মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা কিংবা অক্ষমতা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত। তা হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রন
ইদানিং অনেক বেশি ঘুরে বেড়ানো হয় এখানে সেখানে। সাথে অনেকের মতন থাকে আমার সবচেয়ে কাছের আর প্রিয় সঙ্গী ক্যামেরা। প্রকৃতি আমার অনেক ভালো লাগে। তাই ল্যান্ডস্কেপ তোলার ঝোক বেশি।
ভালো লাগে মানুষের জীবন যাত্রা। মানুষের চাল চলন। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন যাত্রা। এজন্য ভালো লাগে লাইফ স্টাইলের ছবি তুলতে। অবশ্য আমি অনেক বেশি বেশি নবিশ এই ধরনের ছবি তোলার জন্য।
আর একটা জিনিষ আমাকে অনেক বেশি টানে। শিশুদের নিষ্পাপ মুখ। পোর্ট্রেট তুলতে আমার তেমন একটা ভাল লাগে না। তবে শিশুদের নিষ্পাপ এক্সপ্রেশন গুলো কেমন যেন বুকের মধ্যে বিধে। যত জায়গায় গিয়েছি, সব শিশুরা এক।
এরা যুদ্ধ করছে ভাল ভাবে বেঁচে থাকার। তারপরেও মিষ্টি হাসিটা ছেয়ে আছে কোথাও না কোথাও। চেষ্টা করি আনন্দময় মুহুর্তের ছবি তুলতে। মানুষের কষ্টকে ফ্রেম বন্দী করতে ভাল লাগে না। মানুষের দুর্বলতাকে আড়াল করে রাখাই শ্রেয় মনে হয়।
সবসময় সম্ভব হয় না। তাই চলে আসে তাদের অসহায়ত্বের কিছু মুহুর্ত। যে সব জায়গায় ঘুড়ে বেড়ানো হয়, শহরের আভিজাত্য ও কাঠিন্য থেকে অনেক দূরে। তাই অনেক বেশি সরল তাদের জীবনযাপন। এই সারল্য খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
আর এই সারল্য এবং সংগ্রামের বৃত্তেই বন্দী এরা সবাই। আমার অসাধারন শৈশব, অনেক সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠা আর ওদের এই সুবিধা বঞ্চনা ওই সব মুহুর্তে আমাকে ভাবায়। তাদেরকে নিয়েই এই পোষ্ট। আমার খুব প্রিয় একটা নিক বৃত্তবন্দী। তাকে বলেছিলাম তার নিকটা কোনো একদিন ধার নিব।
আজ নিলাম।
এটাই আমার প্রথম ছবি ব্লগ পোষ্ট। এই পোষ্ট উৎসর্গ করলাম বৃত্তবন্দী আর অপসরা আপু কে।
বিঃদ্রঃ ছবিগুলো ফটোসপে খানিকটা (কালার,এক্সপোজার,কন্ট্রাস্ট) এডিট করা। হয়তো অনেকেই এটা ভাল চোখে দেখেন না।
তাই যাদের ভাল লাগবে না তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থি। প্রথম ছবিটা বিজয় দিবসের দিন শহীদ মিনারের সামনে থেকে তোলা। বিজয় দিবসের দিনে শহীদ মিনারের সামনে বাদাম বিক্রি করছিল ছেলেটা। বিজয়ের উৎসবে বিজয়ের সাজে পতাকা মাথায়।
ফুটফুটে মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করেছি দুবার।
জবাব দেয়নি। জিজ্ঞেস করলাম তার একটা ছবি তুলতে পারি কিনা। বললো নাহ। আমি খুব আফসোস করতে লাগলাম, কারন তার সাজ পোশাক আর এক্সপ্রেশনটা খুব ভালো লাগছিল। পরে আবার কি মনে করে সে নিজে এসে আমাকে বললো তার একটা ছবি তুলে দিতে।
ছবিটা তুলেছি নিঝুম দ্বীপে। বাংলোর সামনে।
নিঝুম দ্বীপ যাবার সময় আমাদের লঞ্চ মনপুরা স্টেশনে দাড়ালো এসে। দেখলাম ছোট একটা স্টেশনে ভোরের অসাধারন আবহ। লঞ্চ ঘাটে কিছু শিশু অপেক্ষা করছে, যদি কারো কোনো কুলি লাগে, যদি ক'টা টাকা পাওয়া যায়।
