আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমলার বাণিজ্যিক চাষ

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার সর্দারপাড়া গ্রামের অচিন্ত্য কারকুন, বেতবাড়ি গ্রামের আছিরউদ্দিন, সদরের কাহারপাড়া গ্রামের জিতেন চন্দ্র, খোলাপাড়ার আবদুল জলিল, বড়বাড়ীর কাক্কা প্রধান, চছপাড়ার মহিরউদ্দিন কমলা উত্পাদনকারী চাষী। এরা সবাই ৬ থেকে ১০ বছর ধরে কমলা উত্পাদন করে আসছেন। তাদের মতো আরও অর্ধশত কমলা চাষীর ২ হাজার ৯১৮টি কমলা গাছের মধ্যে ৩শ’টিতে কমলা ফলছে। প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২৫০ থেকে এক হাজারের বেশি কমলা ধরেছে। শুরুতে এরা সবাই শখের বশে বাড়ির আশপাশে কমলার চারা রোপণ করেন।

কয়েক বছর পর এসব গাছে ধরে সুস্বাদু কমলা। অচিন্ত্য কুমার কারকুন নিজস্ব উদ্যোগে বাড়িতে কমলা গাছ রোপণ করেন। এসব গাছের উত্পাদিত কমলার রঙ, আকার, স্বাদ ভারতীয় কমলার মতো বলে তিনি জানিয়েছেন। তার রোপণ করা গাছে ২শ’ থেকে এক হাজারটি পর্যন্ত ফল ধরেছে। তিনি জানান, জেলার মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে উন্নত জাতের নাগপুরী খাসিয়া কমলার চাষ করা যাবে।

সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল কমলা চাষের উপযোগী। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলেও কমলা চাষ হয়। একই জলবায়ু, পরিবেশ ও মাটি হওয়ায় ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার মতো পঞ্চগড় জেলায়ও ব্যাপকভাবে কমলার চাষ সম্ভব। আছিরউদ্দিন জানান, ২০০৪ সালে স্থানীয় একটি নার্সারি থেকে চারটি চারা বাড়ির আঙিনা ও পাশে লাগান। ২০০৭ সালে প্রথম ফল আসে।

তবে পরিমাণে কম ছিল। এর পর থেকে ফলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ বছর একটি গাছেই ৪শ’ থেকে ৫শ’ ফল ধরেছে। ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কমলার ভারে গাছের ডালগুলো নুয়ে পড়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি বড় আকারের বাগান গড়ে তুলতে চান।

পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়ায় কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনার খবর ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে কৃষি মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে সারা দেশে কমলা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে সয়েল রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বার্ক) প্রতিনিধিদের এই টাস্কফোর্সের সদস্য করা হয়। এই টাস্কফোর্স দেশের ১০টি জেলার ৪০টি উপজেলার জলবায়ু, মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী বলে রিপোর্ট দেয়। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা বাদে সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও আটোয়ারী উপজেলার মাটি কমলা চাষের উপযোগী বলে উল্লেখ করা হয়। পঞ্চগড়ের চারটি উপজেলায় ১৪,০৫০ হেক্টর জমি কমলা চাষের উপযোগী।

২০০৬ সাল থেকে পঞ্চগড়ে শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ। দেবীগঞ্জ ছাড়া চার উপজেলাতে খাসিয়া জাতের কমলা চাষ খুব জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। কমলা উন্নয়ন প্রকল্প অফিস জানায়, কমলা চাষের পদ্ধতিকে তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। পুরনো গাছের পরিচর্যা, বসতবাড়ির আশপাশে পট প্রদর্শনী এবং বাগান প্রদর্শনী। এরই মধ্যে পুরনো এক হাজার গাছের পরিচর্যা করা হয়েছে।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৯৩টি বাগানে ৩৫ হাজার এবং বসতবাড়ির আশপাশে ৩৫ হাজার কমলার চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় দেড় হাজার চাষীকে কমলা চাষের কলাকৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কমলার চারা সরবরাহের জন্য একটি নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে। এই নার্সারিতে ৫০ হাজার চারা উত্পাদন করা হয়েছে। পঞ্চগড়ে শীত বেশি হওয়ায় কমলা চাষের জন্য অনুকূল।

কমলা পরিপকস্ফ হওয়ার সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা তারও বেশি হলে মিষ্টতা সবচেয়ে বেশি হবে। যা সিলেটের কমলার চেয়ে ভালো হবে। কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের পঞ্চগড়ের উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার পাল বলেন, ২০১১ সালের মধ্যে পঞ্চগড় জেলার ২শ’ হেক্টর জমি কমলা চাষের আওতায় আসবে। Click This Link
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.