজব নেশা মায়ের । দিন রাত কথা বলা বন্ধ, সময় পেলেই শুধু সুঁই সুতো । বাবার বকাবকি এবার মায়ের দিকে ধেয়ে যায় । এই সেকেলে মহিলা কিছুই বুঝেনা । এর হাতে তার ছেলের ভবিষ্যত নিশ্চিত অন্ধকার ।

ছেলেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের উপযোগী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব মায়ের । কিন্তু এই মহিলার হাতে তার আদরের ছেলেটা দিব্যি রসাতলে যাবে । বাপের একটানা বকাবকিতে মায়ের বুনোট ধ্যান ভাঙ্গে । সুঁই সুতো রেখে ছেলের প্রতি মনযোগী হন তিনি । স্কুল বন্ধ হলেও কোচিং আছে ।

কোচিংয়ে যাবার জন্য মা ছেলেকে তৈরি করে । বাবা তখনো বকে যায় । এবার লক্ষ্য ছেলের স্কুলবাড়ি । অযত্ন অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার অভিযোগের তীব্র শ্লেষ ছুটে যায় স্কুলের মাস্টার মশাইদের দিকে । শেখায় না কিছুই, শুধুই রুটিন যাওয়া আসা ।

দুদিন পর জাতীয় আনন্দ মহোৎসব । ঐ উৎসবের জন্য বাচ্চাদের ভালো করে গড়ে তুলবে- তা না । এক সপ্তাহ আগেই স্কুল বন্ধ- আনন্দের ছুটি । আনন্দ মহোৎসবের জন্য ছেলেকে উত্তমরুপে প্রস্তুত করতেই স্পেশাল কোচিং । ছেলে বাবার হাত ধরে হেটে যায় ।

বাবা একটানা বকে যায় ছেলেকে উদ্দেশ্য করে । তুমি যত বেশি কদর্য হবে, যত বেশি নোংড়া হবে- বেড়ে যাবে তোমার টিকে যাবার সম্ভাবনা । পঙ্কিলতায় যত তুমি ডুবে যাবে, ততোই বেঁচে থাকার রসদ পাবে । শুভ চিন্তা শুভকর্ম আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে, ওটা তোমার প্রাচীন মা'কেই ভাবতে দাও । ছেলে মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বাবার সাথে হেটে যায় ।

পথ চলতি কয়েক যুবক তাদের দিকে একদলা কাদা ছুড়ে দেয় । চোখ মুখ পোষাক পরিচ্ছদ সব পচা কাদার দুর্গন্ধে ভেসে যায় । বাবা সাথে সাথে তার শ্রেষ্ঠ সংগ্রহ থেকে দু'চারটি সেরা গালি তাদের দিকে ছুড়ে দেয় । যুবকেরা উল্লাস করতে করতে চলে যায় । একরাশ বিবমিষা ছেলেটাকে আঁকড়ে ধরে, পচা কাদার ডোবায় যেন সে সাঁতার কাটছে ।

বাবা ছেলের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি ছুড়ে দেয় । এতদিন ছেলেকে স্কুলে পড়িয়ে কোচিং করিয়ে কিছুই শেখাতে পারেনি বলে আহাজারি করে । তোমার দিকে কাদা ছুড়লে তুমি তাদের দিকে কুকুরের মল ছুড়ে দিবে । নোংড়া খিস্তি দিয়ে তাদের সম্ভাষণ জানাবে । এত দিন ধরে তাহলে কি শিখছ! কোচিংয়ে আজ চুড়ান্ত প্রস্তুতির দিন ।

জাতীয় আনন্দ মহোৎসবের ইভেন্ট গুলো আজকে ডেমো করে দেখাবে । সেই উৎসবের প্রতিটা পর্বের আনুষঙ্গিক নিয়মগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে শিখিয়ে দিবে । ভবিষ্যত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার প্রথম পরীক্ষায় ছেলেটি অবতীর্ণ হবে আগামিকাল । উৎসবের আগের রাত থেকেই ঘরে ঘরে পৈচাশিক আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় । ভোর হতে দলে দলে মানুষ ছুটে চলে জাতীয় স্কয়ারের দিকে, মহোৎসবের মুল ভ্যেনু যেখানে ।

লাখো কোটি মানুষের পদচারনায় মুখরিত হতে থাকে জাতীয় স্কয়ার । ছেলেটির বাবার উৎসাহের শেষ নাই । সেই সকাল থেকেই তার বকাবকির আতিশত্য বেড়ে যায় । সারা বছর জমিয়ে রাখা সবচেয়ে নোংড়া কাপড়ে সজ্জিত হওয়া উৎসবের নিয়ম । বাবার উৎসাহে ছেলেরও উৎসাহ বেড়ে গিয়েছে বহুগুন ।

এই প্রথমবারের মত সে আনন্দ মহোৎসবে যেতে পারছে । বাবার বকাবকিতে মা ও তৈরি হয়ে নেয়, গোপনে সুঁই-সুতো-নকশাকাপড়ের ফ্রেম নিতে ভুলেন না তিনি । রাস্তায় নেমে প্রথা মত প্রথমেই তারা ড্রেন থেকে ময়লা কাদা আবর্জনা তুলে নিজেদের ভালোমত মাখিয়ে নেয় । এই সময় নিজের বাবা-মা পূর্বপুরুষদের শাপশাপান্ত করার নিয়ম । বাবা কঠিন নিয়মানুবর্তি, চিৎকার করে করে পূর্বপুরুষের গুষ্টি উদ্ধার করে ।

