শব্দ দুটা শুনতে ভালোই লাগে, "শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান"। একটা লম্বা ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি আমার রুমে এক দল বিশিষ্ট মৌমাছিবর্গ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের ভাবভঙ্গীতে মনে হল, এটা তাদেরই রুম, আমিই এসে তাদের আশ্রয়ে অবৈধ দখল নিচ্ছি। জানালার একটা গ্রিল আর পর্দার একটা অংশে তারা জরুরী মিটিং নিয়ে ব্যস্ত।
কাছাকাছি গেলেই কয়েকটা মৌমাছি শিং নেড়ে তাড়া করে আসে। (শব্দটা শুঁড় হবে মনে হয়, শিং এর মতই লাগে)। জানালা খুলে দিলাম যাতে উড়ে যায়, নাহ কারও মধ্যে উড়ে যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখলাম না। বুয়াকে বললাম ব্যবস্থা করতে। বুয়ার চোখে (সময় সময় কানেও) বড় ধরণের সমস্যা আছে মনে হয়, সে বলল, কই মৌমাছি আমি তো দেখি না।
না দেখলে আর ব্যবস্থা করবে কী? টারজান বুদ্ধি দিল কয়েল জ্বালিয়ে তাড়ানোর। সাহস হল না। থাক না তার চেয়ে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে থাকি না, এখন পর্যন্ত দুই পক্ষই শান্তি বজায় রেখে চলেছি। ও আচ্ছা বলে রাখি, মৌমাছিগুলো দেখতে একটু অন্যরকম, সোনালী রঙের স্লিম ফিগারের অধিকারী। মনে হয় কোন কলোনীর প্রিন্স মৌমাছি, কোন কারণে দলছুট হয়ে গেছে (নিজস্ব বিদ্যা জাহির করলাম আর কি), মৌমাছিগুলো এখনও চাক বানায়নি দেখে মনে হল।
কয়েকদিন ধরে ডাইনিং স্পেস এ বেসিনে হাতমুখ ধুতে গেলেই একটা বোটকা গন্ধ নাকে আসছে। শুরুতে বুঝতে পারিনি কিসের গন্ধ। একদিন রাতে টের পেলাম ভেন্টিলেটরের মধ্যে থেকে পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ আসছে। কোন পাখি বাসা বেঁধেছে এখানে। কী পাখি সেটা বোঝা গেল না।
চড়ুই হবার সম্ভাবনা বেশী। কয়েকদিন পর শুনি চিঁ চিঁ শব্দ, বাহ, ডিম ফুটিয়েছে তাহলে। আজ সকালে হাতমুখ ধুতে গিয়ে শুনি বাকবাকুম শব্দ, ওহ তার মানে পায়রা। এজন্যই গন্ধটা এত বেশী আসে। যাক, না হয় একটু গন্ধ সহ্যই করলাম, থাকুক তারা, আমিও থাকি তাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে।
ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায় শব্দে। আরে না না, বাকবাকুম শব্দে না, ওটা হলে তো ভালোই ছিল। পাখিদের কিচিরমিচিরেও না। ঠুস ঠাস, ধুম ধাম শব্দে। বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে হাসপাতালে।
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকট শব্দ। রোগীরা কিভাবে আছে এর মধ্যে তাই ভাবি। বিকালের দিকে শুরু হয় ছাদ পিটানোর শব্দ, সুরে সুরে তালে তালে চলতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুপুরের আরামের ভাতঘুমটা ভাঙে এই শব্দে। প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত লাগত।
একদিন শুয়ে শুয়ে ওদের গানের তালে তালে মাথা দোলানো শুরু করলাম। ভালোইতো গানটা, কথা বোঝা যায় না এখান থেকে। তবে তালটা খারাপ না, সুরটা একঘেয়ে হলেও একটা মাদকতা আছে। সাঁওতালদের গানের কথা মনে পড়ে যায়। তবে পার্থক্য হল সাঁওতাল গানের মত লয়টা বাড়তে থাকে না, একই লয়ে পুরোটা সময় গান চলতে থাকে।
এটা আবিষ্কার করার পর ভোরবেলার ঠুসঠাস শব্দের সাথেও মাথা দোলানো শুরু করে দিলাম। এটা অবশ্য সেরকম ভালো লাগাতে পারলাম না, তবে সহ্যের সীমায় চলে আসল। ভালোইতো, চলুক শব্দের সাথে আমার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
শব্দের কথা তুললামই যখন আরেকটা শব্দের কথা যোগ করে দিই। এটা অবশ্য খুব একটা সমস্যা করে না।
বাসার পিছনে মাঠে লাইট জ্বালিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা চলে। শব্দ শুনে মনে হয় খেলার চেয়ে কাউমাউ বেশী হয়। এটার আবার কয়েকটা ধাপ আছে। শেষ বিকালে খেলে শুধু পিচ্চিরা। পিচ্চিদের কাউ কাউ শোনা যায় তখন।
সন্ধ্যার পর কারেন্ট গেলে একটা বিরতি হয়। এরপর শুরু হয় বড়দের খেলা। বড়দের হাউ কাউ শুরু হয়, সাথে আবার পিচ্চিদেরও শব্দ আসে, ওরা মনে হয় চিয়ার লিডারের দায়িত্ব পালন করতে থাকে। একটু রাত হলে পিচ্চিরা ইস্তফা দেয়, শুধু বড়দের শব্দ আসতে থাকে তখন। রাত বারোটা পর্যন্ত চলে, এরপর সব হঠাৎ করে ঠান্ডা হয়ে যায়।
এই শব্দের সাথে শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আছি। আনন্দের শব্দ সবসময়ই শান্তির।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।