একটি ভীষণ না থাকাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাই কিছু কিছু "মুমিন বান্দা" দিনরাত ব্লগ-ফেসবুকে নামাজ-রোজা করে পিসির সামনে বসেই বেহেশতে সিট বুকিং দিতে চায়। আল্লাহর অস্তিত্ব ও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য ভণ্ড ধর্ম-ব্যবসায়ীদের ভূয়া ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক ঘটনার এসব ছবি প্রচার একদিকে যেমন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তেমনি অন্যদিকে নাস্তিক ও বিধর্মীদের কাছে ইসলাম ধর্মকে হাস্যাস্পদ করছে। আবার কিছু ধর্ম-বিদ্বেষী রিভার্স খেলতে ধর্মকে হেয় করার জন্য এসব ছবি ব্যবহার করে। আজকের এই পোস্টে সেসব ‘ভূয়া’ মিরাকলের ‘আসল’ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
পোস্টের ছবিগুলো ফেসবুকের একটা গ্রুপের নোট থেকে নেয়া।
মূল লেখকের নাম জানা নাই।
সবচেয়ে বিখ্যাত "মিরাকল"টি দিয়েই শুরু করি। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে নীচের ছবিটি বাঁধানো অবস্থায় শোভা পাচ্ছে:
এটি নাকি জার্মানির একটি খামারের ছবি। এর গাছগুলি আল্লাহ্র কুদরতে এমনভাবে আকৃতি নিয়েছে, যাতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ কথাটি পরিষ্কার ফুটে উঠেছে! এটি দেখে নাকি অনেক জার্মান নাগরিক মুসলমানও হয়েছে। তারপর জার্মান সরকার নাকি জায়গাটি বেড়া দিয়ে আড়াল করে দিয়েছে - আল্লাহ্র এই কুদরত দেখে আর কেউ যাতে মুসলমান হতে না পারে।
অথচ আসল ঘটনা হল, এটি মোটেই বাস্তব কোন দৃশ্য নয়, বরং ডাঃ সাঈদ আল-খুদারি নামে এক মিশরীয় ব্যক্তির হাতে আঁকা তৈলচিত্র! একই ব্যক্তির আঁকা মানুষের শ্বাসনালীর নীচের ছবিটিকেও দেখুন কীভাবে এর পরের ছবিতে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে একটি ইসলামী ওয়েবসাইটে চালানো হয়েছে -
পরবর্তীতে অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী মিশরীয় ব্যক্তি আসল ঘটনা উন্মোচন করে ই-মেইল পাঠালে গাছের ও ফুসফুসের ছবি দুটি সরিয়ে নেয়।
এবার দেখুন নীচের ছবিতে ক্যাকটাস গাছকে কীভাবে ‘আল্লাহু’ লেখা মিরাকল হিসেবে দাবি করা হয়েছে -
বক-ধার্মিকগণ নীচের গাছটিতেও ‘আল্লাহু’ লেখা খুঁজে পেয়েছে -
আরও দেখুন অস্ট্রেলিয়ার এক বনে রুকুর ভঙ্গিতে থাকা গাছের ছবি -
উপরে গাছের ছবিগুলি যদি আল্লাহ্র কুদরতই হয়, তবে নীচে দেখানো গাছের ছবিগুলির ব্যাখ্যা কী?
১। মানুষের মুখের আকৃতির গাছ -
২। হাতির আকৃতির গাছ -
কোন হিন্দু যদি এটি দেখে ‘গণেশ’ বলে দাবি করে, তবে আপনি কী বলবেন?
৩। ব্যালে নর্তকীর ভঙ্গীতে গাছ -
৪।
আরেকটি মানুষের আকৃতির গাছ -
৫। সিঙ্গাপুরের হনুমান গাছ -
এটা দেখে হিন্দুরা ‘হনুমানদেবের’ কীর্তি ভেবে ভক্তিভরে পূজা শুরু করেছে!
সাগরের বুকে মানুষের তৈরি কৃত্রিম খেজুর গাছ আকৃতির দ্বীপকে আমার বিজ্ঞানের মিরাকল মনে হয়। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে কত জ্ঞানই না দিয়েছেন! নীচে দেখুন দুবাইয়ের ‘আল-নাখীল’ দ্বীপ -
এবার দেখুন মেঘের গায়ে ‘আল্লাহু’ লেখা মিরাকল -
অথচ আপনি চাইলে আকাশের মেঘের গায়ে হাতি, ঘোড়া, গাছ, ইত্যাদি অনেক কিছু কল্পনা করতে পারেন। এরকম "মিরাকল" দেখতে চান? তাহলে নীচে দেখুন -
১। গাড়ি আকৃতির মেঘ -
এটি দেখে জাপানের টয়োটা কোম্পানি যদি নিজেদের ‘স্বর্গীয়’ বলে দাবি করে, তবে আমি এর জন্য দায়ী না!
