~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
আগের পর্বঃ
আমার প্রেমিকারা - ইলোরা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - হুমায়রা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - জেনী পর্ব
আমার প্রেমিকারা - কাঁকন পর্ব
শিশুকালের কিছু কিছু ঘটনা হৃদয়ে গাঁথিয়া যায়, যাহার কথা মানুষ কখনই ভুলিতে পারেনা এবং ঐ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনভাবে একইরুপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিলে মানুষ উদ্ভট আচরন করে। উহাকে নানারুপ ফোবিয়ার সহিত তুলনা করা যায়। যেমন ছোটবেলায় অনেককে তেলাপোকা অথবা টিকটিকি কামড়াইয়া দিবে বলিয়া ভয় দেখাইলে সেই ভয় মানুষ সারা জীবনেও ভুলিতে পারেনা। যদিও সে বড় হইবার পরে বুঝিতে পারে যে তেলাপোকা অথবা টিকটিকি বাঘ ভাল্লুক নহে, তথাপি সে আপন মন হইতে ভয়টা দূর করিতে পারেনা। লোপা - মতান্তরে লুপা তেমনি আমার একটি ফোবিয়া, লোপা নামের মেয়ে দেখিলে আমি এখনও পর্যন্ত তার ছায়া মাড়াইতেও সাহস করিনা, কাছে যাওয়া তো দুরের কথা এক্ষনে কেমন করিয়া সে আমার প্রেমে পড়িয়াছিলো এবং আমার জীবন সংশয় ঘটাইয়াছিল, সেই গল্প বলি ...
বগুড়ার জলেশ্বরীতলাস্থ আমাদের বাসার নিচেই ছিল এলজিইডি কোয়াটার ও গ্যারেজ।
ভাঙ্গাচুড়া বেশ কিছু গাড়ী ছিল সেইখানে। সর্পের ভীতি তু্চছ করিয়া আমরা - মানে আমি, সীমা, লোপা, ইমন, দোলা, কাশ্মির, রাজন, সোমা আরও কিছু পুলাপাইন সেই ভাঙ্গা জড়াজীর্ন গাড়ীগুলিতে বসিয়া ভুম... ভুম... শব্দ করিয়া নিজেদেরকে ভবিষ্যতের খ্যাতনামা ট্রাক ড্রাইভার এবং হেলপার ভাবিয়া খেলা করিতাম। আমার মধ্যে লোপা ছিল বেশ খানিকটা খেপাটে টাইপের। উহার যখন যা মনে হইতো, সে তাহাই করিতো বলিয়া যে জনশ্রুতি আছে, তাহা সর্বাংশে সত্য। প্রত্যহ উহার সহিত কাহারও না কাহারও বিবাদ লাগিয়াই থাকিতো।
একদা এইরুপে খেলিতে গিয়া সে ঘোষনা দিয়া বসিল যে অদ্য আমরা সংসার সংসার খেলবো আর সে আমার বউ হইবে আমি এমনিতেই উহাকে যথেষ্ট ভয় পাইতাম, উহার অবাধ্য কোনদিনও হই নাই। কিন্তু বউ হিসাবে উহার চাইতে আমার সোমাকেই বেশী পছন্দ ছিলো , সেই কথা বলিবার মত সৎ সাহস আমার হয় নাই। কাজেই আমি একান্ত বাধ্যগত জামাই হইয়া উহার মাটিতে গন্ডীকাটা ঘরে চুপটি করিয়া বসিয়া থাকিতাম, সে বাজার সদাই করিয়া, রান্না করিয়া আমাকে খাওয়াইয়া ঘুম পাড়াইয়া দিত
এমনি ভাবে চলিতে চলিতে কিছুদিন পর অন্য মেয়েদেরও ইচ্ছা হইলো আমার মত চরম বাধ্যগত, ভাজা মাছটি উল্টাইয়া খাইতে জানেনা টাইপের স্বামী পাইবার জন্য, কিন্তু লোপা আমাকে ছাড়িতে নারাজ আমারও মনে মনে ইচ্ছা একখানি নতুন স্ত্রী গ্রহন করিবার , কিন্তু মুখ ফুটিয়া বলিবার সাহস হয়না অন্যদিকে আমার স্ত্রী আমার উপর কুদৃষ্টি নিক্ষেপকারিনীদিগকে ঢিসুম ঢিসুম দিয়া উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করিয়া চলিয়াছিলেন। কিন্তু সে একা রমনী, কতই আর শত্রু রাজ্জ্যের আক্রমন প্রতিহত করিবে, কাজেই মাঝে মাঝে সে নিজেই আক্রান্ত হইয়া - রনে ভঙ্গ দিয়া - মা মা বলিয়া চিৎকার করিতে করিতে বাড়ী অভিমুখে যাত্রা করিতে লাগিল। ফলে আমাদের সংসারের কথা গোটা কোয়াটারে ছড়াইয়া পড়িলো
