"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"
আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা প্রতিটি মুসলামানের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহর স্মরণ ভুলে গেলেই আমরা পথভ্রষ্ট, জাহান্নামের পথে ধাবিত হবো। তাই আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা তথা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মেনে চলা প্রতিটি মুসলামানের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহর স্মরণ যদি আমরা না করি তাহলে ভয়াবহ বিপদ আমাদের উপর আপতিত হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর যারা আল্লাহর জিকির হতে বিরত থাকে, আমি তাদের জন্য শয়তানকে নির্দিষ্ট করে দিই, সেই-ই তাদের সাথী হয়ে যায়।
আর নিশ্চয় তারা তাদেরকে সঠিক রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় যদিও তারা ধারণা করে যে, তারা হেদায়াত প্রাপ্ত”। (সূরা আয যুখরফ: ৩৬-৩৭)
“তোমরা তাদের মতো হয়ে যেয়ো না যারা (দুনিয়ার ফাঁদে পড়ে) আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং এর ফলে আল্লাহ তাআলাও তাদের (নিজ নিজ অবস্থা) ভুলিয়ে দিয়েছেন, (আসলে) এরা হচ্ছে নাফরমান” (সূরা হাশর:১৯)
এখন আমরা যদি আল্লাহর স্মরণ না করি তাহলে শয়তান আমাদের সাথী হয়ে যাবে আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাব আর আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থা ভুলে যাব। পৃথিবীতে আমাদের কর্ম নিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পরব, যেনতেন করে জীবন যাপন করাটাই আমাদের নিকট মুখ্য হয়ে উঠবে। এমন সব কাজ প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে উঠবে যা বাস্তবে আল্লাহর বিধান বহির্ভুত। অর্থাৎ আমরা যে ভুলপথে পরিচালিত হব সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই হবে না অথচ আমরা মনে করবো আমরা সঠিক পথে আছি।
কিছু উদাহরণ দিই: সুদ আমাদের জীবনে অক্টোপাসের মতো আকড়ে ধরেছে, বিভিন্ন সুদী ব্যাংকে আমরা আমাদের টাকা জমা রাখি, এমনভাবে ব্যবসা করি যা সুদের, প্রতরণার পর্যায়ে পরে অথচ আমাদের সে সম্পর্কে কোন বোধদয়ই হয় না অর্থাৎ আল্লাহর স্মরণ না করার ফসল। আমাদের সন্তানদের তথাকথিত দুনিয়ার সম্মান কুড়ানো মানুষ বানানোর জন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়াই, ইসলামী আকীদা বিশ্বাস সম্পর্কে তাদের জ্ঞান থাকে শূন্যের কোঠায়। বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করার পরও তারা আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায়, হয়ে যায় আত্মভোলা, অর্থাৎ আল্লাহর স্মরণ করা হয়নি তাই আল্লাহও তাদের ভুলিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ স্মরণ আমরা কিভাবে কতটুকু করবো?