আমি লঞ্চের তৃতীয়তলায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। ক্যামেরা ভিউ ফাইন্ডারের মধ্য দিয়ে। অপেক্ষা করছিলাম যদি একবার উপরের দিকে তাকায়। দেরি করিনি সুযোগ পাবার সাথে সাথে।
ঘাস কেটে নিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটা।
সন্ধ্যে হয়ে আসছিল প্রায়। নিঝুম দ্বীপ বিচ থেকে ফিরছিলাম। ঝুপিটা মাথায় নিতেই দেখলাম একটা অন্যরকম আবহ হয়ে গেল সিল্যুট হিসেবে। সাথে সাথেই ক্লিক।
মেয়েটাকে দেখতে অদ্ভুত লাগছিল।
মাথায় চুবিয়ে তেল দিয়ে এত সুন্দর করে চুল আচড়ে এসেছে। ছোট্ট ঝুটিতে একটা লাল ব্যান্ড বাধা। জামা পরেনি কোনো। মেয়েটার চেহারায় কিযে অদ্ভুত একটা মায়া ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না।
এই বাচ্চাটার ছবি তুলবনা তুলবনা করেও তুলে ফেললাম।
এই বয়সের শিশুদের ছবি তুলতে গেলেই এরা কান্না শুরু করে দেয়। কারন মা থাকে না আসে পাশে। নিঝুম দ্বীপের মানুষদেরকে একটু বেশি রক্ষনশীল মনে হয়েছে। মা শিশুর ছবি আগেও অনেক তুলেছি। বেশিরভাগ সময় বেশ আগ্রহ নিয়ে ছবি তোলে সবাই।
তবে ওখানে সবাই ক্যামেরা দেখেই দৌড়ে ঘরে ঢুকে যায়।
এটাও নিঝুমদ্বীপে তোলা। মেয়েটার বিমর্ষ চেহারা দেখে খুব খারাপ লাগছিল। মেয়েটার সাথে ওর বাবা আর ভাইও ছিল। সবার মাথায় অনেক কাঠ বোঝাই করা।
ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল রাস্তার পাশে বসে। অনেকক্ষন কথা হয়েছিল ওদের সাথে।
এটা দূর্গাপুরে তোলা। পাহাড়ের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির নাম দিয়েছি আমি পাহাড়ি ছেলে। কি সাবলীল ভাবে এবড়ো থেবড়ো রাস্তা দিতে হেটে চলে।
খালি পায়ে পাথর কণার উপর দিয়ে দৌড়ে বেড়ায়। ছেলেটির নাম শাহানুর। বয়স আট।
মেঠো পথ ধরে দুটি শিশু হেটে চলে বিকেলের সূর্যস্নানের মধ্য দিয়ে। খুবই অন্তরঙ্গ চলাচল।
মনে পরে যায় শৈশবের কথা। বন্ধুর কাধে হাত রেখে চলা সেই দিনগুলো।
এটা নিঝুম দ্বীপে তোলা। ওদের কাচা ঘর গুলোতে এমনই গাছের শুকনো পাতা দিয়ে আড়াল করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে আমাদের হেটে যেতে দেখে আড়াল থেকে উকি দিয়েছিল নিষ্পাপ চেহারার এই ছেলেটি।
ক্লিক।
এই ড্যাসিং কিউট বাচ্চাটার ছবি তুলেছি দূর্গাপুরে। মুড়ির মোয়া কিনে দিয়েছিলাম। সেটা খেতে খেতে আমার নাম জিজ্ঞেশ করছিল। কি যে কিউট বাচ্চাটা।
সমেস্বরী নদীতে নৌকায় চরে যাচ্ছিলাম। দেখলাম মেয়েটি নদীর কিনার ঘেষে কি যেনো করছে। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো। আমার মা এখনো মাঝে মাঝে আমি কোথাও যাচ্ছি শুনলে ভয় পায়। বিশেষ করে নদী, সমুদ্র, হাওড়।
আরো স্পেসিফাই করলে পানি। আর এই ছোট্ট মেয়েটা ভাঙ্গতে থাকা নদীর কূল ঘেষে খেলছে। অদ্ভুত।
কাউকে নিশ্চয় বলে দিতে হবে না যে এই ছেলেটি তার চেয়ে বড় সাইজের কোদালটা নিয়ে মাটি কাটতে যাচ্ছে। কাধে নেয়া কোদালটা দেখেই আমার মনে হলো এটা নিয়ে মাটিতে কোপ দিতে আমারই অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
মৃত প্রায় সমেস্বরীর ব্রিজে তোলা এই ছবিটি। শিশু দুটো কাজের সন্ধানে বের হলো বোধহয় সাত সকালে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।