আমি কইলাম মরিনাই; বুকের আগুনও নেভে নাই, কসম ক্ষুধিরামের। খালি কয়দিন ধইরা কর্পোরেট ভন্ডামিতে ডুইবা আছি আপাদমস্তক! কমরেড, মিছিল আইলে একটা টোকা দিয়া যাইয়েন।
মহানবী, যীশু অথবা গৌতম বুদ্ধের কথা ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে পড়েছি, জেনেছি। মহামানব হিসেবেই জানানো হয়েছে আমাদের। কেউ বিশ্বাস করেন, কেউ করিনা।
এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। সাঁঝবাতির রূপকথার মত করে বললে ফসলের সুষম বন্টনটাই আমার কাছে মূল কথা।
আমি আকাশ দেখেছি, খোলা চোখে যতটুকু দেখা যায় আরকি। সত্যিকারের বিশালতা সম্পর্কে ধারনাটা ওখান থেকেই পাওয়া বলতে পারেন।
হয়তো পুরোপুরি নয়।
সবচেয়ে গর্বিত হই যখন ভাবি এই খোলা চোখে আকাশের চেয়েও বড় কিছু মানুষ দেখতে পেয়েছি, ছুঁতে পেয়েছি আমার সামান্য এই হাত দিয়ে।
আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলছি।
কি অদ্ভুত এক সৌভাগ্য নিয়ে আমার জন্ম। আকাশের চেয়েও উঁচু মানুষ গুলোর সাথে একই সময়ে বেঁচে আছি। আমার সামান্য বোধ শক্তিতে এর চেয়ে বড় আর কোন প্রাপ্তি খুঁজে পাইনি আজ অবধি।
নিজের কথা যখন ভাবি, আপনাতেই কুঁকড়ে যাই, এতটাই ছোট একটা জীবন যাপন করে চলেছি। অথচ ঐ মুক্তিযোদ্ধারা মানুষই ছিলেন, আমার মতোই দেহাবয়ব, শুধু মনের দিক থেকে অসীম, সাহসের দিক থেকে স্পর্ধিত। কি অদ্ভুত, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কি করে মানুষ পারে এগিয়ে যেতে!! বেঁচে থাকা একজন মানুষ যখন নিশ্চিন্ত অবলীলায় মৃত্যুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যায় শুধুই দেশের জন্য, তাঁর চেয়েও কেউ মহান হতে পারে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
আমার ছোট কাকাকে যখন দেখতাম, শিহরিত হতাম, উনি গেরিলা ছিলেন। পরের প্রজন্মটার জন্য কষ্ট হয়।
ওরা শুধুই বইতে পড়বে এই সব মানুষের কথা যারা আকাশেরও সীমানা ঠিক করে দিতে পারতেন।
২০০৫ সম্ভবত, ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ। চারুকলার সামনে হাঁটতে হাঁটতে রেডিও শুনছিলাম বিকেলের দিকে। সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছিল কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার। পরিচয় দিতে গিয়ে একজন বলেছিলেন, আরবান গেরিলা, ...... রিজিয়ন।
আমার প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল অজানা কোন কারণে। কি স্পর্ধিত উচ্চারণ। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একবার ছুঁয়ে দেখি।
আমার নিজের কোন ক্ষমতা নেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার, অথবা শুধুই ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলার। তবে বুকের ভেতর সেই ঘৃণা টুকু ঠিকই আছে, যেমন আছে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা।
আমাদের বাসায় পাকিস্তানের তৈরি যে কোন কিছু নিষিদ্ধ। কাপড়, বাসমতি অথবা টিভি চ্যানেল। আমার ছোট্ট ভাগনীটা পর্যন্ত কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখেনা ওখানে পাকিস্তানি বিজ্ঞাপন দেখায় বলে। নেহায়েতই ব্যক্তিগত মামুলি বয়ান।
আমি বেড়ে উঠেছি আকাশ ফুঁড়ে উঠে যাওয়া কিছু মহামানবের সাথে একই সময়ে, তাঁদের কাউকে কাউকে আমি ছুঁয়েও দেখতে পেরেছি।
আমার এই সামান্য জীবনে এর চেয়ে প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।