“যখন তোমরা তোমাদের (হজ্জের যাবতীয়) আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিবে তখন যেভাবে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে, তেমনি করে বরং তার চাইতে বেশী পরিমাণে (এখন) আল্লাহকে স্মরণ করো” (সূরা বাকারা:২০০)
যদিও এখানে হজ্জ্ব পরবর্তী অবস্থার কথা বলা হয়েছে তবে এর সাথে আল্লাহকে কিভাবে স্মরণ করতে হবে তার একটা মাপকাঠিও বলে দেওয়া হয়েছে। জাহিলি যুগে মানুষ কোন সভায়, মজলিশে তাদের পূর্বপুরুষদের খুবই স্মরণ করতো, তাদের খুবই গুণগান গাইত, তাই আল্লাহ তাআলা বলে দিলেন যেভাবে তাদের স্মরণ করো সেভাবে আমাকে স্মরণ করো বরং তার চাইতেও বেশী পরিমাণে।
জাহিলি যুগের এই স্বভাব আমাদের মাঝে বেশ ভালভাবেই বিদ্যমান। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন, যেকোন ভাষণ দেওয়ার আগে তারা তাদের পূর্ববর্তী নেতাকে স্মরণ করে। জাতির রুপকার, জাতির অমুক, জাতির স্বপ্নকার, জাতির তমুক, আমার নেতা এটা করতে চেয়েছিলেন, আমার পিতা এটা করতে চয়েছিলেন, অমুক ভাইকে স্মরণ করছি আমরা তার অবদানের কথা ভুলবো না প্রভৃতি। এর স্থলে তারা যদি আল্লাহকে স্মরণ করতো তাহলে কতোই না ভাল হতো। আজ দেখুন তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের যেভাবে স্মরণ করে ঠিক সেভাবে আল্লাহকে স্মরণ করে না যার ফলে শয়তান তাদের সঙ্গী হয়ে গেছে।
ঠিকমতো শাসন কার্য সম্পাদন করে না, নানা ধরণের আল্লাহর বিধান বহির্ভূত কার্য তারা পরিচালনা করে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে এক কথা বলে আর ক্ষমতায় গেলে আরেক কথা বলে অর্থাৎ আত্মভোলা হয়ে যায়। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তাদের করা প্রতুশ্রুতির কথা তারা ভুলে যায়। আরা তারা যে এই সব কর্ম সম্পাদন করে এগুলো যে মোটেই ঠিক হচেছ না সে সম্পর্কে তাদের কোন বোধদয়ই হয় না অর্থাৎ তারা মনে করে তারা সঠিক পথে রয়েছে। আয়াত দুটি আবার মিলিয়ে দেখুন:
“আর যারা আল্লাহর জিকির হতে বিরত থাকে, আমি তাদের জন্য শয়তানকে নির্দিষ্ট করে দিই, সেই-ই তাদের সাথী হয়ে যায়।
আর নিশ্চয় তারা তাদেরকে সঠিক রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় যদিও তারা ধারণা করে যে, তারা হেদায়াত প্রাপ্ত”। (সূরা আয যুখরফ: ৩৬-৩৭)
“তোমরা তাদের মতো হয়ে যেয়ো না যারা (দুনিয়ার ফাঁদে পড়ে) আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং এর ফলে আল্লাহ তাআলাও তাদের (নিজ নিজ অবস্থা) ভুলিয়ে দিয়েছেন, (আসলে) এরা হচ্ছে নাফরমান” (সূরা হাশর:১৯)
এবার আসি আমাদের কথায়, আমরা কোন মজলিশে, অফিসে, বাজারে তথা যে কোন স্থানে যাই কতবার আল্লাহকে স্মরণ করি? আর কতবার দুনিয়ার মোহের কথা আলোচনা করি? আল্লাহর স্মরণ করা আমরা থামিয়ে দিয়েছি আর তাই শয়তান আমাদের সঙ্গী হয়ে গেছে আমাদের পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে। দুনিয়ার ফাদে পড়ে আমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে গেছি যার ফলে আমরা হয়ে গেছি নাফরমান। আল্লাহর আদেশ অমান্য করি তবুও মনে করি আমরা হিদায়াতের পথে আছি! সঠিক পথে আছি!
তাই আসুন আল্লাহকে প্রতিটা মুহুর্তে স্মরণ করি, আল্লাহকে ভয় করি, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। শয়তান আমাদের সঙ্গী হতে পারবে না।
আমাদের মজলিসে অফিস, বাজারে, মার্কেটে তথা সব জায়গায় আমরা আল্লাহকে স্মরণ করবো। আল্লাহকে এতটাই স্মরণ করবো যেন তা আমাদের দুনিয়ার প্রয়োজনের কথার চাইতে বেশী স্মরণ করা হয়। পূর্বপুরুষদের চাইতেও বেশী স্মরণ করা হয়।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন। আমীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।