জানুয়ারিতেই শুরু হচ্ছে জাতির প্রত্যাশিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তদন্ত সংস্থা শুরু করবে তদন্ত কাজ। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। আজ রোববার রেল ভবনের পাশে আবদুল গণি রোডে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ভবনে বিশেষ আদালত স্থাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। প্রসিকিউশন সেল ও তদন্ত সংস্থা নিয়োগ প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে আজ সচিবালয়ে বৈঠক করবেন বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গতরাতে 'সংবাদ'কে বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। জানুয়ারির প্রথম দিকেই শুরু হবে তদন্ত। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্নের পথে। এ মাসের মধ্যেই প্রসিকিউশন সেল ও তদন্ত সংস্থা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।
বিচার কাজ পরিচালনার জন্য বাজেটে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য রাজধানীর ১৪ নং আবদুল গণি রোডের একটি সরকারি ভবনে বিশেষ আদালত স্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে ভবনটিতে সরকারের তিনটি অফিস রয়েছে।
অফিসগুলো হচ্ছে- নিবন্ধন পরিদপ্তর, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং প্রশাসনিক এপিলেট ট্রাইব্যুনাল। এই অফিসগুলো কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে সরিয়ে নেয়ারও প্রক্রিয়া চলছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে সরকার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এক্ট-১৯৭৩-এর কিছু ধারা সংশোধন ও সংযোজন করেছে।
এই সংশোধনের আগে আইন মন্ত্রণালয় আইন কমিশনের মতামত গ্রহণ করে। আইনের উল্লেখযোগ্য দু'টি পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগের আইনে মামলার বিচার কাজ, শুনানি, তদন্ত সবই ইংরেজি ভাষায় করার বিধান ছিল। সংশোধিত আইনে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বাংলাতেও করার বিধান করা হয়েছে। আগের আইনে শুধু ব্যক্তি অপরাধের বিচার করা হতো। কিন্তু সংশোধিত আইনে ব্যক্তির পরিবর্তে গ্রুপ বা সংঘবদ্ধ দলের অপরাধ বিচারের আওতায় আসবে। আগের আইনে কোন সামরিক কর্মকর্তাও যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারক হতে পারতেন।
কিন্তু সংশোধিত আইনে কেবল সিভিলিয়ান বিশেষ করে হাইকোর্ট বা জেলা জজ আদালতের বর্তমান বা সাবেক বিচারকরা এই মামলার বিচারক হতে পারবেন।
জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে বিচারক থাকবেন সর্বোচ্চ ৪-৫ জন। সরকারের পক্ষে আইনগত সহায়তার জন্য থাকবেন প্রসিকিউটর। অপরাধীদের আইনগত সহায়তায় থাকবেন আরও কয়েকজন আইনজীবী। সাক্ষী ও পর্যবেক্ষকদের জন্য থাকবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে একটি আলাদা তদন্ত সংস্থা গঠন করবে সরকার। এই সংস্থা মামলার তদন্ত করবে। পুলিশের সাবেক কোন শীর্ষ কর্মকর্তা এই তদন্ত সংস্থার প্রধান হতে পারেন বলে জানা গেছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ছিল তাদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ওই আদেশের আওতায় নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৭ হাজার ৪৭১ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের বিচারের জন্য তৎকালীন সরকার ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এই আইনের আওতায় '৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৮৪৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে ৭৫২ জন দোষী প্রমাণিত হয় ও বাকি ২ হাজার ৯৬ জন ছাড়া পায়। ১৯৭৫ সালে এই আইন বাতিল হয়ে গেলে অভিযুক্ত দ-প্রাপ্ত সবাই মুক্তি পেয়ে যায়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এক্ট ১৯৭৩-এ আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর মধ্যে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অপরাধের বিচারের কথা বলা হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে_ হত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুটতরাজ এবং জোর করে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সেক্টরস কমান্ডারস ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যতদিন বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হবে ততদিন তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তারা বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছি। সময়মতো প্রমাণপত্র আদালতে হাজির করব।
ইতোপূর্বে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যুদ্ধাপরাধীদের প্রাথমিক তালিকায় ৫০ জনের নাম প্রকাশ করেছে।
তারা হলেন_ জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা একেএম ইউসুফ, নির্বাহী সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামান, মাওলানা আবদুর রহিম, আব্বাস আলী খান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, হামিদুল হক চৌধুরী, খাজা খায়রুদ্দিন, মাহমুদ আলী, এএসএম সোলায়মান, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জুলমত আলী খান, খান আবদুস সবুর, মাওলানা ফরিদ আহমদ, শাহ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মাওলানা আবদুল মান্নান, ডা. আবু মোতালেব মালেক, মো. ইউনুস, এবিএমএ খালেক মজুমদার, এ এন এম ইউসুফ, নুরুল আমীন, এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, আবদুল মতিন, এডভোকেট মো. আইনুদ্দিন, মাওলানা নুরুজ্জামান, মাওলানা মো. ইসহাক, গোলাম সারোয়ার, মো. আখতার উদ্দিন আহমদ, মাওলানা আবদুস সোবহান, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল বাছেদ, আবদুল মতিন ভূঁইয়া, মো. আবদুল কাশেম, ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, মীর কাশেম আলী, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ, মো. আবদুল হান্নান, ব্যারিস্টার কোরবান আলী, আশরাফ হোসেন, এডভোকেট আনসার আলী, মো. আয়সার, আবদুল মজিদ তালুকদার, নওয়াজেদ আহমেদ, একেএম মোশারফ হোসেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।