আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাইশ মাস বেতন নেই

রঙ্গিলা বন্ধুরে....... i_mahmud2008@yahoo.com

ইসমাইল মাহমুদ প্রায় ৫ কোটি টাকা স¤প্রসারন ব্যায়ে নির্মিত শ্রীমঙ্গল রসিডেন্সিয়াল মডেল গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ভবিষ্যত এখন দ্যোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তার পহর গুনছেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তার উপর এটি প্রতিষ্টার ২২ মাস শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৮জন প্রভাষক ও ৫ জন কর্মচারী। তবে দীর্ঘ ২১ মাস বেতন ভাতা না পেলেও খেয়ে না খেয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অভ্যাহত রেখেছেন তারা। বেতন হবে স্কুল এমপিও ভুক্ত হবে শিক্ষক কর্মচারীরা সে বেতন ভাতা দিয়ে একদিন সুন্দর ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাবেন এমনটাই তাদের আশা ।

আর সে আশাতেই বুক বেধেঁ শত কষ্টে তারা তাদের দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু স¤প্রতি একটি পত্রিকা স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে খবর প্রকাশ হওয়ায় মন ভেঙ্গে গেছে শিক্ষকদের । আর এ খবরে পড়াশোনায় মন বসাতে পারছেননা স্কুলের কোমলমনা প্রায় দু শত ছাত্রী। সত্যি যদি স্কুল বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি হবে ছাত্রী এবং শিক্ষকদের ভবিষ্যত । স্কুল বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ ফয়েজ আহম্মদ জানান, বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে ইছব পুর ৫০ শয্যা হাসপাতাল বন্ধ করে প্রয়াত অর্থ মন্ত্রী সাইফুর রহমান এ স্কুল স্থাপন করেন।

কিন্তু এলাকার মানুষের দাবীতে উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব এর সভাপতিত্বে ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপের উপস্থিতিতে মাসিক সভায় সিন্ধান্ত হয় হাসপাতালটি পুনঃ চালু করার এবং এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরনের জন্য উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হরিপদ রায়কে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। এব্যাপারে ডাঃ হরিপদ রায় এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সভার সিন্ধান্ত মোতাবেক হাসপাতাল পুন চালুর আবেদন ও কাগজ পত্রাদি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরন করেছেন। হাসপাতাল পুন চালূর পরে স্কুলটির ভবিষ্যত বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জানান, স্কুল বন্ধ করার কোন পরিকল্পনা সভায় হয়নি। হাসপাতালের পাশেই স্কুলের জায়গা একোয়ার করে স্থ^ানান্তরিত করা যেতে পারে। এবং হাসপাতাল চালু হলেও প্রথম দিকে হাসপাতালের যে কোন ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব।

এদিকে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন হাসপাতাল চালুর জন্য আন্দোলন করে গেলেও বর্তমানে তারা হাসপাতালের পাশা পাশি স্কুলটিকেও রাখতে চাইছেন। তারা বলেন, হাসপাতালে ক্যাম্পাসের ভিতরেই যে কোন একটি ভবনকে একাডেমিক ভবন রেখে বাকী গুলোতে হাসপাতাল চালানো যেতে পারে। এসময় তারা হাসপাতাল ভবন মেরামত বাবত ৪ কোটি বিরাশি লক্ষ টাকা ব্যয় দেখানো টাকা লুটে পুটে খাওয়ার অভিযোগ আনেন। বলেন, চার কোটি বিরাশি লক্ষ টাকা কাগজ নয় যে, একটি ভবনের ২য় তলা থেকে তৃতীয় তলায় উনীœত, ছাত্রী হোস্টেলের একটি ভবন আরো কয়েকটি ভবনের রং দরজা জানালা মেরামত, নেম ফলক ও গেট নির্মানে এতো টাকা ব্যায় হয়েছে। তারা তদন্ত সাপেক্ষে সে টাকার হিসাব চান।

অন্য দিকে স্কুলটি ভুগছে আরো একটি জটিল সমস্যায় । সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি “একনেক” কর্তৃক অনুমোদিত প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১২ একর এলাকা জুড়ে স্থাপিত জরা জীর্ন হাসপাতালের স্থলে ‘একটি উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে- শ্রীমঙ্গল রেসিডেন্সিয়াল মডেল গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারের ১১টি মডেল কলেজের অনুরূপ ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের আদলে প্রতিষ্ঠিত একটি মডেল কলেজ। প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ৪কোটি বিরাশি লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অত্র প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার এর নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী পরিচালনা পরিষদ আছে।

