_________________সেলাই গাছের কারখানা _______________________________________
উৎপলকুমার বসু
অগ্নি যাহাকে দগ্ধ করিতে পারে না
কবে শেষ হলো আধুনিকতার যুগ?
কেউ কেউ বলেন, ১৮৮৯ সালে ৩ জানুয়ারি যেদিন চিকিৎসকরা জানলেন যে নীটশে সম্পূর্ণ পাগল হয়ে গেছেন।
আরেক দল বলেছেন, ১৫ জুলাই ১৯৭২ বিকেল তিনটে বত্রিশে যখন আমেরিকার সেন্ট লুইস শহরের একদল নিুমধ্যবিত্ত নাগরিক তাদের আধুনিক বহুতলে বাসগৃহ কমপ্লেক্স বোমা উড়িয়ে দেয়। ঐ বাড়িগুলি কর্বুসিয়ের-এর ‘মেশিন ফর লিভিং’ বলে খ্যাত হয়েছিল। যেদিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি ঘাতকের গুলিতে নিহত হন (১৯৬৩), অনেকের মতে, তখনই আধুনিকতার যুগ শেষ হল।
এই তালিকায় আধুনিকতার আরো একটি সম্ভাব্য অন্তিম মুহূর্তের উল্লেখ আমি করে থাকি।
বুঝি একটু দুর্বিনয়ের ছোঁয়া লাগবে। তা পৃথিবীর সব দাবিই অল্পবিস্তর দুর্বিনীত।
আমি বলি ১৯৭৮ সালের মধ্য বৈশাখে যখন ফালগুনী রায় ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিশন’ আমার হাতে তুলে দেয়। বই বললে অবশ্য সেই ক্ষীণ সংগ্রহটিকে অপ্রয়োজনীয় সম্মান দেখানো হবে। তখন বেলা এগারোটা।
ফালগুনী শুখো নেশায় চুর। ফুটপাতে চলছে। বইটি এগিয়ে দিতেই আমার সন্দেহ হয় এটি পর্নোপুস্তক কি না। সেইভাবে, গোপনে, সে বইটি আমার হাতে গুঁজে দেয় এবং আমি খানিকটা চমকেও উঠি। কেননা তাকে আমি চিনতাম না।
সে তখন আমার কানে কানে কানে বলে-পট্টভির পরাজয়, আমার পরাজয়।
ঐ তার সঙ্গে আমার প্রথম ও শেষ দেখা।
তারপর কতজনের কতশত কাব্যগ্রন্থ বেরোল, হারিয়ে গেল ও পুরস্কৃত হল (এবং হল না), এডিশন হল (এবং হল না), কত কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকাশক হাত নেড়ে বলে গেলেন, না না, কবিতার বইয়ের সেল-টেল কিছু নেই।
কিন্তু সবকিছুর উপর আমাদের এই লেন-দেন দেওয়া-থোওয়া, পাওনা গণ্ডার সমাজসাহিত্যের উপর- ফালগুনী রায়ের এই ভয়ঙ্কর বই আততায়ীর হাসির মতো আজো অম্লান। কেউটের চোখের মতো নিষ্পলক তার চোখের চাউনি।
আটের দশকের প্রথম দিকে ফালগুনী মারা যায়। অনতিকাল পরে মারা যায় ওর দাদা তুষার রায়, যে ছিল আমার বন্ধু। তার কাছে শুনেছিলাম যে ফালগুনী নাকি শেষদিকে এখানে-ওখানে আমার খোঁজ করে বেড়াত। কেন, কে জানে?
ফালগুনীর সৎকারে কোনো ধুমধাম হয়নি। সামান্য কয়েকজন শ্মশানবন্ধু ছিলেন।
বিউগল বাজে নি। একুশটি তোপধ্বনিও হয়নি।
খোলা চিতায় তার অবহেলিত দাহ হয়। বৈশাখের তপ্ত বাতাসে, আজ যেমন তার কবিতার বইয়ের পাতাগুলি, প্রায় তেমনই অবহেলায়, উল্টে যাচ্ছে নিজে নিজেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।