আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল্লাহকে কেন মানব না ?

জীবন অনেক দামী..কাজ প্রচুর...সময় কম।

প্রথমেই বলে রাখি কেউ কেউ আছে যারা তর্কের জন্য এই আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়, তাদের ব্যাপারে আমার কোন কথা নাই । কিন্তু কেউ যদি মনেপ্রানে চায় আমি সত্য জানব এবং এতে যদি আমার মনের বিরূদ্ধেও কাজ করতে হ্য়, তাদের উদ্যেশ্যেই কিছু কথা বলতে চাই। চিন্তাশীলতা মানুষের একটা বড় গুন নিসন্দেহে । জানার আগ্রহ থাকাও উচিৎ।

সমস্ত প্রানীজগত থেকে মানুষের শ্রেষ্টত্ব এই জন্য না যে তার দৈহিক শক্তি বেশী। মানুষের থেকে দৈহিক শক্তি, শ্রবন শক্তি, ঘ্রান শক্তি, দৃশ্টি শক্তি বেশী এরকম অনেক প্রানী রয়েছে। কিন্তু শক্তি থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ এদেরকেই মানুষের গোলাম বানিয়েছেন , মানুষকে এদের অধীন করেননি। এর কারন মানুষের বুদ্ধিমত্ত্বা । একটা পশুর থেকে মানুষের জ্ঞান, চিন্তা শক্তি অনেক গুন বেশী।

একটা পশুও খায়, ঘুমায়, আশ্রয়ের সন্ধান করে, বাচ্চাকে প্রতিপালন করে কত দরদ দিয়ে। এরপর তার জীবন শেষ। অথচ, এটা চিন্তা করা খুবই বেমানান যে এই বিপুল সম্ভাবনাময় একজন মানুষ তার মেধা যোগ্যতা নিয়ে মাত্র ৬০-৭০ বৎসর, বেশী হলে ১০০ বৎসর বেচে থাকবে অথচ একটা কচ্ছপ ৩০০ বৎসর বেচে থাকবে। এর উত্তর এটাই, মানুষকে শুধুমাত্র এই পার্থিব জগতের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি । এই পার্থিব জগত পার হয়ে তাকে অনন্ত অসীম এক জগতে পাড়ি দিতে হবে।

সেখানকার আনন্দ ও অনেক বেশী, দুঃখ ও অনেক বেশী। দুনিয়াতে আমরা যা দেখি তা হোল নমূনা। আসলটা আখিরাতে জমা আছে। নমূনা না দেখলে আসলটা চেনা যেত কিভাবে ? নমূনা দেখেই তো মানুষ সেগুলো পাওয়ার জন্য লালায়িত হয়ে যায়। মানুষ ভাল খাদ্য চায়, ভাল পোশাক চায়।

ভাল ঘর চায়। সুন্দর প্রকৃতি দেখলে সে বিমোহিত হয়ে যায়। সমুদ্র, ঝর্না, বাগবাগিচা মানুষের মনকে আকৃষ্ট করে। সুন্দর আকৃতি আর সৌন্দর্য চায়। কিন্ত দুনিয়া যেহেতু মানুষের আসল ঠিকানা নয়, এখানে তার সব চাহিদা পূরন হবেও না, পূরণ করবারও নয় ।

এসব চাহিদা পুরাপুরি নিষিদ্ধ নয় । তবে অন্যকে মেরে ধরে যেমন খুশী তেমন ভাবে এই সব চাহিদা পূরন করার অধিকারও দেয়া হয়নি। এটা তো পশুর স্বভাব হতে পারে। এ কারনে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। কেউ হয়তো এতিমের সম্পদ গ্রাস করে নিল।