প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০৮এর জানুয়ারী হতে একাডেমিক কার্যক্রম চালু হয়েছে। বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় দুইশতাধিক ছাত্রী অধ্যয়নরত আছে। প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প দলিলের বর্ণনা মোতাবেক জনবল কাঠামো হল- অধ্যক্ষ ১জন, প্রভাষক ২৫জন, অন্যান্য তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ২৪ জন। প্রভাষকবৃন্দ বিগত ০৬/০১/০৮ইং তারিখ হতে যোগদান করে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও প্রায় ২১ (একুশ) মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কোন বেতন ভাতাদি না পাওয়ার কারণে বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যাতে কোন ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষক শিক্ষিকারা রীতিমত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এদিকে লক্ষণীয় যে, বিগত ২০/১১/০৭, ১৬/০৪/০৮ এবং ০৫/০৫/০৮ইং তারিখে প্রকল্প পরিচালক প্রতিষ্ঠানটিকে সচিব বরাবরে এম,পি,ও ভূক্তির জন্য আবেদন করলে অজ্ঞাত কারনে প্রথমে নিম্নমাধ্যমিক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে এম,পি,ও ভূক্ত করা হয় যা প্রকল্প দলিলের সম্পূর্ণ বিপরীত। পরবর্তীতে বিগত ৩০/০৭/০৮ইং তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠানটিকে এম,পি,ও ভূক্তির জন্য এক জরুরী সভা আহবান করা হয়। সে সময় ১৯৯৫ সালের জনবলের ভিত্তিতে এম,পি,ও ভূক্তির জন্য এক সুপারিশমালা গৃহীত হয়। এটাও প্রকল্প দলিলের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারন প্রকল্প দলিলে কোথাও ১৯৯৫ সালের জনবলের কথা উল্লেখ নেই।

এদিকে ১৯৯৫ সালের জনবলের ভিত্তিতে এম.পিও ভূক্ত করা হলেও সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছেনা। ১৯৯৫ সালের জনবলের ভিত্তিতে এম.পিও ভূক্ত করা হলে এখানে নিয়োগকৃত শিক্ষক কর্মচারীদের অনেকেই বাদ পড়বেন। এছাড়াও এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। মূলত ‘একনেক’ প্রকল্পটি যেভাবে অনুমোদন করেছেন শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদিও ঠিক সেইভাবে অনুমোদন হওয়া প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে প্রকল্প দলিলের বর্ণনা মোতাবেক এম.পি,ও ভূক্তিতে কোন সমস্যা হলে অন্যান্য মডেল কলেজের ন্যায় এককালীন অর্থবরাদ্ধ কিংবা থোক বরাদ্দের মাধ্যমে নিয়োগকৃত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

এ অবস্থায় শিক্ষক কর্মচারীদের কোন বেতন ভাতাদি না হওয়ার কারণে শিক্ষক, কর্মচারী, ছাত্রী, অভিভাবক ও জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ দিকে এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি এলাবাসীর জন্য খুব বেশী প্রয়োজন। তাই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ব্যবস্থা করা সরকারের সমীচিন। বৃহত্তর সিলেট তথা শ্রীমঙ্গলের নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানটি খুবই প্রয়োজন, নারীরা শিক্ষিত হলে দেশের দারিদ্র, অপুষ্টি হ্রাস পাবে। তাই খুব তাড়াতাড়ি বেতন ভাতাদির ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন।

এছাড়া এটা কোন ব্যক্তি উদ্যোগে গড়া প্রতিষ্ঠান নয়। এটা সরকারের প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। তাই সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনভাতাদি দেওয়ার জন্যএলাকাবাসী দাবী করেন প্রতিষ্ঠানের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তাসলিমা তাবাস্সুম জানায় আমাদের কলেজের লেখাপড়া খুব ভাল হয়। স্যার-ম্যাডামরা বেতন না পেয়েও আমাদেরকে খুব যতœ করে পড়ান। তাই জরুরী ভিত্তিতে স্যার ম্যাডামদের বেতনের ব্যবস্থার দাবী জানায় সে।

অপর দিকে হাসপাতাল রক্ষা কমিটির অন্যতম নেতা জনপ্রতিনিধি ভানুলাল রায় এখনও হাসপাতাল পুন চালুর দাবীতে অটল। তবে তিনি স্কুল বন্ধ করারও পক্ষে নয়। তিনি জানান, হাসপাতালের পাশে অনেক খাস জায়গা রয়েছে , জায়গা দাতার ও অভাব হবে না স্কুলের বিকল্প ব্যাবস্থা করে হাসপাতাল পুন স্থাপন করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্কুল গর্ভনিংবডির সদস্য সৈয়দ নেসার আহমদ এ প্রতিবেদককে জানান, স্কুল প্রতিষ্টার পূর্বে হাসপাতালটি জরাজীর্ণবস্থায় ছিল। হাসপাতালটি স্বচ্ছ করার জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘ আন্দোলন করেছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি শেষ পর্যন্ত এটি বন্ধ করে সেখানে মডেল স্কুল এন্ড কলেজ করা হয়।

এর জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায় হয়। ৫ কোটি টাকা ব্যায় করে একটি প্রতিষ্টান চালুর পর বন্ধ করে দেয়া হলে সরকার ক্ষতিগস্থ হবে । তাছাড়া সরকারী বিধি মোতাবেক এখানে প্রভাষক ও কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। স্কুল বন্ধ করে দিলে কি হবে তাদের ভবিষত স্কুলেরর দু শতাধিক ছাত্রীইবা কোথায় যাবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সঠিক সিন্ধান্ত গ্রহনের প্রতি দৃষ্টি আর্কশন করবো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।