২।
হাতি আকৃতির মেঘ -
৩। আরেকটি হাতি-মেঘ -
হিন্দুদের দেবতা গণেশের মিরাকল? নীচে ‘গনেশ’ আকৃতির একটি ফুলও দেখুন তাহলে -
এবার দেখুন প্রাণীর গায়ে ‘আল্লাহু’ ও ‘মুহাম্মদ’ লেখা ছবি -
উপরের প্রাণীর ছবিগুলি যদি আল্লাহর কুদরত হয়, তবে নীচের ছবিগুলি কার কুদরত?
১। গরুর গায়ে হিন্দুদের ‘ওম’ লেখা -
২। গরুর গায়ে খ্রীস্টানদের ‘ক্রশ’ আঁকা -
কেউ কেউ পাহাড়ের গায়ে অলৌকিক ‘আল্লাহু’ লেখা দেখতে পায় -
এখন পাহাড়ের গায়ে ‘ওম’ লেখা দেখে কী বলবেন?
এখন দেখুন এক পাকিস্তানি নাকি চায়ের পাতায় ‘আল্লাহু’ লেখা বলে দাবি করেছে -
তাহলে নীচের ‘ওম’ পরোটা দেখে সে কী বলবে? -
আবার নীচের ছবিটাতে সাগরের মাঝে পাথরের দ্বীপটি নাকি সেজদারত -
তাহলে ভালোবাসার প্রতীক ‘হার্ট’ আকৃতির দ্বীপ দেখে যদি কেউ দাবি করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস ইসলাম সম্মত, তবে তাকে কী বলবেন? -
সুতরাং এসব ছবির বেশির ভাগই প্রকৃতির খেয়াল, কাকতালীয়, দৃষ্টিবিভ্রম কিংবা দুষ্ট লোকের ফটোশপীয় কারসাজির উদাহরণ মাত্র। অথচ আল্লাহ্র অস্তিত্ব ওইসলামের মহিমা প্রমাণের উদ্দেশ্যে এরকম হাজার হাজার ভূয়া "মিরাকল" প্রচার করছে ইন্টারনেটের বহু ইসলামী ওয়েবসাইট।
এবং আমরাও দোযখের আগুনের ভয়ে ক্রমাগত শেয়ার করে যাচ্ছি এসব।
এসব ছবি দিয়ে যারা আল্লাহর অলৌকিকত্ব প্রমাণ করতে চায়, তারা আসলে নিজেরা বিভ্রান্ত, অন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেও বিভ্রান্ত করে এবং একই সাথে ইসলাম ধর্ম তথা আল্লাহকে হাস্যাস্পদ বা হেয় করে। আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আলাদা মিরাকল দরকার নেই, তার প্রতিটি সৃষ্টিই মিরাকল। ইসলামের সবচেয়ে বড় মিরাকল হলো কোরআন। যেমন ধরেন শেখ হাসিনা গং ইউনুসকে যেভাবে নিচে নামানোর চেষ্টা করছে সেটা নিয়ে একটা উদাহরন দেই -
কোরআনে একটা লাইন আছে - "মানুষ যখন বেহেশতে যাবে, খোদা তার বুক থেকে সবরকম প্রতিহিংসা দূর করে দেবেন।
" মনে হতে পারে একটা টিপিকাল ইসলামিক লাইন যেখানে বেহেশতের লোভ দেখানো হয়েছে। পুরা জিনিসটা একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে আরেকটা অর্থ খুজে পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে - পৃথিবীতে থাকা অবস্থাতেই আমরা যদি বুকের ভেতর থেকে প্রতিহিংসাটা দূর করে ফেলতে পারি তাহলে এই পৃথিবীটা নিশ্চয়ই বেহেশত হয়ে যাবে!! যার মানে, আমরা যে পৃথিবীতে আছি সেটা খুব সুন্দর একটা জায়গা - বেহেশত তৈরি করে ফেলা সম্ভব। শুধু মন থেকে রাগ-ক্ষোভ-প্রতিহিংসা এইসব দূর করে ফেলতে হবে।
আফসোস! কেউ কোরআনের একএকটা আয়াতের মাঝে যে কত চমৎকার মিরাকল লুকিয়ে আছে তা শেয়ার করে না।
কারন আয়াত শেয়ার করতে যে বুদ্ধি লাগে - সেটা আল্লাহ উনাদের দেয় নাই!!
সম্পূরক পোস্ট - এসো নিজে করি ০২ - কিভাবে কুদরত এর প্রচার করবেন / How to advertise miracle
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।