~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
বেয়াড়া টাইপের সাদা ল্যান্ড রোভারখানি সেইদিন কি কইরা যেন আমার হাতে পঙ্খিরাজ হইয়া উঠিলো। যতই আঁকাবাকা করিয়া চালাইতে চাই, গাড়ী আমার সোজাই চলে। ইহার পর ক্রমেই আমার দৃষ্টি সাইড ভিউ মিররে আটকাইয়া যাইতে লাগিলো। ছোট্ট আয়নাটি জুড়িয়া গোলাপী একখানি মুখ বারংবার আমার মনযোগ কাড়িয়া লইতে লাগিলো। এইদিকে পুঁচকা ড্রাইভারের গাড়ী চালনায় আস্বস্ত হইয়া সকলেই মনে হয় খানিকটা স্বস্থির সহিত আরাম করিয়া বসিলো।
তরুনীর চোখ মুখ হইতেও ভয়ের চিহ্ন বিদায় লইয়া প্রশান্তির ছায়া পড়িল। মাঝে মাঝেই সাইড ভিউ মিররে উহার সহিত চোখাচোখি হইতে লাগিল এমন সময় হঠাৎ উহার চোখে স্পষ্ট শাষনের ছায়া দেখিতে পাইয়া ভীত হইয়া উঠিলাম শান্ত দিঘীর ন্যায় চোখ জোড়া আমাকে যেন ডাকিয়া বলিলো "ওই ব্যাটা, সামনে দেইখা গাড়ী চালা, তোর পিছে দশ মাইলের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ নাই "। ডরাইয়া গিয়া গাড়ী চালনার মনযোগ দিলাম। কিছুক্ষন পরে আয়নায় চাহিয়া সেই চোখে উপচায়মান কৌতুক দেখিয়া মনটা আনন্দে ভরিয়া উঠিল।
রংপুর হইতে ফিরিয়া আসিয়া আমার অবস্থা চান্দুর ন্যায় হইয়া উঠিল।
বন্ধুগনকে এই বলিয়া আস্বস্ত করিলাম যে - সমস্তটাই ধরলার পাড়ে করা প্লান মোতাবেক আগাইতেছে। কিন্তু আমি নিজে জানি যে কোন কিছুই প্লান মোতাবেক হইতেছেনা। দিনে রাতে চব্বিশ ঘন্টা আমি উহাকে চোক্ষের সামনে দেখিতে পাইতেছি একদিন কনিষ্ঠা ভগ্নীর নিকট মনের কথা ভাঙ্গিয়া কহিলাম। সে অতি উৎসাহে জানাইলো যে চান্দুর পছন্দ করে মেয়েটি তাহারই সহিত একই শ্রেনীতে অধ্যায়নরতা কাজেই কয়েকদিনের মধ্যেই উহার হস্তে চান্দুর প্রেমপত্র পৌছাইয়া দেওয়া হইলো। কোন এক শুভক্ষনে উহাদের প্রণয়পর্ব শুরুও হইয়া গেল
সময় গড়াইয়া যায়, প্লান মাফিক আমার প্রেমে পড়া আর হয়না চান্দু এবং তাহার প্রেমিকা ভীত সন্ত্রস্ত জীবনযাপন করে, কবে যেন উহারা ধরা পড়িয়া যায়।
কাজেই আমাদিগকে দ্রুত একশন প্লান লইতে হইলো। সম্পা তখন সদ্য সদ্য কুড়িগ্রাম মহিলা কলেজে ভর্তি হইয়াছে। রোজ সকালে সে বাড়ী হইতে উহার বান্ধবীর সহিত হাটিয়া হাটিয়া পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়া কলেজে যায়। আমাদের কল্যানে উহাদের যাত্রা পথে সমস্যা সৃষ্টি করে এমন কোন আদম সন্তানের জন্ম তখনও হয় নাই এই অবস্থায় একদিন সকালে দুত মারফত উহার হস্তে আমার লেখা প্রেমপত্র পৌছাইয়া দেওয়া হয় পত্রটিতে একটি লাইনই লেখা ছিলো - "ভালবাসি তোমাকে"। কইন্যা পরদিন হইতে কলেজে যাইবার কালে আমাকে খুঁজিতো, কিন্তু হোষ্টেল হইতে সাজিয়া গুজিয়া বাহির হওয়া অতি লাজুক আমি কোনমতেই উহার ত্রিসীমানায় যাইতে পারিতামনা।
পরের সপ্তাহে উহারা একদা পত্রবাহককে রাস্তায় পাইয়া আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে এবং ভীত পত্রবাহক আমার যাবতিয় ডিটেইলস উহাকে বলিয়া দেয়
এই ঘটনার ২ দিন পর আমার ভগ্নী একদা স্কুল হইতে ফিরিয়া আমার হস্তে একখানি মলাট করা পাঠ্যা পুস্তক ধরাইয়া দিয়া বলে সম্পার বান্ধবী উক্ত পুস্তকখানি আমাকে দিতে বলিয়াছে যারপরনাই উৎকন্ঠিত হইয়া আমি পুস্তকটির সকল পৃষ্ঠা ঘাটিয়াও কোন ক্লু খুজিয়া না পাইয়া বেকুব হইয়া বসিয়া রহিলাম। হঠাৎ কি মনে করিয়া পুস্তকের মলাট টানিয়া খুলিতেই ভেতর হইতে একখানি সুগন্ধী পত্র বাহির হইয়া পড়িলো। কম্পিত হস্তে উহা খুলিয়া আমার একলাইনের জবাবে দুই লাইন কবিতা দেখিতে পাইলাম -
প্রহর শুরুর আলোয় রাঙা সেদিন পৌষমাস
তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ ...
