ছোট কলকাতা বলে পরিচিত কুষ্টিয়ার মোহিনী মিল এলাকা আবার জমজমাট হয়ে উঠবে। মেরুদন্ডও সোজা করে দাড়াবে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ। আসবে অর্থনৈতিক মুক্তি। কারণ আবার চালু হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম এ বস্ত্রকল মোহিনী মিল। মিলটি বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দিয়েছে সরকার।
গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক মালিক পক্ষের নিকট চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। মিল চত্বরে এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠানের। সেখানে মিলের ইনচার্জ মতিউর রহমান সরকার পক্ষের পক্ষে শাহ মখদুম গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের হাতে চাবির ব্যাগ তুলে দেন। উভয়পক্ষ একটি চুক্তিনামায়ও স্বাক্ষর করেন। মিলটি এখন আবার শাহ মখদুম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে চালু হবে বলে মালিকপক্ষ ঘোষনা দেন।
মোহিনী মিল আবার চালু হচ্ছে এ খবর শুনে এলাকার হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন অনুষ্ঠানস্থলে। তাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ছাপ। সরকার ও শাহ মখদুম গ্রুপের মধ্যে মধ্যস্থকারি সংস্থা দি পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বর্তমান এ মালিকের নিকট সরকারের ও ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। হস্তান্তরের আগেই মালিক পক্ষের নিকট থেকে ৯ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
মিল চালু হলে কর্মচাঞ্চল্য সৃস্টি হবে, বেকারত্য দুর হবে, বাকী টাকা আদায় করা সম্ভব হবে। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও বস্ত্রমন্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যে কারনে আজ এ অসাধ্য সম্ভব হয়েছে। এ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান প্রমূখ। পরে গতকাল দুপুরে দি পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড ও মালিকপক্ষ কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সেখানে শাহ মখদুম গ্রুপের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর মাহবুবুর রহমান জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যেই মিলের বিএমআরআই অংশ চালু করা সম্ভব হবে। পরবর্তিতে মিলের পুরাতন অংশ অপসারন করে সেখানে বিএমআরআই স্থাপন করে বিপুল জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান হবে। তিনি মিলটি চালু রাখার পক্ষে সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা আশা করেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা বন্ধ থাকা মিল চালু করছি। এরই অংশ হিসেবে এ মিলটি চালু হলো।
১৯০৮ সালে মোহিনী চক্রবর্তী এশিয়ার এই বৃহত্তর বস্ত্রকলটি কুষ্টিয়া শহরের ৯০ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন। মিলকে ঘিরে গড়ে ওঠে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। মিলের উৎপাদিত শাড়ি, ধুতি, কাপড় দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও রফতানি করা হতো। চক্রবর্তী সন্স এ্যান্ড কোম্পানীর অধীনে মিলটি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ব্যক্তি মালিকানায় চালু ছিল। একই বছর সরকার শত্র“ সম্পত্তি ঘোষণা করে মিলের দখল নেয়।
এরপর ১৯৮৪ সালে সরকার টেন্ডারের মাধ্রমে নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছে মিলটি বিক্রি করে। নতুন মালিক মিলের নাম পরিবর্তন করে রাখেন শাহ মখদুম টেক্সটাইল মিল। মিলটি আবারও চালু করার জন্য নতুন মালিক অগ্রণী ব্যাংক থেকে দুই কিস্তিতে ৮ কোটি ৭৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। কিন্তু মিলটি চালু না করার কারণে শর্তভঙ্গের অভিযোগে সরকার ১৯৯০ সালে একটি মামলা দায়ের করে। অন্যদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের টাকা আদায়ের লক্ষ্যে নতুন মালিকের নামে মামলা দায়ের করে।
উভয়পক্ষ এসব মামলা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই অবস্থায় মিলের অন্যান্য যন্ত্রপাতির সঙ্গে ১৯৯৪ সালের ১৮ অক্টোবর সিলগালা থাকা সত্বেও ৩০ লাখ টাকা মুল্যের ১১শ ৯৭টি ফাইবার চুরি হয়ে গেছে। মিলের ৫শ ৩৭টি পাওয়ার লুমেরও যায় যায় অবস্থা। সুতা তৈরীর কারখানা, যন্ত্রপাতি তৈরীর কারখানা দুটিরও বেহাল অবস্থা। দীর্ঘ ২২ বছর পর চালু হচ্ছে মোহিনী মিল।
প্রতিশ্র“তি দেয়ার পরও কোন সরকারই খ্যাতনামা এই মোহিনী মিল চালুর ব্যাপারে কোনই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে এই মিলকে ঘিরে ওঠা অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। ১৯৮৭ সালে এ মিলটি বন্ধ হয়ে যাবার পর অশ্র“জলে বিদায় নেয় মিলের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক। অথচ একসময় কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণ, সর্ববৃহৎ বস্ত্রকল মোহিনী মিলের অর্থে মিলটির ঝনঝন শব্দে সাথে সাথে শ্রমিকদের সারা মুখে হাসিও লেগে থাকতো। কিন্তু পরবর্তিতে মিলটিতেও লেগে যায় এলাকার নেতা নামধারী দালাল।
নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে তারা তিলে তিলে গলাটিপে হত্যা করে মিলটিকে। সেই সাথে মৃত্যু হয় হাজার হাজার মানুষের খেয়ে পরে বেচে থাকার স্বপ্ন। আজ সব উতরে আবার নতুন করে আশায় বুক বাধছে মানুষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।