ছেলেও বাবার সাথে যোগ দেয় তার পূর্বপুরুষকে গালি দিবার হোলিতে । পুরো রাস্তা জুড়ে উৎসবগামী মানুষের পদভারে মুখরিত । ময়লা এঁটোকাদা দুর্গন্ধ মেখে সবাই চলেছে উৎসব পথে । কাদাছোড়াছুড়ি আর পৈচাশিক গগণ বিদারি চিৎকার উল্লাসে মাতোয়ারা সবাই । জাতীয় স্কোয়ারে প্রবেশদ্বারের কাছে এসে মায়ের পথ চলা হঠাৎ থেমে যায় ।

ছেলেটাকে দু'হাতে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন মা । বাবা সমানে তাড়া দেয়, আগে আগে না পৌছালে উৎসবের সামনের সারিতে থাকা যাবে না । মুল মঞ্চবেদির কাছে থেকে উৎসব দেখার মজাই আলাদা । আর এর জন্যেই সারা বছর ধরে নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি । বাবার চিৎকারেরও মা নড়েনা, ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে চুপটি দাড়িয়ে থাকে ।

বাবা এবার তার উপর চুড়ান্ত রুপে চড়াও হয় । মুখের অশ্রাব্যতার সাথে যোগ হয় শারীরিক আঘাত । বাবা যেন হয়ে উঠে সাক্ষাৎ পিচাশ । তবু মা অনঢ়, অটল । পৈচাশিকতার গন্ধ পেয়ে তাদের ঘিরে ধরে কিছু অতি উৎসাহী আনন্দ মহোৎসব যাত্রীর দল ।

বিভীষিকাময় স্লোগানে মেতে উঠে তাদের চারপাশ । বাবা এবার দাঁতমুখ খিচিয়ে মা'কে শাসায় । তুমি কি করছ বুঝতে পারছ! উৎসবের স্বেচ্ছাসেবীরা এখনই তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে । পৃথিবীতে যে কয়টি শুভচিন্তাধারী মঙ্গলাচারী খুঁজে পায়, সবাইকে ধরে নিয়ে আসে এই উৎসবে । স্কয়ারের কেন্দ্রে মুল বেদীতে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশাখায় তাদের জীবন্ত পুড়ানো হয় ।

আধপোড়া মানুষের বীভৎস চিৎকারের সাথে সাথে হর্ষধ্বনি বেজে উঠে পুরো উৎসব জুড়ে । আনন্দযাত্রীরা বেদি পরিভ্রমনের সময় আধপোড়া মানুষের দিকে উত্তপ্ত তৈল আর ক্ষার ছুড়ে দেয় । অর্ধপোড়া মানুষটি যতক্ষন যন্ত্রনায় ছটফট আর আর্তচিৎকার করতে পারে ততক্ষন ধরে চলে এই পাশবিক যন্ত্রণা দান । তারপর মরে গেলে পুরো শরীরটা উন্মুক্ত কড়াইয়ে ভেজে পোড়া মাংসগুলো ছুড়ে দেয়া হয় শুভ্যার্থিদের কাছে । সোমরসে ভিজিয়ে সেই উৎকৃষ্ট প্রসাদ ভোগ করে প্রতিটি আনন্দযাত্রী ।

একের পর এক মঙ্গলাচারীকে আনা হয় বেদিতে । তাদের যন্ত্রণাদায়ক আর্তচিৎকার রাঙিয়ে দেয় মহোৎসব । সেই বীভৎস দৃশ্য আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই উপভোগ করে । তেরো বছর বয়সী বাচ্চাদের জোর করে তা দেখানো হয় । যেন এই বাচ্চারা সব ধরণের বিভীষিকার সাথে ছোট থেকেই অভ্যস্ত হয়ে যায় ।

যাবতীয় কদর্যতা, পন্কিলতা, বীভৎসতাকে যেন তারা জীবনে আদর্শরুপে গ্রহন করতে পারে । আর তাহলেই তারা এই গ্রহে অভিযোজিত হতে পারবে, বেঁচে থাকতে পারবে বংশপরষ্পরায় । "তুমি কি চাও আমার ছেলে তোমার আধপোড়া মাংস খেয়ে তার জীবনে সারভাইভের প্রথম পাঠ নিবে"?? ঘিরে থাকা জনতা সোল্লাসে চিৎকার করতে থাকে । "একে ধরে বেদিতে নিয়ে যাও । এই মঙ্গলাচারিনীকে সবার আগে পোড়াও" ।

সমবেত জনতা চিৎকার আর হর্ষধ্বনি দিতে দিতে মায়ের দিকে আসতে থাকে । যেন এক্ষুনি ছিড়েফুড়ে খেয়ে নিবে কাঁচা হাড় মাংস শরীর । আগ্রাসী জনতার পাশবিক চিৎকারে মিলিয়ে যায় বাবার উল্লম্ফন । হায়েনা দলের ঝাঁপিয়ে পড়ার পূর্বমুহূর্তে মা চোখ খুলেন । ধীরে ধীরে মাথা উপরে তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন তিনি ।

অপার্থিব হাসির আলোকছটায় থমকে যায় সবাই । উল্লসিত জনতার চোখ মুখ থেকে যুগপ্রাচীন কদর্যতার পর্দা সরে যেতে থাকে । ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে আসা প্রাচীন অবয়ব নব রুপে দেখে তারা হতবাক হয় । বৃষ্টিধারায় স্নাত মা পরম আদরে ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে চুমু খান । মঙ্গল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে শাড়ীর আঁচলে লুকিয়ে রাখা সুঁই সুতো ফ্রেম বের করেন তিনি ।

সেখানেই দাঁড়িয়ে সুইস ভয়েল কাপড়ে রঙীন নকশা বুনায় মনযোগী হন ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.