মুহুর্তে প্রশান্তিতে ভরিয়া গেল মন। বাহির হইয়া গিয়া বন্ধুমহলে ঘটনা বর্ননা না করিয়াই উহাদের একচোট খাওয়াইয়া দিলাম, ফলে উহারা বুঝিয়া গেল যে শুভ কিছু ঘটিয়াছে রাত্রীতে বাসায় ফিরিয়া অনেক সাধ্য সাধনা করিয়া আরেকখানি পত্র রচনা করিয়া ভগ্নীর হস্তে প্রদান করিলাম। এইভাবে আমাদের পত্রপ্রেম মাসাধিককাল চলিলেও দেখা সাক্ষাতের কোন উপায় খুঁজিয়া পাইলামনা এমনি সময় আমার পিতা বাসা বদল করিয়া এমন এক স্থানে বাসা লইলেন, যেই বাসার পার্শে উহার এক বান্ধবীর বাসা রহিয়াছে
উহার সহিত আমার প্রথম সাক্ষাত হয় আমাদের বাসাতেই।
নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় বাসায় মেয়েদের আগমনে আমার মাতৃদেবী মোটেও বিচলীত হইতেননা, কাজেই উহাদের আগমনেও হন নাই। কিন্তু সম্পা ইচ্ছায় হৌক আর বিব্রততা হেতু হৌক, প্রথম দিনেই মা জননীকে দেখিয়া মাথায় ওড়না দ্বারা ঘোমটা টানিয়া ঝাপাইয়া পড়িয়া কদমবুচী করিয়া ঘোষনা করিয়া দিয়াছিল যে সে এই বাড়ীর বিশেষ কেহ হইবার তালে রহিয়াছে জননীও উহাকে বুকে টানিয়া লইয়া বুঝাইয়া দিয়াছিলেন যে ইহাতে তাহারও কোন অমত নাই
সম্পা আমার প্রেমিকার চাইতে বন্ধুই বেশী ছিলো। যতক্ষন একসাথে থাকিতাম, আমরা একে অপরকে খেপানোতেই বেশী মনযোগী থাকিতাম। তবে শর্ত ছিল প্রতিদিন ভালবাসায় পরিপুর্ণ একখানি করিয়া পত্র উহার হস্তে পৌছাইয়া দেওয়া লাগিবে। বৎসরাধিককাল এইভাবে চলিবার পরে উহার পিতা উহাদিগকে লইয়া রাজশাহীতে গমন করেন এবং আমার প্রেমপর্ব স্থগিত হইয়া যায়।
পরে আমি উচ্চশীক্ষার্থে রাজশাহীতে গমন করিলে তিন বছর পরে আবার আমাদের প্রেমের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। সেই সময় সম্পা মাঝেমাঝেই আমাদের কলেজে আসিতো এবং সারা কলেজ আমার হাত ধরিয়া হাটিয়া বেড়াইতো সবাইকে জানাইয়া দেওয়ার জন্য, যাহাতে আমি আর নতুন কোন প্রেম করিতে না পারি
এমতাবস্তায় আমার পিতামাতার সহিত উহার পিতামাতা পর্যায়ের আলোচনার ধার্য হয় যে আমার অনার্স শেষ হইলে আমাদের বিবাহ হইবে। কিন্তু উহার বেরসিক পিতা ভাল ব্যাংকার পাত্র পাইয়া বিনা উস্কানীতে এক রাত্রীতে উহার আক্দ পড়াইয়া দেন
====================================
আমার প্রেমিকা পর্বের ইহাই ছিল শেষের আগের পর্ব। শেষ পর্ব জানিতে ইচ্ছুক ব্যাক্তিবর্গ নীচের লিঙ্কে ক্লিক করিয়া দেখিতে পারেন
মনে কি পড়ে প্রিয়?
সবাইকে এই আবজাব ব্লগ কষ্ট করিয়া পড়িবার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই
আগের পর্বঃ
আমার প্রেমিকারা - সম্পা পর্ব (১)
আমার প্রেমিকারা - চম্পা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - ইলোরা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - হুমায়রা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - জেনী পর্ব
আমার প্রেমিকারা - কাঁকন পর্ব
আমার প্রেমিকারা - লোপা পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।