সিরিয়া বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে দুই পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যখন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তখন অনেকেই ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। তাই ইরাক যুদ্ধের স্মৃতি বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে প্রভাব ফেলছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
ইরাক যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান সিরিয়া পরিস্থিতির তুলনা করার মতো অনেক উপাদানই রয়েছে। অস্ত্র পরিদর্শক ও গোয়েন্দাদের তৎপরতা, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ স্বৈরশাসকের অস্বীকার ইত্যাদি ব্যাপারে উভয় পরিস্থিতির মধ্যে সাদৃশ্য অনেক। তা ছাড়া, জনমনে সন্দেহের বিষয়টিও উল্লেখ করতে হয়।
পার্থক্য এই, তখনকার আলোচিত তিন চরিত্র জর্জ বুশ, টনি ব্লেয়ার ও সাদ্দাম হোসেনের পরিবর্তে এখন রয়েছেন বারাক ওবামা, ডেভিড ক্যামেরন ও বাশার আল-আসাদ।
আরও কিছু পার্থক্য অবশ্য আছে। যেমন: ইরাকে হামলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের রাস্তায় প্রায় ১০ লাখ মানুষের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছিল। তার কয়েক সপ্তাহ পরেই ইরাকে বিদেশি সেনাদের হামলা শুরু হয়। এতে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরোধীরা হতাশ হয়েছিল।
ব্রিটিশ সরকারের তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু বহু অনুসন্ধান করেও সাদ্দাম হোসেনের ভান্ডারে কথিত ব্যাপক বিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি। অথচ এ ধরনের অস্ত্র রাখার অজুহাতেই ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল।
ফরেন পলিসি সাময়িকীর নিবন্ধকার জেমস ট্রব বলেন, ইরাকে পশ্চিমা অভিযান শুরুর আগে ইউরোপের প্রতিটি দেশে গণবিক্ষোভ হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের বড় কোনো বিক্ষোভ না হলেও বহু মার্কিন এ ধরনের হামলার বিরোধী ছিল।
তবে তাদের মনে হতো, সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামাটা দেশপ্রেমের পরিপন্থী হতে পারে।
যুদ্ধ-পরবর্তী ইরাকের অবস্থা এখন সাদ্দামের স্বৈরশাসনের চেয়ে তুলনামূলক ভালো হয়েছে কি না, সে প্রসঙ্গে কেউ কেউ বিতর্ক করতে পারেন। কিন্তু সেই যুদ্ধের অর্থহীনতা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ জনগণ বুঝতে পেরেছে। যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মাত্র ২ শতাংশ মানুষ ইরাক যুদ্ধকে সফল মনে করে। আর মার্কিনদের মধ্যে এই হার মাত্র ৮ শতাংশ।
লন্ডনে অবস্থিত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ টবি ডজ বলেন, জনমনে এ ধারণা হয়েছে যে তাদের দেশ মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইরাক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আর সেই যুদ্ধ ইরাককে আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেনি। কাজেই, আবার একই ধরনের যুদ্ধে জড়ানোর পক্ষে কী যুক্তি রয়েছে?
ইরাক যুদ্ধের দৃষ্টান্ত থেকে জনগণ এখন নিজ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ও দাবির প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়েছে। তাই সিরিয়ায় এবার সামরিক অভিযান চালানোর পক্ষে যুক্তরাজ্যে জনসমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
ইরাকে অস্ত্র পরিদর্শক দলের প্রধান ছিলেন ডেভিড কে।
সেখানে কোনো রাসায়নিক অস্ত্রের সন্ধান না পেয়ে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সিরিয়া নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি ইরাকের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সেটা ওবামা প্রশাসনের কারও চোখে না পড়ার ব্যাপারটি বিস্ময়কর। ’ বিবিসি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।