আপন ভাইয়ের মৃত্যুর পরে তার ছোট্ট এতিম ভাতিজাকে ঠকিয়ে দিল। কেউ না জানুক। কিন্তু আল্লাহর ভয় তাকে এই কাজ থেকে ফিরাতে পারে। আমরা আরেকটা ভূল করে থাকি, তা হোল দুনিয়াকেই ফলাফলের জায়গা মনে করি। এমনকি যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে তাদের মধ্যেও অধিকাংশই এই ভেবে হতাশ হয়ে যায়, যে আল্লাহকে না মেনেও তো অমুক অমুক দিব্যি ভাল আছে।

আর আমি আল্লাহর হুকুম মানি, আমার এই বিপদ ? মসজিদে গেলাম ভাল মনে, আর নতুন জুতাটাই গেল চুরি হয়ে? আমার এটা সেটা আশা কেন পূরণ হয় না ? অন্যদিকে অমুকে যেমন খুশী চলে অথচ যা মনের ইচ্ছা সব পূরণ হয়ে যাচ্ছে ?!! প্রকৃতপক্ষে দুনিয়াকে ফলাফলের জায়গাই বানানো হয়নি। এটা তো পরীক্ষার হল । পরীক্ষার হলে পাশাপাশি বসে একজন first হওয়ার মত লিখছে, আরেকজন ফেল করার মত লিখে চলেছে। পুরষ্কার আর শাস্তির ব্যাবস্থা কোনটাই সেখানে করা হয়না। যে first হবে সে হয়ত বিষন্নমনে বেরুলো আরও ভাল কিছু লেখা হোল না সে চিন্তায়, fail করা ছাত্র হয়তো হাসতে হাসতেই বেরুলো।

কিন্তু Result এর পরে তো বোঝা যাবে একজনের মর্যাদা কোথায় আর অন্যজনের মুখ লুকানোর জায়গা কোথায় ? হলের মধ্যে তো কিছুই করা হয়না। এমনকি কেউ না লিখে চুপচাপ যদি বসে থাকে, এদিক সেদিক জানালা দরজা গুনতে থাকে অথবা ঘুমিয়েই থাকে; কি বলা হবে তাকে ? হ্যা, বড় বড় কোন অপরাধের শাস্তি হয়ত সে সাথে সাথেই পেয়ে যায়, কিন্ত সাধারণ নিয়ম ঐটাই। আল্লাহর ভয় এবং রহমতের আশা ছাড়াও যে এবাদত করা যায় না, তাও নয়। আল্লাহর এক ওলী এই বলে দোয়া করতেন, জাহান্নামের ভয়ে যদি আমি তোমার এবাদত করি তবে আমাকে জাহান্নামেই দিও। আর জান্নাতের লোভে যদি তোমার এবাদত করি তবে আমাকে জান্নাত দিও না।

আল্লাহর প্রতি ভালবাসাই এই সব খাঁটি বান্দাদের এবাদতের শক্তি ছিল। আল্লাহকে কেন ভালবাসব না ? যিনি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছেন অথচ আশেপাশে অন্য কোন গ্রহে কতো প্রতিকূল পরিবেশ ! আমাদের শরীরকে তৈরী করেছেন কত নিখুঁতভাবে !একটা বনের মধ্যেও যদি একটা ঘর দেখতে পাওয়া যায়, সামান্য বুদ্ধি যার আছে সেও এ কথা বুঝে নেবে এ ঘর আপনাআপনি তৈরী হয়ে যায়নি। ঘর ই সাক্ষ্য দেবে নিশ্চয়ই একজন কারিগর এর পেছনে আছে। আর এত বিশাল আসমান জমিন, জীব জড় আপনা আপনি সব তৈরী হয়ে গেল, শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে চলতে থাকলো, এর সৃষ্টিকর্তা নিয়ে এত অবিশ্বাস ? আসমান, জমিন এবং সমস্ত সৃষ্টজগতে আল্লাহর কত নিদর্শন তার অপার মহিমার স্বাক্ষর বহন করছে সেই দিকে দৃষ্টি পড়ল না, আর দু-একটা তুচ্ছ বালখিল্য চিন্তা তার অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করল ?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.