আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পার্কের জায়গায় ইন্দিরা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু স্মৃতিমঞ্চ নির্মাণ হবে



সরকারের রোষানলে পড়েছে ঢাকার শহীদ জিয়া শিশু পার্ক। শিশুদের বিনোদনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এ পার্কের এখন বেহাল অবস্থা। পার্কের ভেতরে থাকা খেলনা, বিনোদনের বিভিন্ন সরঞ্জামের বেশিরভাগই নষ্ট, অকেজো, ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে। সংস্কারের উদ্যোগ নেই সরকারের। সঙ্কুচিত হয়ে আসছে পার্কের জন্য নির্ধারিত জায়গা।

এ জায়গায় ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তর সালের সাত মার্চে দেয়া ভাষণের স্মৃতিমঞ্চ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঞ্চ নির্মাণের পর যে জায়গাটুকু বাকি থাকবে, সেটুকুতে কোনোরকমে গুঁজে দেয়া হবে পার্কটিকে। শাহবাগে অবস্থিত এ পার্ক এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘শিখা চিরন্তন’-এর মাঝখানের দেয়াল তুলে দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলামও এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বিভিন্নরকমের নতুন সরঞ্জাম কিনে পার্কটি আধুনিক করার যে ‘মাস্টার প্ল্যান’ করা হয় বছর দুয়েক আগে, সেটি আলোর মুখ দেখবে না। এমনকি এক সময় শিশু পার্কের আলাদা পরিচয় থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞরা। তারা বলছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় পার্কটি ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কবলে পড়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম বিভিন্ন স্থাপনা, এমনকি ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলার যে ভিশনে নেমেছে সরকার, এটি তারই একটি অংশ।

’ জানা যায়, সাবেক ও চাকরিরত কয়েকজন কর্মকর্তা, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন প্রকৌশলী মিলে পার্কটিকে আরও আধুনিক, শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বছর দুয়েক আগে ‘মাস্টার প্ল্যান’ করেন। গত ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এ প্ল্যানের অনুমোদন দেন। এতে রয়েছে নানা সরঞ্জাম কেনাসহ পুরো পার্ককে শিশুদের কাছে নিরেট বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে সাজানো। পরিকল্পনায় মনোরেল ট্রেন, রোলার কোস্টার, বেলুন টাওয়ার, ব্যাটারি কার, বাম্পার, ওয়াটার স্পল্গাশ ও জেডবোট কেনার কথা রয়েছে। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মঞ্চ নির্মাণ হলে প্ল্যান বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে তারা মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্কের সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পার্কের জায়গায় কোনো মঞ্চ নির্মাণের কথা সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের এখনও জানানো হয়নি। নানা মাধ্যম থেকে আমরা এরকম সিদ্ধান্তের কথা শুনছি। তবে আশা করি, কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শিশুদের দিকটাও সরকার ভেবে দেখবে। তথ্য মতে, ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পনের একর জায়গাজুড়ে এ পার্ক নির্মিত হয়।

জিয়াউর রহমান চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে শিশুদের জন্য নির্মিত সেখানকার বিনোদনকেন্দ্রগুলো দেখে দেশে এরকম একটি পার্ক করার সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলেই এ শিশু পার্ক তীব্র রোষানলের শিকার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার ক্ষমতায় আসার এগার মাসে পার্কটি করুণ অবস্থা ধারণ করেছে। পার্কের সরঞ্জাম অযত্ন ও সংস্কারের অভাবে হয়ে উঠেছে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে এ পার্কে আসতে চান না।

ফলে শিশুরাও বঞ্চিত হচ্ছে বিনোদন থেকে। দর্শনার্থী, বিনোদন পিয়াসী শিশুর উপস্থিতি আগের তুলনায় তাই বেশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বরতদের কয়েকজন। সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, ‘পার্কের প্রতি সরকারের অবহেলাই দর্শনার্থী কমে যাওয়ার কারণ। ’ পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দেয়া হিসাব মতে এখানে খেলনাসহ তেরটি বিনোদনের সরঞ্জাম রয়েছে। তবে দুটি সরঞ্জামের অস্তিত্ব তাদের হিসাবের খাতায় থাকলেও বাস্তবে নেই।