উহার ছোট্ট কিন্তু উর্বর মস্তিস্কে একদা ধরা পড়িল যে এমন করিয়া সে আমাকে রক্ষা করিতে পারিবেনা।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অধিকারিনীগন যে কোন সময় আমাকে ছিনাইয়া লইয়া যাইবে। কাজেই সে তাহার ফুলপ্রুফ নীলনকশা করিয়া ফেলিল - কিভাবে সে আমাকে রক্ষা করিবে। সে মত লোপা একদা ছুটির দিনে সকালে আমাকে উহাদের গৃহ পরিচারিকা দ্বারা ডাকিয়া পাঠাইলো। আমি স্বানন্দে নাচিতে নাচিতে আমাদের চারনভুমীতে গিয়া উপস্থিত হইলাম। লোপা সেক্ষনে আমার সহিত খুবই ভাল ব্যাবহার করিতে লাগিলো দেখিয়া কিঞ্চিৎ সন্দেহ হইয়াছিল, কিন্তু আমি চিরকাল ভালবাসার কাঙ্গাল, খাদ্য আর ভালবাসা আমার দুর্বলতা - দ্রুতই সেই সন্দেহ কাটাইয়া উঠিলাম।
আমরা সেইসময় হাটিতে হাটিতে গ্যারেজের দূর প্রান্তে উপনীত হইলাম, যেইখানে সহসা কেহ যেইতোনা, এবং পুর্বে সর্প দংশনে এক বালকের মৃত্যুর ইতিহাস থাকায় সবাই উক্ত এলাকাটি এড়াইয়া চলিত। সেস্থানে উপস্থিত হইয়া লোপা আমাকে একটি জরাজীর্ন ট্রাকের ড্রাইভিং সীটে আমাকে বসিতে বলিলো এবং তাহার জন্য কাজ করিয়া অর্থ সংগ্রহ করিয়া আনিতে বলিল। আমার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ আর ইতস্তত ভাব দেখিয়া লোপা কহিলো - "তুমি কি ভয় পাচ্ছ?" আমি পুরুষ মানুষ, জান দিব, তবুও মান দিবোনা। কাজেই অতি কষ্টে হাচড়াইয়া পাচড়াইয়া উক্ত ট্রাকের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িলাম। ট্রাকের সীটে বসিয়া স্টিয়ারং হাতে লইয়া আমার পৌরুষ দ্বিধায় পড়িয়া গেল, ভয় আমাকে আচ্ছন্য করিতে লাগিলো, কাজেই আমি ট্রাক হইতে নামিয়া আসিবার জন্য ব্যস্ত হইলাম, কিন্তু কোন ভাবেই আর বাহির হইতে পারিতেছিলামনা।
এক পর্যায়ে আমি কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করিলাম কিন্তু লোপার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখিলামনা। সে একটু দূরে বসিয়া মাটিতে আঁকিবুকি কাটিয়া আপন মনে খেলিতেছিল। আমি উহাকে বলিলাম বাসা হইতে কাহাকেও ডাকিয়া আনিতে যাতে আমাকে উদ্ধার করিতে পারে, কিন্তু সে যাহা বলিল তাহা শুনিয়া আমার কান্না থামিয়া গেল, রক্ত হীম হইয়া গেল। সে বলিল যে সে আমাকে ইচ্ছা করিয়া এইস্থানে আনয়ন করিয়াছে, এবং সর্প দংশনে আমার মৃত্যুর অপেক্ষা করতেছে। আমার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সে এস্থান ত্যাগ করিবেনা।
তাহার প্রিয়তম স্বামী অন্য কাহাকেও স্ত্রী রুপে গ্রহন করিবে তাহা যেন উহাকে দেখিতে না হয়, তাই সে এই বুদ্ধি রাত জাগিয়া না না ভাবে চিন্তা করিয়া বাহির করিয়াছে
সকাল ১১টা হইতে দুপুর ২টা গড়াইয়া গেলেও আমাকে সর্প দংশন করিলনা দেখিয়া সে একদা বিরক্ত ও ক্ষুধার্ত হইয়া আমাকে একা রাখিয়া বাড়িতে চলিয়া গেল। এদিকে আমাকে খুঁজিয়া না পাইয়া সবাই চিন্তিত হইয়া উহাকে জিজ্ঞ্যাসা করিলেও সে বলে যে সে জানেনা আমি কোথায়। এইদিকে ভয় ও ক্ষুধায় আমার প্রান ওষ্ঠাগত, বুঝিতে পারিতেছিলাম অন্ধকার নামিয়া আসিলে আমি সর্প দংশনে না হউক, ভয়ের কারনেই মৃত্যুবরণ করিবো। মনে মনে আমি যাবতিয় সুরা পড়িতে আরম্ভ করিয়াছিলাম ও সবার কাছে মনে মনে মাফ চাহিয়া লইয়াছিলাম
পরে অবস্য বিকেলের দিকে গ্যারেজ এলাকায় চিরুনী অভিযান চালাইয়া আমাকে উদ্ধার করা হয়। লোপাকেও এই ঘটনার পর আমাদের সাথে আর খেলতে দেওয়া হয় নাই
ক্রমশ ... আমার প্রেমিকারা - চম্পা পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।