সরেজমিনে গেলে এগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। রোলার স্কেটিং, বেবি সাইকেল, তীর-ধনু এখন শুধুই স্মৃতি। পার্কে আগত শিশুদের কাছে বিনোদনের অন্যতম সরঞ্জাম ‘বিস্ময় চক্র’, ‘আনন্দ ঘূর্ণি’। এ দুটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান জানান, ‘পুরনো হয়ে যাওয়ায় সরঞ্জাম দুটি অচল হয়ে গেছে।

নতুন দুটি কেনার প্রস্তাব বার বার সরকারকে জানিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না। রোমাঞ্চ চক্রও শিশুদের রোমাঞ্চিত করতে পারছে না সৌন্দর্যের অভাবে। সরঞ্জামটির দু’পাশে থাকা দোলনাগুলোতে অযত্ন, অবহেলায় ধুলোবালি জমে একাকার হয়ে আছে। ‘ফুলদানি আমেজ’, ‘উড়ন্ত বিমান’, ‘চাকা পায়ে চলো’ আর নেই। এগুলো বিকল থাকায় শিশুদের কাছে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে পার্কটি।

আগের মতো তাই শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে না শিশু পার্ক। গতকাল ধানমন্ডির গৃহিণী শাহানা খাতুন দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আসেন এ পার্কে। তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা বায়না ধরেছে, তাই নিয়ে এলাম। এসে দেখি এটি নামেই কেবল শিশু পার্ক। আসলে থুড়থুড়ে বুড়ো হয়ে গেছে।

’ নয় বছরের মেয়েকে নিয়ে পার্কে আসা গুলশানের ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ খান আমার দেশকে মত দেন—‘শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশ মিলিয়েও শিশুদের বিনোদন লাভের জায়গা হাতেগোনা কয়েকটা মাত্র। তাদের মানসিক বিকাশের কথা চিন্তা করে হলেও এ পার্ক নিয়ে সরকারের হিংসাত্মক মনোভাব বদলানো উচিত। ’ পার্কে এসে ‘লমম্ফ-জম্প’-এ না চড়লে শিশুদের আনন্দ যেন পূর্ণ হয় না। এ সরঞ্জামের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এর ত্রিপলে পচন ধরেছে।

তাতে চড়ে শিশুরা আহত হয় কী-না, এ ভয়ে অভিভাবকরা চড়তে দিচ্ছে না। ঝুলানো চেয়ারের আসনগুলোও ময়লাযুক্ত। দণ্ড থেকে টানানো চেয়ারের তার জরাজীর্ণ হয়ে আছে। দুর্ঘটনার ভয়ে অনেক শিশুও এসব চেয়ারে বসতে চায় না। ব্যাটারিকার স্পটটি পড়ে আছে অযত্নে।

এটিও ধুলো-ময়লায় একাকার। পার্কের দক্ষিণ পাশে রয়েছে ক্যান্টিন, ফাস্টফুডের দোকান। ক্যান্টিনের দেয়ালে ঝুলছে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন এ পার্কে ছুটোছুটি করতে আসে অসংখ্য শিশু। সঙ্গে আসেন তাদের অভিভাবক।

অথচ বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের এদিকে খেয়াল নেই। অসাবধানতাবশত শিশুরা এ তারে জড়িয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে, এমন আশঙ্কা করেন অনেক অভিভাবক। পুরো পার্কের ভেতর অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। অভিযোগ, তথ্য কেন্দ্র থাকলেও তাতে পার্কসংক্রান্ত তথ্য লিপিবদ্ধ নেই। ৭৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলেও ঠিক রাখতে পারছেন না ভেতরের পরিবেশ।

প্রতিদিন রাত আটটা পর্যন্ত পার্ক খোলা, শুক্রবারে থাকে রাত নয়টা পর্যন্ত। রাতে দর্শনার্থী শিশু, তাদের অভিভাবককে পড়তে হয় অন্ধকারের কবলে। অন্ধকার দূর করতে আছে ১৪৮টি সোডিয়াম বাতি। তবে অনেক বাতিই গত আট/নয় মাস ধরে নষ্ট, বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। টয়লেট দুটির অবস্থাও করুণ, নোংরা।

নিয়মিত পরিষ্কার না করায় অপরিচ্ছন্ন হয়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে শিশু পার্কের দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠা করা এ পার্কে আসা থেকে শিশুদের বিরত রাখতে সরকার পরিকল্পিতভাবে নানা অব্যবস্থাপনা, সমস্যা জিইয়ে রাখছে। ’ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.